বর্ষায় ত্বকের যেসব সমস্যা বেড়ে যায়

বর্ষাকালে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়
ছবি: সুমন ইউসুফ

বর্ষাকালে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। কারণ, এ মৌসুমে অতিরিক্ত ঘাম ও আর্দ্রতা, ভেজা জামাকাপড় পরে দীর্ঘক্ষণ থাকা, অপরিষ্কার ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, ঘন ঘন বৃষ্টির পানি লেগে যাওয়া, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। জেনে নেওয়া যাক এসব সম্পর্কে।

স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া: বর্ষায় আবহাওয়া আর্দ্র থাকে এবং স্ক্যাবিস সৃষ্টিকারী পরজীবী (সারকোপটিস স্কেবিয়া) এই পরিবেশে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে। স্ক্যাবিস একটি সংক্রামক রোগ, যা পরজীবীর কারণে হয়। তীব্র চুলকানি, বিশেষ করে রাতে এবং ফুসকুড়ি বা ছোট ছোট দানার মতো র‍্যাশ ওঠা স্ক্যাবিসের প্রধান লক্ষণ।

ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা ছত্রাকজনিত সংক্রমণ: রিং ওয়ার্ম বা দাদ, অ্যাথলেটস ফুট, ক্যান্ডিডিয়াসিস হয় এ সময়। 

ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন: ফোলিকিউলাইটিস, ইম্পেটিগো বা পাঁচড়া বেশি হয়। 

ডার্মাটাইটিস বা একজিমা: অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন, কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস বা প্রদাহ বাড়ে। 

চুলকানি: আর্দ্রতাজনিত বা সংক্রমণজনিত কারণে হয়। 

হিট র‍্যাশ বা ঘামাচি: ঘামগ্রন্থির নালিকাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে এ সমস্যা দেখা দেয়। 

সোরিয়াসিস বা ত্বকের অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা: বর্ষার আর্দ্রতা বা বিভিন্ন কারণে স্ট্রেসের ফলে তীব্রতা বাড়তে পারে। 

ফাঙ্গাল ইনফেকশন আক্রান্ত স্থান শুকনা ও পরিষ্কার রাখতে হবে

চিকিৎসা

১. স্ক্যাবিসের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং নিয়মকানুন যথাযথভাবে মেনে চলুন। স্ক্যাবিসের চিকিৎসার জন্য সাধারণত পারমেথ্রিন ক্রিম বা অন্যান্য অ্যান্টি প্যারাসাইটিক মলম ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা জিনিসপত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং অন্যদের মধ্যে যাতে রোগ না ছড়ায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। 

২. ফাঙ্গাল ইনফেকশন আক্রান্ত স্থান শুকনা ও পরিষ্কার রাখতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টি ফাঙ্গাল ক্রিম এবং মারাত্মক হলে ওষুধ (অ্যান্টি ফাঙ্গাল ট্যাবলেট) খেতে হবে। 

৩. ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণে ঘন ঘন হাত ধুতে হবে ও আক্রান্ত স্থান চুলকানো যাবে না, চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম বা ওষুধ (যেমন মিউপিরোসিন) ব্যবহার করা যেতে পারে। 

৪. যেসব জিনিস বা খাবারে অ্যালার্জি হয়, তা এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট এবং হালকা স্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। 

৫. ঘামাচি ও চুলকানি এড়াতে ঠান্ডা পরিবেশে থাকতে হবে, সঙ্গে পরিমিত পানি খান। ক্যালামিন লোশন বা হালকা ঠান্ডা পাউডার ব্যবহারে উপকার পাবেন।  

বর্ষাকালে ত্বকের যত্ন নেওয়া খুব জরুরি

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন

ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়লে, রক্ত বের হলে বা পুঁজ হলে, বেশি চুলকানি হলে, ঘরোয়া চিকিৎসা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় কাজ না হলে, জ্বর বা অন্যান্য উপসর্গ থাকলে। 

প্রতিরোধ

  • শরীর বা ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার ও শুকনা রাখা।

  • জামাকাপড় দ্রুত বদলে ফেলা।

  • ভেজা কাঁদায় স্যান্ডেল বা পানিরোধী জুতা ব্যবহার করা। 

  • ব্যক্তিগত জিনিস এবং কাপড় (তোয়ালে, জামাকাপড়, জুতা, চিরুনি ইত্যাদি) অন্যের সঙ্গে শেয়ার না করা।

  • বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেলে গোসল করে নেওয়া।

  • হালকা রং, ঢিলেঢালা, আরামদায়ক ও সুতি জামাকাপড় পরা।

  • বর্ষাকালে ত্বকের যত্ন নেওয়া খুব জরুরি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে এবং দ্রুত চিকিৎসা নিলে চর্মরোগ সহজে প্রতিরোধ ও নিরাময় করা সম্ভব।