
আমাদের সমাজে নারী হিসেবে অনেকেই পরিবার, কাজ, সন্তান, অফিস—সবকিছু সামলাতে এতটাই ব্যস্ত থাকেন যে নিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার সময়ই পান না। কিন্তু নিজের যত্ন নেওয়া কোনো বিলাসিতা নয়, এটি একটি দায়িত্ব। নারীদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে ও রোগ প্রতিরোধে দুটি নিয়মিত পরীক্ষা খুবই জরুরি। সেগুলো হলো ম্যামোগ্রাম ও প্যাপ টেস্ট। অনেক নারীই লজ্জা, ব্যস্ততা বা অযথা ভয়ের কারণে গুরুত্বপূর্ণ স্ক্রিনিং টেস্টগুলো এড়িয়ে যান। কিন্তু মনে রাখবেন, ম্যামোগ্রাম ও প্যাপ টেস্ট জীবন বাঁচাতে পারে।
যদি আপনার বয়স ৪০ বা তার বেশি হয়, তাহলে আজই ম্যামোগ্রাম করার পরিকল্পনা করুন। বয়স ৩৫ পার হওয়ার পর পরিবারে কারও স্তন ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে আরও আগেই শুরু করা উচিত।
বোন, মা, খালা বা ঘনিষ্ঠ কোনো আত্মীয়ের ব্রেস্ট ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে আরও সতর্ক হতে হবে। কেবল নিজে নয়, মা, খালা, বোন, ভাবি, বন্ধু—সবাইকে উৎসাহিত করুন এই পরীক্ষা করতে। সঠিক সেন্টার ও বিশেষজ্ঞ বেছে নিন।
ম্যামোগ্রাম করার আগে খোঁজখবর নিন যেখানে পরীক্ষাটি করবেন সেখানে থ্রি–ডি টমোসিনথেসিস ম্যামোগ্রাম সুবিধা আছে কি না। সেখানকার প্রযুক্তিবিদ ও রেডিওলজিস্ট অভিজ্ঞ কি না। তাঁরা নিয়মিত ব্রেস্ট আলট্রাসাউন্ড, কোর বায়োপসি—এসব করেন কি না। বায়োপসির ক্ষেত্রে মেটালিক ক্লিপ ব্যবহার করা হয় কি না ইত্যাদি।
সঠিক প্যাথলজি ল্যাব নির্বাচন করতে হবে। বায়োপসির পর নমুনা এমন পরীক্ষাগারে পাঠানো উচিত যেখানে ইআর, পিআর, হার টু, কেওয়াই ৬৭ ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি টেস্টগুলো নির্ভুলভাবে হয়। কারণ, নির্ভুল রিপোর্টই সঠিক চিকিৎসার প্রথম ধাপ। চিকিৎসার ক্ষেত্রে টিম অ্যাপ্রোচে গুরুত্ব দিন। যদি ম্যামোগ্রামে কোনো স্বাভাবিকতা ধরা পড়ে, তাহলে ভয় পাবেন না। আজকাল চিকিৎসা উন্নত, কার্যকর ও অত্যন্ত সফল।
বাংলাদেশে ম্যামোগ্রাম তুলনামূলক সস্তা। সরকারি হাসপাতালে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং বেসরকারি হাসপাতালে ২ থেকে ৩ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়। ম্যামোগ্রাম একটি বিশেষ ধরনের এক্স–রে, তাই তেমন প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই।
শরীরে ধাতব অলংকার যেমন চেইন বা হার খুলে রাখতে হবে। হালকা ও সহজে খোলা যায় এমন পোশাক পরুন। ডিওডোরেন্ট, লোশন, অ্যান্টিপারসপিরেন্ট ইত্যাদি না ব্যবহার করা ভালো। স্বাভাবিক খাবার খেতে পারবেন।
ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট, নিউব্রুনস্উইক, কানাডা