মেডিটেরানিয়ান অর্থাৎ ভূমধ্যসাগরের আশপাশের এলাকার প্রচলিত খাদ্যাভ্যাসকে স্বাস্থ্যকর ধারা হিসেবে বিবেচনা করা হয় বিশ্বজুড়েই। এই মেডিটেরানিয়ান ডায়েট মেনে চলা সম্ভব আমাদের দেশেও। দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগ প্রতিরোধে এই খাদ্যাভ্যাস কার্যকর ভূমিকা রাখে। ওজন কমাতেও কি মেডিটেরানিয়ান ডায়েট কাজে দেবে? জেনে নেওয়া যাক, এটি আদতে কোন ধরনের ডায়েট। ওজন কমানোর বিষয়টিও খোলাসা হবে তাতেই।

মেডিটেরানিয়ান ডায়েটে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় উদ্ভিজ্জ উপাদানে। তবে এই ধারা গ্রহণ করতে হলে যে আপনাকে পুরোপুরি নিরামিষাশী হয়ে যেতে হবে, ব্যাপারটা কিন্তু তেমনও নয়; বরং এটি এমন এক ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস, যা আপনি নিজের সুবিধা অনুযায়ী সাজিয়ে নিতে পারবেন। ধরাবাঁধা কিছু খাবারের মধ্যে আপনাকে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে না; বরং এই ডায়েটে যে বৈচিত্র্যময় খাবার রয়েছে, তা থেকে নানা কিছুই বেছে নিতে পারবেন। মেডিটেরানিয়ান ডায়েট সম্পর্কে নানা তথ্য জানালেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।
ফলমূল, সবজি, নানা রকম ডাল, বীজ আর বাদাম খাওয়া যায় মেডিটেরানিয়ান ডায়েটে। গোটা শস্য অর্থাৎ যা পরিশোধিত বা রিফাইনড নয়, সেসবও এই ডায়েটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যেমন ওটস, যব, লাল চাল কিংবা লাল আটার তৈরি খাবার খাওয়া যায়। ডিম, দুধ ও মুরগির মাংসও খাওয়া যায় পরিমিত পরিমাণে। মাছ ও সামুদ্রিক খাবার খাওয়া হয় সপ্তাহে অন্তত দুই দিন। নাশতা হিসেবে বেছে নেওয়া যায় বাহারি সালাদ। সালাদ ও অন্যান্য খাবারকে সুস্বাদু করতে নানা ধরনের পাতা ও মসলার ব্যবহার হয় এ ধরনের ডায়েটে। ফলের রস ও চা-কফি খেতেও বারণ নেই। এক্সট্রা ভার্জিন জলপাই তেলের মতো স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করা হয় রান্নাবান্নায়।
লাল মাংস (যেমন গরু বা খাসির মাংস) এড়িয়ে চলা আবশ্যক। চর্বি, মাখন, মেয়নেজ, ডালডাও বর্জনীয়। কক্ষতাপমাত্রায় জমাট বেঁধে যায়, এমন তেলও এড়িয়ে চলা হয়। রিফাইনড বা পরিশোধিত শস্যদানা ও প্রক্রিয়াজাত খাবারও এড়িয়ে চলা হয় যতটা সম্ভব। বাড়তি লবণ খাওয়া বারণ। সালাদ বা ফল মাখানোর সময়ও লবণ ব্যবহারের চল নেই। চিনি মেশানো যেকোনো পানীয় এড়িয়ে চলা হয়।
এটি এমন এক খাদ্যাভ্যাস, যেখানে অস্বাস্থ্যকর বহু খাবার এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা হয়। এই ধারায় জীবন যাপন করলে উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন খাবার গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রাখা সহজ। লাল মাংস, চর্বিজাতীয় খাবার, চিনি, পরিশোধিত শস্য, প্রক্রিয়াজাত খাবার—এসবই তো ওজন বাড়ার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী। এসব এড়িয়ে যদি আপনি গ্রহণ করেন শাকসবজি, ফলমূল বা গোটা শস্যের তৈরি খাবার, তাহলে পাবেন পর্যাপ্ত আঁশ। এই আঁশ হজম হতে বেশ সময় লাগে। তাই আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেলে আপনার সহজে ক্ষুধা পাবে না। উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন নাশতার বদলে এখানে রয়েছে বাদাম কিংবা বীজের মতো খাবার, ফলমূল ও সালাদ। বুঝতেই পারছেন, সব মিলিয়ে এই ধারায় ওজন বাড়ার ঝুঁকি কম। অর্থাৎ আপনি একটা নির্দিষ্ট ওজন বজায় রাখতে পারবেন এই ধারায়।
শুধু তা–ই নয়, আপনি যদি ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা সীমিত রাখতে পারেন, তাহলে ওজনও কমাতে পারবেন এই খাদ্যাভ্যাসে। অর্থাৎ মেডিটেরানিয়ান ডায়েট মেনে চলে আপনি যদি শর্করাজাতীয় খাবারের পরিমাণ কম রাখেন, তাহলে আপনার ওজন কমবে। সত্যিকার অর্থে দ্রুত ওজন কমানোর জন্য যেসব স্বল্পমেয়াদি ডায়েট অনুসরণ করা হয়, সেসবের চেয়ে মেডিটেরানিয়ান ডায়েট অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের। দীর্ঘদিন ধরে, এমনকি গোটা জীবনই এই ধারায় চলা সম্ভব। তাই ওজন কমাতে এটি একটি আদর্শ খাদ্যাভ্যাস হতে পারে। এমনকি পুরোপুরি মেনে চলতে না পারলেও মেডিটেরানিয়ান ধারার অনেকটাই আপনি গ্রহণ করতে পারেন সুস্থ থাকতে। তবে মনে রাখবেন, এসবের সঙ্গে শরীরচর্চার অভ্যাসও জরুরি। তাতে ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।