
মেষ ২১ মার্চ-২০ এপ্রিল। ভর # ৬
সহিষ্ণুতা সহনশীলতা সহ্যক্ষমতা মানুষের একটা প্রবল শক্তিশালী অস্ত্র। চরম সহনশীলতার দৃষ্টান্ত আপনি দেখতে পাবেন, হয়তোবা আপনারই জীবনের আশেপাশে। গল্প-উপন্যাস-কবিতা-চলচ্চিত্রেও পাবেন এই পরম ও চরম সহিষ্ণুতার নানা কাহিনি। এ মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস ও সিনেমায় পাওয়া কিছু বিষয়: জ্যাক লন্ডনের ‘হোয়াইট ফ্যাং’ একটি চরম দৈহিক ও মানসিক ক্ষমতাসম্পন্ন বীরপুরুষের গল্প। বাস্তব কাহিনি নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্র সানফ্লাওয়ার, লরেন্স অব অ্যারাবিয়া, বেকিট ইত্যাদি। প্রসঙ্গত বলা যায় প্রকৃত ইতিহাসভিত্তিক হলিউডের ছবি গান্ধীর কথাও। আমরা কি কেবল দেখে এবং ঠেকেই শিখি? তা তো না। আমরা পড়েও তো শিখি। আপনি যদি বলেন; একটা বয়সের পর মানুষ নতুন কিছু শিখতে পারে না আমি তাহলে আপনাকে থামিয়ে দিতে বাধ্য হব। শেখার যে কোনো বয়স নেই কথাটা একদম সত্য। আমার মেঝ ভাইয়ের রাজনৈতিক আদর্শের পরিবর্তন এসেছিল যখন তার বয়স ৬০-এর কোঠায়। আমার বাবারও ওই রকম হয়েছিল তাঁর রীতিমতো বৃদ্ধ বয়সে। আমার বাবা শুনেছি পড়তেন ভারতের দৈনিক স্টেটস পত্রিকা। দেশভাগের পর তিনি পড়তেন ঢাকা থেকে প্রকাশিত দি ডেইলি মর্নিং নিউজ। এরই মধ্যে তাঁর মন চলে গেল অবজারভার পত্রিকার বিদ্রোহী দিকে। তাহলে বুঝতে হবে, গোটা বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডটাই নিয়ত পরিবর্তনশীল। সাহিত্যিক সুধীর রঞ্জন মুখোপাধ্যায় প্রাচীন শাস্ত্র থেকে আহরণ করতে বলেছেন: অস্থিরতাই জীবনের একমাত্র স্থির সত্য। ইংরেজদের রাজত্বকালে এক রাজনৈতিক নেতা বলেছিলেন: টু-ডেইজ এনিমি ইজ টুমরোজ ফ্রেন্ড, আজকের শত্রু আগামীকালের বন্ধু বা মিত্রও হয়ে উঠতে পারে। আজকাল বলা হয় ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। একেবারে খাঁটি কথা।...যাই হোক চেনা আধচেনা অচেনা চিরচেনা মেষ, আমার দিকে অমন বিরক্ত চোখে তাকাবেন না। ভাবলেন না, ব্যাটা জইতিশি আবার শুরু করেছে তার জ্ঞান বিতরণ কর্মসূচি।...চলতি সপ্তাহটি কাটবে আপনার ব্যস্ততা চঞ্চলতা অস্থিরতা আনন্দিত নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে জয় হোক!
বৃষ ২১ এপ্রিল-২১ মে। ভর # ১
আমারে তুমি অশেষ করেছ/ এমনই লীলা তব... (রবিঠাকুর)। জীবজগৎ অসীম নয়। মানুষও না। অথচ সীমিত হয়েও মানুষ হয়েছে অসীম, অশেষ। এরপর নজরুলের: আমি যার নূপুরের ছন্দ/ বেণুকার সুর/ কে সেই সুন্দর কে?... কোনো এক অদৃশ্য অজানা শক্তির প্রতি মানবজাতির অদমনীয় আগ্রহ, কৌতূহল, বিশ্বাস। সে যা-ই হোক বৃষ, চলতি সপ্তাহে আপনার সৃজনশীল মন খুব সক্রিয় থাকবে। ফলে বিশেষত আপনার শিল্পচর্চা ও ব্যবসার জন্য এই সক্রিয়তা হয়ে উঠবে ফলন্তি, ফুলন্তি ফুলে ফুলে ছাওয়া। তবে তো আর দুশ্চিন্তার কিছু রইল না। রইল শুধু চিন্তা পরিকল্পনা কর্মতৎপরতার প্রয়োজনীয়তা। গ্রিক রাশি শাস্ত্রমতে বৃষ নিসর্গ অথচ প্রকৃতির পূজারি। সুযোগ পেলেই এঁরা ছুটে যান প্রকৃতির সবুজ সিংহ দুয়ারে। এ সপ্তাহে বৃষ, আপনার যথেষ্ট টাকা উপার্জন ও ভ্রমণ দেখতে পাই।
মিথুন ২২ মে-২১ জুন। ভর # ৬
কী, মিথুন রাশির স্মার্ট গার্ল অ্যান্ড বয়, অসময়ে মোবাইলটা কাকের মতো আঁকড়ে ধরে সেজেগুজে কোথায় যাওয়া হচ্ছে? ইয়েস আয়াম আ জইতিশি অ্যান্ড আমি আমার থার্ড আই বা তৃতীয় নয়ন দিয়ে সব দেখতে পাই। কাজেই, Cowsir অর্থাৎ ‘গরু মহাশয়’ থেকে সাবধান! না রে, ঠাট্টা করলাম একটু। আমার আবার অলৌকিক ক্ষমতা থাকবে কোথা থেকে। দেয়ারফোর, আপনি আপনার যা মন চায় করুন, আমার তাতে আপত্তি থাকার প্রশ্নই ওঠে না। তবে বোন অ্যান্ড ভাই, মামলা যদি শেষ পর্যন্ত কাচ্চি বিরিয়ানি বুরহানি উইথ স্যালাড-ট্যালাদ পর্যন্ত গড়ায় অর্থাৎ কেস যদি বিবাহের বন্ধন পর্যন্ত পৌঁছায়—তাহলে আমি যেন দাওয়াত পাই। বিকজ আই ওয়ান্ট টু ইট ইয়োর ম্যারেজ-আমি আপনার বিয়ে খেতে চাই। যেতে না পারলে পার্সেল পাঠাতে হবে। খাওয়াইয়া আমরা দুজন, আমার কিশোর সেবক আল-আমিন ও আমি। তাহলে এ পর্যন্তই কথা থাকল, অক্কে?-ও আর একটা কথা: হানিম্যুন বা মধুচন্দ্রিমা যেখানেই করুন না কেন ওখান থেকে আমার জন্য কিছু একটা গিফট এবং সুমিজ চকলেট নিয়ে আসা চাই। উপরোক্ত শর্ত অনুযায়ী জানাই, চলতি সপ্তাহের বেশির ভাগটাই আপনার কাটবে মিঠাপানির নদী-খাল-বিল-হাওরে ভাসতে ভাসতে। এ সময়ে হয়তো আপনার এবং আপনার একান্ত সঙ্গীর ভালো লাগবে আমাদের এক নিরুপম শিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া ‘সাগরের তীর থেকে...।
কর্কট ২২ জুন-২২ জুলাই। ভর # ২
আপনার জন্য এ সপ্তাহে কিছু দাওয়াই বাতানোর দরকার হয়েছে: সোনিক থেরাপি বা শ্রবনিক (শব্দ) চিকিৎসা। জীবাণুবাহিত রোগ বাদ দিয়ে অন্য বহু রোগ সারানোর জন্য ভারতীয় একটি পদ্ধতি। শুধু যন্ত্রসংগীত দিয়ে রোগ নিরাময়। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই চিকিৎসাটি বিশেষভাবে উপকারী মানবিক কষ্টের ক্ষেত্রে, যেমন ধরুন বিষণ্ণতা ও অন্যান্য সমস্যা। সুখবর এই যে সংগীত বর্তমান সময়ে আক্ষরিক অর্থেই আমাদের হাতের মুঠোয় এসে ধরা দিয়েছে। এ সপ্তাহে প্রিয় কর্কট, আপনাকে কিছু ‘সংগীতোষধের তালিকা নিবেদন করছি, কেননা রাশিগত বিষাদ বিষণ্ণতা এসে আপনার বাসন্তী মনের ওপর গাঢ় ছায়াপাত করবে—এমন একটা আশঙ্কাই আমি পাই।’
গান শুনতে আমরা কে না ভালোবাসি। তাহলে শুনে দেখুন তো এই গানগুলো: ১. ভুলিতে যে পারি না/ এভাবে আসা যাওয়া/ মনে হয় কাছে রাখি/ যদি না যায় পাওয়া (গীতা দত্ত)। ২. আকাশে আজ রঙের খেলা/ মনে মেঘের মেলা (গীতা দত্ত)। ৩. তোমার প্রথম গান। প্রথম তারার মতো/ ছুঁয়েছিল মনের আকাশ (সতীনাথ মুখোপাধ্যায়)। ৪. একী সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে ওগো বন্ধু (সাবিনা ইয়াসমিন)। ৫. তুমি কখন এসে দাঁড়িয়ে আছ/ আমার গানের প্রান্তে (মাহমুদ উন নবী)। ৬. চার দেয়ালের মধ্যে নানান দৃশ্যকে/ সাজিয়ে নিয়ে দেখি বাহির বিশ্বযে (মান্না দে)। ৭. আমি আজ আকাশের মতোন একেলা। এই তো দিলাম আপনাকে মনটা সতেজ করে তোলার মোক্ষম দাওয়াই।
সিংহ ২৩ জুলাই-২৩ আগস্ট। ভর # ১
চীন, ভারতসহ পৃথিবীর নানা দেশে-মহাদেশে বিভিন্ন পদ্ধতির রাশিশাস্ত্র প্রচলিত আছে। হাজার হাজার বছর ধরে আমি অনুসরণ করি প্রাচীন গ্রিক পদ্ধতি, যা ইউরোপীয় রাশিশাস্ত্র হিসেবেও চালু রয়েছে। সে যা-ই হোক, সিংহ শ্রেষ্ঠতম রাশির মর্যাদা ভোগ করছে ভারতীয় এবং গ্রিক শাস্ত্রে। ব্যক্তিগতভাবে আমি তা মনে করি না। ভালো-মন্দ সব রাশিতেই কম-বেশি পাওয়া যায়। এটা শুনে মাইন্ড ব্যাড করে অর্থাৎ মন খারাপ করা চলবে না। পশু হিসেবে যদি ধরতে হয় তাহলে আমি পুরুষ প্রজাতির সিংহকে দেখতে পাই (অ্যানিমেল প্ল্যানেট ইত্যাদি টিভি চ্যানেলে) নিষ্ঠুর, কাপুরুষ ও স্বার্থপর হিসেবে। সে তার বউয়ের ওপর খায়, আগের পক্ষের ছানাগুলোকে খেয়ে ফেলে। বউ শিকার ধরার জন্য প্রচণ্ড পরিশ্রম করে। সিংহ এসে সবাইক তাড়িয়ে দিয়ে সিংহভাগটাই গিলতে থাকে। তার বিশাল দেহ এবং প্রচণ্ড শক্তি দেখে অন্য সব পশু পিছু হটে। তবে হায়েনার মতো কিছু ছোট প্রাণী আছে, যারা শকুনের সিংহের মুখের খাবার কেড়ে নেওয়ার সাহস ও ধৃষ্টতা দেখায়। চলতি সাত দিন সিংহের কাটবে খানিকটা ধীর গতিতে এবং সেটা শেষ পর্যন্ত। কিছু অনুকূল ফলাফল এনে দেবে তাকে। সিংহ জাতককে এ সপ্তাহে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা বজায় রেখে চলতে হচ্ছে। শুনতে হবে রবীন্দ্রনাথের এই গানটি: যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে/ তবে একলা চলরে? কিংবা ইকবাল বানুর সেই নিরুপম উদুর্ গজলটি: পারনায় রাত মায়ি হ্যায়/ সিতারোঁ আব তো সো যাও...আভি মুছু বে-কারায় হ্যায়।...এই গজলটাই জগজিৎ সিং গেয়েছেন অন্য সুরে। ডিয়ার সিংহি অ্যান্ড সিংহ, বিপদে ধৈর্য ধরুন। ভয় পাবেন না।
কন্যা ২৪ আগস্ট-২৩ সেপ্টেম্বর। ভর # ২
ঘড়িতে এখন এগারোটা বেজে কুড়ি। জানালার কাছে রাত জাগে একা/ উর্মিলা চৌধুরী/ উপন্যাসের পাতায় যখন এই কথাগুলো পড়ি/ তখন আমার বয়স হয়তো/ উনিশ কিংবা কুড়ি। (আইয়ুব বাচ্চু) আমার কিশোরকালের প্রিয় লেখক বারীণ দাশের লেখা উপন্যাসে তাঁরই রচিত কবিতার কয়েকটি লাইনকে ভিত্তি করে লিখেছিলেন এই গানটি-সেই ১৯ শ কত সালে মনে নেই। আইয়ুব বাচ্চু তাঁর গিটারে গানটির সুর করেছিলেন, পরে রেকর্ড করেছিলেন। একই সঙ্গে সুর করেছিলেন আমার লেখা অন্য একটি গান: এই রুপালি গিটার ফেলে/ একদিন যাব চলে/ দূরে, বহু দূরে।
যা-ই হোক প্রিয় সুপ্রিয় অপ্রিয় জনপ্রিয় কন্যা, আপনার চলতি সপ্তাহ কাটবে এক নিরুপম প্রশান্তির মধ্য দিয়ে। তার কারণ, বর্তমান সময়ে ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্নের উত্তর আপনি পেয়ে যাবেন।
নারী ও পুরুষ কন্যা দুজনেই মনে মনে জপ করুন: ‘মন আমার শান্ত হও, শান্ত হও, শান্ত হও। কী এমন ঘটেছে যে নিজেকে আমি অমন বিপর্যস্ত হতে দেব?’
এর চাইতেও বড় কত কিছুই তো আমি পার হয়ে এসেছি। মানুষ যখন মনে মনে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, তখন তার অস্থিরতা চঞ্চলতা সব দূর হয়ে যায়। স্থির মনে তখন সে থেমে থাকে। চলতে থাকে নতুন আশা আলো বিশ্বাস এবং আনন্দের দিকে। কথাগুলো বললাম একান্ত আপনাকেই লক্ষ করে। শুভ হোক! জয় হোক!
তুলা ২৪ সেপ্টেম্বর-২৩ অক্টোবর। ভর # ২
তুলার সঙ্গে তুলনীয় রাশি কমই আছে। এই রাশিভুক্ত নারী-পুরুষের থাকে অসামান্য মেধা বুদ্ধি প্রতিভা এবং একই সঙ্গে অদম্য সাহস ও নেতৃত্বের গুণ। গ্রিক ও ভারতীয় রাশিশাস্ত্রে তুলাকে সমধিক মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে।...আমার কাছে একবার শহরে নবাগত এক তরুণ এসেছিলেন। পরনে জিনস-টিশার্ট চওড়া লাল বেল্ট পায়ে বৃহৎ সাদা কেডস। অর্থাৎ শহরের মানুষকে ইমপ্রেস করার উপযুক্ত সাজ-পোশাক। উঁচু গলায় তিনি আমাকে বললেন: ‘ছার, আমি কটন রাশির জাতক।’ আমি মুগ্ধ চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলাম। এই ঘটনা পড়ে অনেক তুলা পাঠক আমাকে তুলাধোনা করতে উদ্যত হন। মোবাইল বার্তা পাঠান। ভদ্র ভাষায় আমার ওপর প্রতিশোধ নেন। আমি বোঝাতে পারছি না যে ওসব নিছক রসিকতার ছলে সত্য ঘটনার বর্ণনা। দেখুন, যে নিজেকে নিয়ে রসিকতা করতে জানে না—সে অন্যকে নিয়েও রসিকতার অধিকার রাখে না। আমি ছেলেবেলা থেকেই নিজেকে নিয়ে রসিকতা করে আসছি। যেমন ধরুন, অনেক সময় আমি আমার নামের প্রথম অংশটি-অর্থাৎ ‘জ্ঞাতসার’ ইংরেজি বানান লিখি Cowsir, বাংলায় লিখলে গরু মহাশয়, গরু মহাদয় ইত্যাদি। নিজের কার্টুন আঁকতেও খুব ভালো লাগে আমার। এনজয় করি আর কি। আগে তো রাশিফলের সঙ্গেই আমার আঁকা কার্টুন বের হতো। তাতে নিজের চেহারার ‘জইতিশি’সহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মজাদার কার্টুন আঁকার একটা চেষ্টা চালাতাম। জানি না কারও মুখে হাসি ফোটাতে পারতাম কি না।...তুলার চলতি সপ্তাহ কাটবে দুর্দান্ত অর্থ ভালোবাসা এবং জয়ের মধ্য দিয়ে। শুভ!
বৃশ্চিক ২৪ অক্টোবর-২২ নভেম্বর। ভর # ২
সপ্তাহটা আপনার কাটেঙ্গা জারাসা মউজ ওর থোরসা থোরসা দুখ মে–অর্থাৎ সপ্তাহটা আপনার কাটবে একটু মজা এবং একটু দুঃখের মধ্য দিয়ে। ফিফটি: ফিফটি আরকি। তাজা মালপানি (টাকাপয়সা) কামাই ঘটবে। সামাজিকতা বাড়বে। যার মানে হইচই আনন্দ। তবে, যার মা নেই তার মনের উত্তর পশ্চিম কোণে মাঝে মাঝেই বাজবে একটি স্মৃতি-জাগানো গান: মধুর আমার মায়ের হাসি চাঁদের মুখে ঝরে/ মা-কে মনে পড়ে, আমার মা-কে মনে পড়ে ...যে শিশু বয়সে মা হারিয়েছে তার অবশ্য এ ধরনের গান মনে পড়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। যেমন আমি। এক বছর পূর্ণ হওয়ার চার দিন আগে আমার মা মারা যান। ছোটবেলায় আমার বড় বোন রেগে গেলে বলতেন: তুই মা-কে খেয়েছিস! আমি কথাটার অর্থ বুঝতে পারতাম না। বলতাম: বেশ করেছি। তোমাকেও খাব! তোমাদের সবাইকে খাব! প্রিয় পাঠক, আমার পাঁচ বছরের বড় বৃশ্চিক এই বোন হয়তো আমার লেখা এই রাশিফল পড়ছেন। তিনি ঢাকা এবং অস্ট্রেলিয়া দু জায়গায়ই থাকেন। প্রিয় কুম্ভ ভগ্নিপতির বয়স এখন ৯০ হলেও তাঁর ফিটনেস সার্টিফিকেটখানা প্রায় সব সময়ই আপডেট অবস্থায় থাকে। বুবুর নাম সাজিয়া, দুলাভাই যিনি একদিকে দিয়ে সম্পর্কে আমার কাজিনও হন—নাম বদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী। জ্ঞানবৃদ্ধ ভদ্রলোক, স্বাস্থ্য, চেহারা, ব্যক্তিত্ব, জ্ঞান এবং গুণে। ইনিও জন্মে মা-হারা মানুষ। কল্যাণ হোক আপনার, বৃশ্চিক!
ধনু ২৩ নভেম্বর-২১ ডিসেম্বর। ভর # ৯
আমার ভাবনা মতে, সব মানুষেরই একবার নিজ পরিবারের বাইরে কোথাও থাকা এবং জীবনে অন্তত একবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা থাকাটা একান্ত জরুরি। এই অভিজ্ঞতাগুণ তাকে নতুন জীবন দেবে, ভিন্ন জীবন দর্শণে ঋদ্ধ করে তুলবে। নিজ জীবনে এসবের মধ্য দিয়েই এ উপলব্ধি আমার হয়েছে। আপনার সাপ্তাহিক রাশিফল লেখার আগেই ওপরের কথাটি বলে নিলাম। আমার জন্ম ১৬ ডিসেম্বর। আমার ভাতিজা নাকি বলে: কী মজা, সারা বাংলাদেশ তোমার জন্মদিন পালন করে। ব্যাপারটা যে তা নয়, তদানীন্তত শিশুকে বোঝানো আমার পক্ষে কঠিন হয়। আরে বাবা, আমার জন্মের ১৬ ডিসেম্বর তো অনেক আগেকার। কাকতালীয়ভাবে ১৬ ডিসেম্বরী অন্য অনেকের সঙ্গে বাংলাদেশের জন্মতারিখ মিলে গেছে। ধনু হিসেবে হোক, আর অন্য যেভাবেই হোক, আমার দৈহিক ও মানসিক সহ্যক্ষমতা প্রবল। প্রতিবার মরে গিয়ে মৃত্যুর ওপার থেকে বারবার আমি ফিরে আসি। নোবেল বিজয়ী আর্নেস্ট হেমিংওয়ে কিশোর বয়স থেকে আমার সম্ভবত সবচেয়ে প্রিয় লেখক। দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি তাঁর শ্রেষ্ঠতম উপন্যাস। ওটার চলচ্চিত্রও আছে। এই উপন্যাসের যে লাইনটা সারা জীবন ধরে আমাকে পথ দেখায়-সেটা হচ্ছে: ম্যান ক্যান বি ডেসট্রয়েড বাট নট ডিটিটেড। মানুষকে ধ্বংস করা যায়, কিন্তু পরাজিত করা যায় না। প্রিয় এবং অজনপ্রিয় ধনু, এই তো আপনি উঠে দাঁড়িয়েছেন ধ্বংসস্তূপ থেকে। ওই তো দেখা যাচ্ছে আপনার চির উন্নত শির।
মকর ২২ ডিসেম্বর-২০ জানুয়ারি। ভর # ৩
আমার মোবাইল লিস্টে এবং বাস্তব জীবনে দুজন উল্লেখযোগ্য মকর আছেন, মানে আছে। একজন নারী, অন্যজন পুরুষ। নারী অনিতা তাহনিয়াত করিম। পুরুষটি বিশাল গোঁফ শোভিত ইয়া লম্বা-চওড়া সাংঘাতিক সাংবাদিক জুলফিকার আলী (মানিক)। অনিতাকে আমি অনেক সময় অনিতা ক্রিম বলে উল্লেখ করি (অভিনয়শিল্পী অপি করিমকেও সম্বোধন করতাম অপি ক্রিম বলে)। অনিতা করিম হচ্ছে অসাধারণ এক নারী। অসাধারণ এই মকর নারী দেখতে যেমন ভালো-মনটাও তার তেমনই ভালো। উষ্ণ হৃদয়। সর্বদা হাসিখুশি, আবার অন্যের কষ্টে যখন-তখন যেখানে সেখানে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলার মতো অসামান্য ক্ষমতাও সে রাখে। প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী মাহমুদ–উন নবীর সুযোগ্য মেয়ে ফাহমিদা নবী (নুমা) ও সামিনা চৌধুরী (সুমা) অনিতার দুই কাজিন। ওদের ছোটবেলায় পারিবারিক আড্ডায় অনিতার এক খালা সুরাইয়া চৌধুরী (ছবি) বলতেন: কী রে, অনিতা, তুই এখনো কাদিসনি! অমনি চোখ ছলছল হয়ে উঠত অনিতার। থেমে যেত মকর অনিতার লাগাতার বকরবকর।
ওদিকে মকর সাংবাদিক মানিক, ক্যায়া অওর বনেগা, আশ্চর্য ব্যক্তিত্ব ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের আশ্চর্য এক তরুণ। যেমন গভীর, গম্ভীর-তেমনই সুদর্শন, কিনা, সিংহ-হৃদয় দৃষ্টান্তমূলক উজ্জ্বল এক মকরপুরুষ।
কুম্ভ ২১ জানুয়ারি-১৮ ফেব্রুয়ারি। ভর # ৯
মাঝে মাঝে আপনাকে আমি বলি যে আপনার ঘুম উপকথার সেই কুম্ভকর্ণের ঘুমের মতোই গাঢ়, গভীর। সহজে আপনার ঘুম ভাঙে না। দিন মাস বছর যুগ যুগ ধরে নিদ্রাদেবীর আরাধনা করেন আপনি-পাশ্চাত্য সাহিত্যে বর্ণিত সেই গালিভারের মতো। গাঢ় ঘুম ভাঙার পর নিজে যে আবিষ্কার করে খুদে খুদে মানুষের দ্বারা পরিবৃত, বন্দী এরা হচ্ছে রূপকথার সেই পিঁপড়ের মতো লিলিপুট। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এই দুই নিদ্রাপ্রেমিক পড়ে পড়ে ঘুমাক, আমি বলি কুম্ভ নারী-পুরুষের চলতি সপ্তাহের ব্যাপার-স্যাপারে। সপ্তাহের প্রথম তিন দিন আপনার তেমন ভালো না গেলেও বাকি দিনগুলো দেখতে পাই আকাশের মতোই উজ্জ্বল। প্রিয় বোন ও শুকতারার ভাই, বয়স আপনার যা-ই হোক-একটুখানি গল্প কবিতা উপন্যাস পড়ুন। গান শুনুন। সপ্তাহটা সব মিলে শুভ হয়ে উঠবে। যেসব গান আপনার মনের মতো-সেগুলোই শুনুন। বই যেটা আপনার পছন্দ হয় সেটাই পড়ুন-নজরুল, রবীন্দ্র, বঙ্গিম, শরৎচন্দ্র, সুকান্ত, জীবনানন্দ, যেটাই হয়। সংগীত হচ্ছে একটা মহৌষধ। শুধু মন নয়, কানের খাদ্যও বটে। সুবীর সেন আমার এক প্রিয় শিল্পী, আমাদের দেশের সুবীর নন্দীও তাই। সুবীর সেনের যে গানটি খুব অল্প বয়স থেকে আমার মনে গভীর দাগ কাটে সেটি হচ্ছে: হয়তো তোমার অনেক ক্ষতি করেছি/ কাছে এসে/ ভালোবেসে। কথা ও সুর লাকী আখান্দ ও আমার প্রিয় সংগীতজ্ঞ অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায়। আমাদের সুবীর নন্দীও আমার যথেষ্ট প্রিয়। ইনি সম্ভবত আমার লেখা একটাই গান করেছিলেন, লাকী আখান্দের সুরে: যেখানেই হাত রাখি/ তোমার স্মৃতির ধুলা রাশি রাশি...আমার বাবার জীবন কল্পনা করেই বোধ হয় লিখেছিলাম। গানটা এখন আর নেই। সুবীরের হয়তো আজ আর মনে নেই ওটা। শুভ!
মীন ১৯ ফেব্রুয়ারি-২০ মার্চ। ভর # ৩
রাশিচক্রের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হচ্ছে মীন। ভারি রহস্যময় এর গতি-প্রকৃতি। খুব আকর্ষণ। এই রাশির অন্তর্গত নারী ও পুরুষ জীবনের প্রায় সর্বক্ষেত্রেই সাফল্য ছিনতাই করতে দক্ষ। মীন পুরুষের মধ্যে আছে এক দুর্দমনীয় নেতাসুলভ শক্তি। পক্ষান্তরে, মীন নারীর রয়েছে নীরব ভালোবাসা আদায়ের বিস্ময়কর ক্ষমতা। এরা ভালোবাসা নিতে শুধু নয়, দিতেও পারঙ্গম। মনে পড়ে গেল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি গান: এসেছিলে তবু আসো নাই...এই গানটির অর্থ এবং রচনার পটভূমি নিশ্চয়ই আপনি জানেন। তবু আমি ছোট করে আপনাকে তা জানাতে চাই: শান্তিনিকেতনে বসে লেখা গানটির পটভূমি এ রকম— রবীন্দ্রনাথের সম্পর্কিত এক নাতবৌ ছিলেন শান্তিনিকেতনের ছাত্রী। একে কবি বিশেষভাবে স্নেহ করতেন। একদিন কী এক কথায়-গুরুদেবের ওপর তরুণী নাতবৌটির বেশ গাঢ় একটা অভিমান হয়। কয়েক দিন দুজনের আর মুখ দেখাদেখি নেই। মানে নাতবৌটি কবিকে এড়িয়ে চলছেন। এর মধ্যে একদিন কবি দোতলার বারান্দায় বসে কাজ করছেন, এমন সময় চেয়ে দেখলেন তার আদরের নাতবৌটি সামনের ঘাসে ঢাকা লন একদিক থেকে অতিক্রম করে অন্য দিকে যাচ্ছেন ধীর পায়ে, কিন্তু কোনোদিকে না তাকিয়ে। রবীন্দ্রনাথ তৎক্ষণাৎ লিখলেন: এসেছিলে তবু আসো নাই/ জানায়ে গেলে...। অন্যতম প্রিয় মিন কিশোর কিশোরীরা তরুন-তরুণী, আজ থেকে আগামী শুক্রবার কাটবে আপনার রোমাঞ্চিত লুকোচুরি খেলার মধ্য দিয়ে।
আপনি নিজেই আপনার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন শতকরা ৯০ থেকে ৯৬ ভাগ। বাকিটা আমরা ফেট বা নিয়তি বলতে পারি। ভাগ্য অনেক সময় অনির্দিষ্ট কারণে আপনা থেকেও গতিপথ বদলাতে পারে। এখানে রাশিচক্রে আমি ‘নিউমারলজি’ বা ‘সংখ্যা-জ্যোতিষ’ পদ্ধতি প্রয়োগ করেছি— কাওসার আহমেদ চৌধুরী