ওজন কমাতে ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা একটা নির্দিষ্ট ডায়েট অনুসরণ করতে করতেই হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বেশি খেয়ে ফেলেন। বিশেষত নারীদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি। কেন এ রকম হয়? এ বিষয়ে ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও সহকারী অধ্যাপক ডা. সাইফ হোসেন খান-এর সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন রাফিয়া আলম।
নারীর দেহের বিশেষ কিছু হরমোনের মাত্রা কমবেশি হয় মাসিক চক্রে। একবার মাসিক শুরু হওয়ার পর থেকে পরবর্তী মাসিক শুরু হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত সময়কে বলা হয় একটি চক্র। এই চক্রের একেক ধাপে একেক হরমোনের মাত্রা বাড়ে।
হরমোনের প্রভাবে অনেক সময় এমন খাবার খাওয়ার ইচ্ছা জাগে, যাতে চিনির মাত্রা খুব বেশি। তাই মাসজুড়ে একটা ডায়েট অনুসরণ করা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে একজন নারীর জন্য।
‘ইমোশনাল ইটিং’ শব্দযুগলের সঙ্গে হয়তো অনেকেরই পরিচয় আছে। সাধারণভাবে বলা যায়, বিষয়টা হলো কষ্টদায়ক আবেগ সামলাতে খাবার খাওয়া। যেমন, মন খারাপ লাগলে কেউ কেউ পছন্দের খাবার খেয়ে নেন।
এর কারণ হলো, পছন্দের খাবার খেলে দেহে হ্যাপি হরমোনের প্রবাহ বাড়ে। তাতে মন খারাপের মতো কষ্টদায়ক অনুভূতি সামলানো সহজ হয়। বিষণ্নতায় ভুগলেও একজন ব্যক্তি বেশি খেয়ে ফেলতে পারেন। কারণ, পছন্দের খাবার খেলেই তাঁর ভালো লাগে।
অন্যদিকে মানসিক চাপে থাকা ব্যক্তির দেহে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেশি থাকে, যার প্রভাবে তিনি বেশি খেয়ে ফেলতে পারেন।
নারীর ক্ষেত্রে এসব বিষয় বেশি ঘটতে দেখা যায়। কারণ, হরমোনের প্রভাবে নারীর আবেগের ধরন বেশ বৈচিত্র্যময় হয়ে থাকে। আবার অধিকাংশ পরিবারে নানা ধরনের কাজের চাপ একজন নারীর ওপরই বেশি থাকে।
সেখানে রান্নাবান্না, ঘর গোছানো, সন্তান পালন, বয়োজ্যেষ্ঠদের দেখভাল করার মতো কাজগুলোর দায়িত্ব থাকে নারীর ওপরই। এমনকি গৃহকর্মী থাকলে সেই দিকটার তত্ত্বাবধান করতে হয় তাঁকে।
আবার এত কাজের জন্য অনেক পরিবারে নারীর কোনো স্বীকৃতিও থাকে না। সব মিলিয়ে মানসিক চাপ এবং বিষণ্নতার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে একজন নারীর।
এ ছাড়া অনেক নারীর পর্যাপ্ত ঘুমও হয় না। কম ঘুমালেও বেশি খাওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হতে পারে।
স্থূলতার জন্য একজন নারী অনেক সময়ই সামাজিকভাবে তুলনামূলক বেশি হেয়প্রতিপন্ন হন। এই চাপে পড়ে অনেকে নিজের মতো করে একটা ডায়েট অনুসরণ করতে শুরু করেন, যা তাঁর উপযোগী না-ও হতে পারে। কেউ আবার এক বা একাধিক বেলার খাবার একেবারে বাদও দিয়ে দেন।
এসব ভুলের কারণে যে কারও দেহে খাবারের বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হতে পারে। হুট করে বেশি খেয়ে ফেলতে পারেন তিনি। আবার বেশি খাওয়ার পর অনুশোচনায়ও ভুগতে পারেন। অনুশোচনার মতো কষ্টদায়ক অনুভূতি সামলাতে আবার তিনি বেশি খেয়ে ফেলতে পারেন। একটা চক্রের মতো চলতে পারে বিষয়টা।
একজন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ডায়েট অনুসরণ করা উচিত। ডায়েট অনুসরণ করতে গিয়ে কার ক্ষেত্রে ঠিক কোন কারণে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ হচ্ছে, তা জেনে নিয়ে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন তিনি।
তবে যিনিই একটি ডায়েট অনুসরণ করা শুরু করবেন, তাঁর জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানসিকভাবে নিজেকে স্থির রাখার চেষ্টা করা। কারও চাপে পড়ে নয়, মন থেকে নিজের সুস্থতার জন্য ডায়েট অনুসরণ করা শুরু করলে তা ধরে রাখা সহজ হয়।