২০ নভেম্বর শীত শীত সকালেই উৎসবমুখর হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়াম। ভেতরে-বাইরে সবখানে রঙিন বেলুন, ব্যানার ও ফেস্টুন। ‘গোল…গোল…গোল’ থিম সংয়ের তালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস।
ইস্পাহানি-প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট ঘিরেই এত সব আয়োজন। টুর্নামেন্টটির এটি তৃতীয় আসর। চট্টগ্রাম পর্ব দিয়েই শুরু। ঢাকা থেকে এসে আয়োজনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া।
আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক চার অধিনায়ক—টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ইমতিয়াজ সুলতান জনি, চট্টগ্রামের সন্তান ও ফুটবলার মামুনুল ইসলাম ও জাহিদ হাসান এমিলি। তাঁদের উপস্থিতি চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামের উৎসবমুখর পরিবেশে যোগ করে বাড়তি উচ্ছ্বাস।
খেলোয়াড় ও দর্শক হিসেবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে শিক্ষার্থীরা এসেছিলেন, সবার নজরই জামাল ভূঁইয়ার দিকে ছিল।
চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, ‘গ্যালারি থেকে হলেও জামাল ভাইকে দেখতে পেরেছি, এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া।’
গ্যালারিতে বসা আরেক শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির ছাত্র সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বন্ধুদের প্রেরণা দিতে মাঠে এসেছিলাম। বোনাস হিসেবে জামাল ভাইকেও সামনাসামনি দেখতে পেলাম।’
নকআউট খেলা হওয়াতে প্রথম দিনের প্রথম ম্যাচে টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছে বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ। স্বভাবতই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহমিম ফেরদৌসের মন খারাপ। তবে জামাল ভূঁইয়ার উপস্থিতি তাঁর এই মন খারাপ কিছুটা হলেও কমিয়েছে বলে জানান তিনি।
শুধু গ্যালারিতে থাকা দর্শক নয়, মাঠের খেলোয়াড়দেরও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন জামাল। উদ্বোধনী আয়োজনে এই ফুটবলার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘ইস্পাহানি-প্রথম আলো তোমাদের সামনে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। সেটি কাজে লাগাতে হবে। মনের আনন্দে খেলো, উপভোগ করো, নিজেকে মেলে ধরো।’
চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামে খেলার স্মৃতিচারণাও করলেন তিনি। এই মাঠে শেখ কামাল টুর্নামেন্টে চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে খেলেছেন জামাল ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘এই মাঠে আমার অনেক ভালো স্মৃতি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সামনে এমন একটি মঞ্চ তৈরি করে দেওয়ার জন্য ইস্পাহানি-প্রথম আলোকে ধন্যবাদ।’
জামাল ভূঁইয়াকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের সেলফি তোলার ধুম পড়েছিল এদিন। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দলনেতা ইসমাইল কবির চৌধুরী জাতীয় দলের অধিনায়কের হাত থেকেই ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার নেন।
তিনি বলেন, ‘আমার এ বছর স্নাতক শেষ হবে। যেহেতু প্রকৌশলে পড়ছি, ভবিষ্যতে ফুটবলের সঙ্গে থাকা হবে কি না, জানি না। তবে জামাল ভাইয়ের হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার স্মৃতি আজীবন আমার মনে রয়ে যাবে।’
অনেকক্ষণ চেষ্টা করে জামালের সঙ্গে সেলফি তুলতে পারলেন চুয়েটের খেলোয়াড় নাফিস হাসান। তিনি বলেন, ‘শখের বশে ফুটবল খেলি। আমার মূলত ফুটবল খেলতে আসা জামাল ভাইকে দেখে। তাঁকে সামনাসামনি দেখব আর ছবি তুলব না, সেটা তো হতে পারে না।’
চুয়েটের আরেক খেলোয়াড় মোহাম্মদ বলেন, ‘জামাল ভূঁইয়া দলে ভেদাভেদ না করার বিষয়টা শেখাচ্ছেন। নতুনদের মোটিভেট করছেন। এতে বন্ডিং শক্ত হচ্ছে। তিনি আমাদের সামনে ভালো উদাহরণ তৈরি করছেন।’
টুর্নামেন্ট ঘিরে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থী রায়হান আমিন বলেন, ‘নিজের বিশ্ববিদ্যালয় দলের পাশে দাঁড়ানো মানে নিজের পরিচয়, নিজের আবেগকে বহন করা। গ্যালারিতে সেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ যেমন দেখা গেছে, তেমনি খেলোয়াড়দের আচরণেও দেখা গেছে খেলাধুলাপ্রীতির শুদ্ধ রূপ।’
বান্ধবীদের নিয়ে খেলা দেখতে এসেছিলেন চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী তাসনুভা জেরিন। তিনি বলেন, ‘সবার সঙ্গে খেলা দেখার আনন্দই অন্য রকম। এখানে প্রতিযোগিতা যেমন আছে, তেমন সৌহার্দ্যও আছে। তাই এটিকে টুর্নামেন্টের চেয়ে বেশি উৎসবই মনে হলো।’