আসবাবে রঙিণ আবহ শীতের দিনে মনকে সতেজ রাখতে সাহায্য করবে
আসবাবে রঙিণ আবহ শীতের দিনে মনকে সতেজ রাখতে সাহায্য করবে

শীতে নিজেকে চাঙা রাখতে কী করবেন

শীতে প্রকৃতি অনেকটাই নিষ্প্রাণ থাকে। এমন আবহাওয়ায় নিস্তেজ হয়ে পড়তে পারে মানুষের জীবনও। কাজেকর্মে অনীহা আসতে পারে। শরীরচর্চাসহ জীবনের স্বাভাবিক নিয়মের ব্যত্যয় হতে পারে। বাড়তে পারে রোগবালাইও। এ সময় নিজেকে উদ্যমী রাখতে শরীর ও মনের খেয়াল রাখা চাই। ঘর ও কর্মস্থলের পরিবেশও এই সময়ে মনের ওপর প্রভাব ফেলে। এ সম্পর্কে ঢাকার ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও সহকারী অধ্যাপক ডা. সাইফ হোসেন খান এবং সৃষ্টি আর্কিটেকচার অ্যান্ড কনসালট্যান্সির প্রতিষ্ঠাতা স্থপতি তাসনিম তূর্যির সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত লিখেছেন রাফিয়া আলম

পরম বন্ধু, সঙ্গী হোক উষ্ণতাও

শীতে আমরা পানির চাহিদা তুলনামূলক কম অনুভব করি। তবে দেহের কিন্তু পানি চাই-ই চাই। পানিশূন্যতায় ভুগলে আপনি উদ্যম হারাবেন সহজেই। আর পানির অভাবে ঠোঁট ও ত্বকও ফেটে যায় খুব দ্রুত।

তাই পানি খাবেন পর্যাপ্ত। প্রস্রাব করার সময় এর রং এবং পরিমাণের প্রতি খেয়াল রাখুন। তাহলে একটা ধারণা পাবেন, আপনি পর্যাপ্ত পানি খাচ্ছেন কি না। শীতে উষ্ণ পানি এবং পানীয় গ্রহণ করা ভালো। এ সময় স্যুপ দারুণ খাবার। সকালটা শুরু করতে পারেন উষ্ণ পানি দিয়ে। তবে একেবারে খালি পেটে চা-কফি খাবেন না।

আলোর বিকল্প নেই

নিজেকে চনমনে করে তুলতে দিনের আলোতে সময় কাটাতে চেষ্টা করুন। রোদে ভিটামিন ডি পাবেন। শরীর থাকবে সুস্থ। আর মনও হয়ে উঠবে সতেজ। সকালেই অন্দরের পর্দা সরিয়ে দিন। দিনে পর্দা দিয়ে রাখতে চাইলে পাতলা পর্দা (শিয়ারস) কাজে লাগান। ভারী পর্দায় অন্দর ঢেকে না রাখাই ভালো।

অন্দরে প্রকৃতির আলো কম পেলে পর্যাপ্ত কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা রাখুন। বাসার তুলনায় অফিসে একটু বেশি উজ্জ্বল আলো দরকার হয়। বাসার অন্দরে ও অফিসে একাধিক স্তরে হতে পারে আলোর আয়োজন।

জীবনধারা হোক সুন্দর, স্বস্তিদায়ক

ঘরবাড়ি গুছিয়ে রাখলে মন ভালো থাকে
  • শীতের শাকসবজি খাবেন অবশ্যই। মজাদার নানা পদ হতে পারে এসব শাকসবজি দিয়ে। ফলমূলও খাওয়া চাই। টক ফল খাবেন রোজ।

  • শরীরচর্চা বাদ দেবেন না। নিজের সুবিধামতো একটা সময় বেছে নিন। ব্যায়ামে শরীর তো সুস্থ থাকবেই, উষ্ণও অনুভব করবেন আপনি।

  • এমন পোশাক বেছে নিন, যা আপনাকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করবে। একাধিক পাতলা পোশাক পরতে পারেন, যাতে প্রয়োজনে কোনোটি সহজে খুলে রাখা যায়।

  • বিশ্রাম নিন ঠিকঠাক। হাত পরিষ্কার রাখুন। বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন, সুস্থ না থাকলে উদ্যম হারাবেই।

  • ঘরবাড়ি ও অফিসের অন্দর সাজিয়ে–গুছিয়ে রাখুন। কাজের জায়গা হোক পরিপাটি। হোক তা আপনার রান্নাঘর কিংবা ওয়ার্কস্টেশন। বছরজুড়ে যেভাবে সব সাজানো থাকে, সেই ধারাটি বদলেও ফেলতে পারেন।

  • অন্দরে বাহুল্য না থাকাই ভালো। সম্ভব হলে অতিরিক্ত আসবাব বা অনুষঙ্গ সরিয়ে ফেলুন।

  • ঘরে শতরঞ্জি বা এ ধরনের অনুষঙ্গ যোগ করতে পারেন। রং ও উষ্ণতা দুটিই পাবেন।

  • ঘরে সম্ভব হলে গাছপালা রাখতে পারেন। সবুজ মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।

অবসরের আয়োজন

চা খেতে খেতে পছন্দের কোনো বই পড়তে পারেন

অবসর কীভাবে কাটাবেন, পরিকল্পনা করুন। ঘুরে আসতে পারেন দূরে কোথাও। বছরের শেষে ঘোরাঘুরির জন্য ছুটি জমিয়ে রাখেন কেউ কেউ। দেশে–বিদেশে ঘুরে এলে মন ফুরফুরে হয়।

সপ্তাহান্তে কাছেপিঠে কোথাও যেতে পারেন। এক দিনের সফরও কাজের, এমনকি এক বেলার ঘোরাঘুরিও। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা হতে পারে। কাছেই কোথাও যেতে পারেন পিঠা খেতে। নিজেও করতে পারেন এমন কোনো আয়োজন। নেমন্তন্ন করতে পারেন কাছের মানুষদের।

রোজকার কাজের শেষে বাড়ির যে জায়গায় সময় কাটাতে চান, সেটিও রাখুন গুছিয়ে। বসার জায়গাটা হোক আরামদায়ক। কাপড় বা ফোমের সোফায় স্বস্তি পাবেন এই আবহাওয়ায়। বই পড়া কিংবা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গল্প করার জন্য আরামদায়ক একটা জায়গা তৈরি করে নিতে পারেন বাড়িতে।

অন্দরে প্রাণের পরশ

অন্দরে তাজা ফুলের ঘ্রাণ মনকে সতেজ রাখতে সাহায্য করবে

অন্দরের যেকোনো অংশে উজ্জ্বল রং যোগ করতে পারেন। হলুদ, কমলা, গোলাপি কিংবা উজ্জ্বল জলপাই রং আনা যেতে পারে সেখানে। ঘরের কোনো একটা দেয়ালেই যে উজ্জ্বল রং আনতে হবে, তা নয়। বরং কুশন কভার, টেবিলম্যাট, রানার প্রভৃতিতেও থাকতে পারে এমন রং।

অন্দরকে প্রাণবন্ত করে তুলতে ঘ্রাণ কাজে লাগাতে পারেন। চা-কফির জন্য একটা কোণ থাকতে পারে বাড়িতে বা অফিসে। এ ধরনের ঘ্রাণের জন্য এয়ারফ্রেশনারও কাজে লাগাতে পারেন। নিরাপদ কোনো এসেনশিয়াল অয়েল কাজে লাগাতে পারেন ডিউফিউজারের মাধ্যমে। ভ্যানিলা মিস্টও দারুণ। তাজা ফুলের সুগন্ধও মনকে ভালো রাখতে সাহায্য করবে। টবসহ ফুলের গাছও রাখতে পারেন চোখের সামনে।