অনলাইনে জিডি করবেন যেভাবে

অনলাইন জিডি অ্যাপ ও ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে খুব সহজে আপনার অভিযোগটি পুলিশকে জানাতে পারবেন
ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে ফেলেছেন ঢাকার মিরপুরের জাহানারা ইয়াসমিন। জিডি করার অনেক ঝামেলা, এই ভয়ে থানায় যেতে চাচ্ছিলেন না; কিন্তু সিম কেনা থেকে শুরু করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, সবকিছুতেই এখন লাগে জাতীয় পরিচয়পত্র। তাঁর ভবনেই থাকেন সৈয়দ মুশফিক আহমেদ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী অনলাইন জিডি করার কথা জানতেন। মুশফিক জানান, অনলাইন জিডি করার মাধ্যমে তাঁর সমস্যার সমাধান করেছি। জাহানারা ইয়াসমিনের মতো যে কেউই এখন ঘরে বসে অনলাইনে মুঠোফোন বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে থানায় জিডি করতে পারবেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের কর্মকর্তা উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইন জিডির সুবিধা হচ্ছে আপনাকে থানায় যেতে হচ্ছে না। যেকোনো সময় অনলাইন জিডি অ্যাপ ও ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে খুব সহজে আপনার অভিযোগটি পুলিশকে জানাতে পারবেন। নিজের অভিযোগের সর্বশেষ অবস্থাও জানতে পারবেন।
যেভাবে অনলাইনে জিডি করবেন
অ্যান্ড্রয়েড প্লেস্টোর থেকে ‘অনলাইন জিডি’ (Online GD) ডাউনলোড করে নিন। অন্য সব অ্যাপের মতো অ্যাপ্লিকেশনটি মুঠোফোনে ডাউনলোড করে ইনস্টল করে নিন।

অনলাইনে জিডি করলে আপনাকে থানায় যেতে হবে না

ডাউনলোডের পরে নিবন্ধন ও লগইন অপশন দেখতে পাবেন। প্রথমবার হলে নতুন নিবন্ধনে ক্লিক করুন। আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই পেজটি চালু হবে। পরিচয়পত্র যাচাইয়ের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ও জন্মতারিখ দিতে হবে। পরিচয়পত্র যাচাইয়ের পরে আপনার তথ্য দেখতে পাবেন। আপনার এনআইডির ছবির সঙ্গে নিবন্ধনকারী হিসেবে আপনার ছবি সংগ্রহ করা হবে। লাইভ ছবি তুলতে হবে। এরপর মুঠোফোন নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিলে নিবন্ধন সম্পন্ন হবে।
নিবন্ধন শেষ হলে অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ইউজার নেম (মুঠোফোন নম্বর) ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে হবে। প্রথমবার হলে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য আপডেট করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে বর্তমান ঠিকানা প্রদর্শিত হবে। প্রদর্শিত বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তনযোগ্য। বর্তমান ঠিকানা আপডেট করে ছবি ও এনআইডির তথ্য মিলিয়ে নিন। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্রের স্বাক্ষর অনুসরণ করে মুঠোফোনের মাধ্যমে হাতের আঙুল বা স্টাইলাস দিয়ে ডিজিটাল স্বাক্ষর করুন। মোবাইল অপারেটর ও ই–মেইল তথ্য যুক্ত করুন। মুঠোফোন নম্বর ভেরিফিকেশন করার জন্য ৬ অঙ্কের একটি ওটিপি পাবেন।

মুঠোফোনের যে নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করবেন, সেটি সচল থাকা জরুরি

ওটিপি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন শেষ করুন। এর পরেই লগইন অপশন দেখবেন। এই লগইন অপশন দিয়ে অ্যাপের মাধ্যমে জিডি করতে পারবেন। একই লগইন তথ্য দিয়ে ওয়েবসাইট থেকেও জিডি করতে পারবেন।
হারানো অপশনে ক্লিক করলে যানবাহন, কম্পিউটার, মুঠোফোন, ডকুমেন্ট, নানা ধরনের কার্ড, গয়নাসহ অন্যান্য বিষয়ে জিডির অপশন পাবেন। অন্যান্য বিষয় থেকে পশুপাখি, চাবি, টাকাপয়সা, ব্যাগ ও ঘড়ি হারানোর বিষয়ে জিডি করতে পারেন। ডকুমেন্ট অপশনে ক্লিক করলে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদ, পাসপোর্ট, শিক্ষার্থী আইডি কার্ড, কর্মক্ষেত্রের আইডি কার্ড, ব্যাংকিং কাগজ, চালান, ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির কাগজ, কুরিয়ার সার্ভিসের ডকুমেন্ট, শিক্ষার্থী পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড, নম্বরপত্রসহ (মার্কশিট) ৬৯ রকমের কাগজপত্রের জন্য জিডি করতে পারবেন। চাকরির পরীক্ষার প্রবেশপত্র, চেক বই, চেকের পৃষ্ঠা, জমির দলিল, যানবাহন ক্রয়–বিক্রয়সংক্রান্ত কাগজপত্র, ট্রেড লাইসেন্স, পেনশন বই, ভিসার কপি, সঞ্চয়পত্র হারালেও এই অপশন ব্যবহার করবেন।

পাসপোর্ট হারালে পাসপোর্ট ইস্যুকারী দেশ, শ্রেণি, পাসপোর্ট নম্বরসহ স্টার চিহ্ন–সংবলিত ঘরগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে

পাসপোর্ট হারানোর জন্য

পাসপোর্ট হারালে পাসপোর্টের বিভিন্ন তথ্য পূরণ করতে হবে। ধরন, পাসপোর্ট ইস্যুকারী দেশ, শ্রেণি, পাসপোর্ট নম্বরসহ স্টার চিহ্ন–সংবলিত ঘরগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে। এরপরে জরুরি যোগাযোগ, শনাক্তকরণ তথ্য, হারানোর স্থান, সময় ও ঘটনার বিবরণ লিখতে হবে। পরে এন্ট্রি ফর অপশনে নিজের হলে নিজ ও অন্যের হয়ে জিডি করলে অন্যজনের তথ্য প্রবেশ করিয়ে সাবমিট করতে হবে।

সাবমিট অপশনের পরে শর্তাদি মেনে চলার একটি অপশন আসবে। সেখানে ক্লিক করলে মুঠোফোনে ওটিপি পাঠানো হবে। ওটিপি ঠিকমতো প্রবেশ করিয়ে জিডির আবেদন গ্রহণ করা হবে। একটি কোড পাবেন তখন। কোডটি সংরক্ষণ করতে হবে। প্রয়োজনে পুরো জিডির কপি ডাউনলোড করতে পারবেন। আপনার জিডির ধরন বুঝে বিভিন্ন অপশনে বিভিন্ন তথ্য পূরণ করতে হবে।

মুঠোফোনে ‘অনলাইন জিডি’ অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করে ইনস্টল করে রাখতে পারেন।

যা খেয়াল করবেন
১. অনলাইন জিডি করার জন্য আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর থাকা আবশ্যক। নিশ্চিত করুন যে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরটি সঠিক ও সচল আছে। নম্বরটি ভুল হলে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে।
২. যে মুঠোফোন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করবেন, সেটি সচল থাকা জরুরি। জিডির পরবর্তী সব আপডেট এবং যোগাযোগের জন্য এই নম্বর ব্যবহার করা হবে।
৩. জিডি লেখার সময় ঘটনার একটি সুস্পষ্ট ও বিস্তারিত বিবরণ দিন। স্থান, সময় ও কীভাবে ঘটনাটি ঘটেছে, ধাপে ধাপে তা উল্লেখ করুন। অস্পষ্ট বা সংক্ষিপ্ত বিবরণ আপনার আবেদনের প্রক্রিয়াকে জটিল করতে পারে।
৪. যদি কোনো ডকুমেন্ট, ছবি বা ভিডিও থাকে, তাহলে জিডির সঙ্গে  তা সংযুক্ত করুন। যেমন মুঠোফোন হারানোর জিডি করতে চাইলে ফোনের আইএমইআই নম্বর, ক্রয়ের রসিদ বা কোনো প্রমাণ থাকলে সেটি যুক্ত করুন।
৫. আপনার জিডি কোন থানার অধীন তা সঠিকভাবে নির্বাচন করুন। যে স্থানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেই স্থানের আওতাধীন থানাই নির্বাচন করতে হবে। ভুল থানা নির্বাচন করলে জিডি বাতিল হবে।
৬. আপনি কী ধরনের জিডি করছেন, তা সঠিকভাবে উল্লেখ করুন। মুঠোফোন, সার্টিফিকেট বা গুরুত্বপূর্ণ নথি হারানোর অভিযোগ ঠিক করে লিখুন।
৭. জিডি ফরম পূরণ করার পর সেটি ভালো করে একবার যাচাই করে নিন। বানান ভুল, তথ্যের ভুল বা অন্য কোনো ত্রুটি থাকলে সেটি ঠিক করে সাবমিট করুন।
৮. জিডি সাবমিট করার পর আপনাকে একটি জিডি নম্বর দেওয়া হবে। এই নম্বর সংরক্ষণ করুন। নম্বরটি দিয়ে জিডির ভবিষ্যৎ অবস্থা জানতে পারবেন এবং থানায় যোগাযোগের জন্য প্রয়োজন হবে।
অনলাইন জিডি করলে সাধারণত সরাসরি থানায় যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে প্রয়োজন হলে পুলিশ আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। যদি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোনো সাড়া না পান, তবে জিডি নম্বর নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করতে পারেন।