
‘ওন্ড’ ব্যান্ডের ভোকালিস্ট, বেজিস্ট ও শব্দ প্রকৌশলী এ কে রাতুল গতকাল ২৭ জুলাই জিমে আকস্মিক হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। দ্রুততম সময়ে হাসপাতালে নেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি তাঁকে। হৃৎপিণ্ডের সুস্থতার জন্যই তো শরীরচর্চার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। তবে কখনো কখনো শরীরচর্চা করতে গিয়েও কারও কারও হার্ট অ্যাটাকের খবর পাওয়া যায়। এমনকি আকস্মিক হার্ট অ্যাটাক কারও মৃত্যুর কারণও হতে পারে। আদতে কি শরীরচর্চায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে?
শরীরচর্চা করা হলে দেহে রক্তসঞ্চালন বাড়ে। এই রক্তপ্রবাহের জন্য হৃৎপিণ্ডকে কিছুটা বাড়তি কাজ করতে হয়। হৃৎপিণ্ডের গতিও বাড়ে। তাই নিয়মমাফিক শরীরচর্চা করা হলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে। তবে অল্প কিছু ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ড এই বাড়তি কাজটা করতে গিয়েই মুশকিলে পড়তে পারে। এমনটাই বলছিলেন ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. সাইফ হোসেন খান।
সাধারণত ভারী ব্যায়াম জিমেই করা হয়। যেকোনো ভারী ব্যায়ামের সময় বা দ্রুতগতিতে ব্যায়াম করার সময় দেহে রক্তপ্রবাহ বাড়াতে গিয়ে হৃৎপিণ্ডকে অনেকটা বেশি কাজ করতে হয়। বাড়তি কাজ করতে হৃৎপিণ্ডের নিজেরও তো রক্তের জোগান চাই। কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে হৃৎপিণ্ডের নিজস্ব রক্তপ্রবাহ বাধা পেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক। জিম ছাড়া অন্য যেকোনো জায়গায় এ ধরনের শরীরচর্চা করলেও এমনটা হতে পারে।
আগে থেকে যাঁদের হৃৎপিণ্ডে কোনো সমস্যা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঝুঁকি বেশি। তেমন কোনো লক্ষণ না থাকায় অনেকে জানতেও পারেন না, হৃৎপিণ্ডের কোনো সমস্যা আছে তাঁর। তা ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা প্রি-ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং ধূমপায়ীরাও আছেন ঝুঁকিতে। অতিরিক্ত ক্যাফেইন এবং এনার্জি ড্রিংক গ্রহণেও এমন ঝুঁকি বাড়তে পারে। পরিবারে হৃদ্রোগের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বাড়ে। কারও কারও ক্ষেত্রে পানিশূন্যতা বা লবণের ঘাটতিও হতে পারে কারণ।
অনেকেই কম বয়সে বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হন। তবে অনেক ক্ষেত্রে এসব রোগের তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না। তাই আপনি নিজেকে সম্পূর্ণ সুস্থ মনে করলেও ভারী ব্যায়াম বা দ্রুতগতির ব্যায়ামের চর্চা শুরুর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আর দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগে ভুগলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নেবেন, কী ধরনের ব্যায়াম আপনার জন্য নিরাপদ। এমনকি ব্যায়ামে অভ্যস্ত হলেও ব্যায়ামের সময় নিজের প্রতি একটু খেয়াল রাখুন। খারাপ লাগলে সঙ্গে সঙ্গেই থামিয়ে দিন নিজেকে।
ভারী ব্যায়াম বা দ্রুতগতির ব্যায়াম হুট করে শুরু করতে নেই। প্রথমে কিছুদিন হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস করুন। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের তীব্রতা বাড়াবেন। এ বিষয়ে একজন দক্ষ ট্রেনার আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।
ব্যায়ামের আগে ওয়ার্মআপ এবং ব্যায়ামের পর কুল ডাউন করুন।
অতিরিক্ত চা, কফি, চকলেট খাবেন না। এনার্জি ড্রিংক না খাওয়াই ভালো।
ব্যায়ামের আগে, ব্যায়ামের বিরতিতে এবং ব্যায়ামের পর নিয়মমাফিক খানিকটা পানি খাওয়া উচিত।
ব্যায়ামের সময় খুব ঘাম হলে স্যালাইন, ইলেকট্রোলাইট ড্রিংক বা সামান্য লবণপানি গ্রহণ করা উচিত।
জিমে ব্যায়াম করলে এমন জিম বেছে নেওয়া উচিত, যেখানে কোনো জরুরি পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ট্রেনার কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) দিতে পারেন। জীবনরক্ষাকারী এই কৌশল সবারই শিখে রাখা উচিত।
চিকিৎসক যদি এমন নির্দেশনা দিয়ে থাকেন যে আপনার হৃৎপিণ্ডের গতি খুব বেশি বাড়তে দেওয়া উচিত নয়, সে ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের গতি ‘মনিটর’ করার জন্য একটি রিস্টব্যান্ড ব্যবহার করতে পারেন।
যেকোনো ব্যায়ামের সময় অতিরিক্ত হাঁপালে, হৃৎপিণ্ডের গতি অতিরিক্ত বেড়ে গেছে বা অনিয়মিত হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হলে, বুকে চাপ অনুভব করলে, মাথা ঘোরালে কিংবা অন্য কোনো কারণে খারাপ লাগলে ব্যায়াম থামিয়ে দিন। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে দেরি করবেন না। তাতে হয়ে যেতে পারে অপূরণীয় ক্ষতি।