জাপানিজ স্টাডিজ পড়তে গিয়ে পরিচয়, বিয়ে; এখন পড়ছেন জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ে

ক্যাম্পাসে পরিচয়। এরপর বন্ধুত্ব। ধীরে ধীরে একে অপরের শক্তি হয়ে ওঠা, স্নাতক শেষে গাঁটছড়া বাঁধা। শেষমেশ উচ্চশিক্ষা নিতে ভিনদেশের পথেও একসঙ্গে পা বাড়ানো। সহপাঠী থেকে সহযাত্রী হয়ে ওঠা এমনই এক জুটির গল্প শুনুন।

রবিউল ইসলাম ও সৈয়দা মিয়েল আহমেদ
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগ। ছোট একটি ক্লাসরুমে শতাধিক শিক্ষার্থী। এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু হলো রবিউল ইসলাম (হৃদয়) ও সৈয়দা মিয়েল আহমেদের গল্প। ছোটখাটো তর্ক, হালকা রাগ-অভিমানের মধ্য দিয়ে একটু একটু করে তাঁদের মধ্যে গড়ে ওঠে মিষ্টি বন্ধুত্ব। রবিউল বলেন, ‘ক্লাসে প্রথম প্রথম এটা-ওটা বলে একটু বিরক্ত করতাম। কিন্তু ধীরে ধীরে ওর সরলতা আর বোকামি আমার খুব ভালো লাগতে লাগল। আমরা অনেক সময় একে অপরকে বিরক্ত করতাম, তবে সেটাই ছিল আমাদের বন্ধুত্বের মধুর অংশ।’

বন্ধুত্বটা ক্লাসরুমের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। গ্রুপ স্টাডি করতে করতেই তাঁরা একসময়ে দুজন মিলে ‘গ্রুপ’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বিয়ে করেছেন।

পড়াশোনার চাপে, মানসিক অবসাদে যখন মনে হতো সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, তখন একে অপরকে সাহস দিতেন তাঁরা। মিয়েল বলেন, ‘যখন হতাশা এসে ঘিরে ফেলত, পাশে দাঁড়িয়ে এক গ্লাস কোল্ড কফি বা বার্গার দিয়ে মন ভালো করে দিত হৃদয়। ওর সাপোর্ট না পেলে হয়তো এতটা দূর আসা সম্ভব হতো না।’

কেবল পড়াশোনা নয়, জীবনের নানা দুঃখ-সুখেও একসঙ্গে ছিলেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টের জন্য তাঁরা বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে মানিকগঞ্জে ফিল্ড ওয়ার্ক করেছিলেন। সেই সময় তাঁদের একাধিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। রবিউল স্মরণ করেন, ‘ওর জন্য ওর মা খুব চিন্তিত ছিলেন। প্রথম দিনের কাজ শেষ হতেই ও জ্বরে পড়ে গিয়েছিল। আমি যতটা পারতাম সাহায্য করেছি। এই প্রজেক্ট আমাদের প্রফেশনাল ও পারসোনাল জীবনের একটা মাইলফলক।’

তবে কাজের চাপ কিংবা দূরত্বের ভয় তাঁদের বন্ধুত্বকে ভাঙতে পারেনি। ধীরে ধীরে সময় বদলেছে। ক্যাম্পাসের ক্লাসরুম, প্রজেক্ট, আড্ডা, বিকেলের চা—সবকিছু পেছনে পড়ে গেছে। কিন্তু গল্পটা থেমে যায়নি।

এখন জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগে পড়ছেন মিয়েল। উদ্ভাবনী অর্থনীতি নিয়ে কাজ করছেন তিনি, যেখানে উদ্ভাবনী নীতিমালা, প্রযুক্তির প্রভাব ও অর্থনৈতিক বিকাশের আন্তসম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়।

জাপানের তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্লোবাল গভর্ন্যান্স এবং টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে পড়ছেন রবিউল। তিনি মূলত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহার-বিষয়ক (রিসাইক্লিং) নীতিমালা নিয়ে গবেষণা করছেন। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কৌশল, স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা এবং জনগণের অংশগ্রহণ কীভাবে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে, তা বোঝার চেষ্টা করছেন। রবিউল বলেন, ‘আশা করছি, এখানে যা কিছু শিখব, সুযোগ পেলে তা দিয়ে দেশের পরিবেশ-পরিস্থিতির উন্নয়নে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখতে পারব। দেশের জন্য কিছু করতে পারাটা সব সময়ই আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন।’

যদিও দুজনেই জাপানে আছেন, দুজনের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৮০০ কিলোমিটার। দুজনের অবস্থান আলাদা, পথ আলাদা, স্বপ্ন ভিন্ন হলেও সম্পর্কটা ক্লাসরুমে খুনসুটির সেই সময়ের মতোই রয়ে গেছে।