ঘরের বাইরে খেটেখুটে রোজগার করলেও ঘরের কাজের বিষয়ে উদাসীন, এমন পুরুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তাঁদের সংসারের বেশির ভাগ কাজ নারীদেরই সামলাতে হয় বাধ্য হয়ে। এ নিয়ে অশান্তিও হয়। পুরুষের এ মানসিকতার পেছনে তাঁর বেড়ে ওঠাটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ বিষয়ে শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের সিনিয়র ক্লিনিক্যাল ফেলো ডা. টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ-এর সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন রাফিয়া আলম।
নিজের ঘরে আরাম-আয়েশে থাকতে চাইবেন যে কেউই। তবে তার মানে এই নয় যে একজন জীবনসঙ্গী সব সময়ই সংসারের সব কাজ সামলে দেবেন অপরজনের জন্য। দুজন মিলে জীবনের পথ পাড়ি দেওয়ার নামই তো সংসার।
ঘরের কাজ পুরুষের জন্য নয়—এ ভাবনার বীজ বোনা আছে সমাজেই। অনেক পরিবারে আজও সে চর্চাই চলে। অথচ একটি পরিবারের কর্তব্য হলো শিশুকে জীবনের বিভিন্ন ধাপের উপযোগী করে গড়ে তোলা। দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম পাঠ হয় পরিবারেই। শিশুটি ছেলে, নাকি মেয়ে, সেটি এখানে বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত নয়। সঠিকভাবে বেড়ে উঠলে ভবিষ্যতে সংসারজীবনের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে গিয়ে অশান্তির আশঙ্কা থাকে না। কারণ, সংসারটা দুজনেরই।
• অভিভাবক হিসেবে আপনি সন্তানের সর্বোচ্চ স্বস্তি নিশ্চিত করবেন অবশ্যই। তবে তা করতে গিয়ে কুটোটিও নাড়তে দেবেন না বা পানি ঢেলে খেতে দেবেন না—এমন ভাবনা একেবারেই ভুল। রূপকথার রাজপুত্রের মতো হাত বাড়ালেই সব পাবে না সে ভবিষ্যতে।
• খেয়াল রাখুন, আপনার অনুপস্থিতিতে অন্য কেউ তাকে আপনার মতো করে সবকিছু এগিয়ে দেবে—এমন ভাবনা যাতে তার মনে স্থান না পায়। ছেলে বা মেয়ে হিসেবে নয়; বরং দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন সন্তানকে।
• উদাহরণ সৃষ্টি করুন শিশুর সামনে। মা-বাবা মিলেমিশে ঘরের কাজ করছেন, এমন দৃশ্য দেখে বড় হয়ে উঠুক শিশু।
• শিশুর বয়সের উপযোগী ঘরের কাজে যোগ দিতে উৎসাহ দিন তাকে। ছোট শিশু সবজি কাটতে পারবে না ঠিকই, কিন্তু এগিয়ে তো দিতে পারবে।
• ধীরে ধীরে নিজের থালাবাটি ধোয়া কিংবা ঘর গুছিয়ে রাখার মতো কাজও করতে শেখান তাকে।
• তবে কাজের ভার চাপিয়ে শিশুর জীবন বিপর্যস্ত করে তোলাও ঠিক নয়। অল্পস্বল্প কাজেই গড়ে উঠুক কাজের অভ্যাস।
• তার চেষ্টার প্রশংসাও করুন।
• খেলনা কেনার ক্ষেত্রেও লিঙ্গবৈষম্য এড়িয়ে চলুন।
শিশুকে ভালোবাসুন, তবে খেয়াল রাখুন, ভালোবাসা যেন সর্বগ্রাসী না হয়। স্বাভাবিক নিয়মে শিশুকে বড় করে না তুললে পরে মুশকিলে পড়তে পারে সে-ই।
• আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠতে পারে সে।
• এমন ধারণা নিয়েই সে বড় হতে পারে যে সব জায়গায় সব মানুষ তার সব আবদার রক্ষা করবে এবং যেকোনো আচরণ সহ্য করবে।
• আবেগ নিয়ন্ত্রণেও সে ব্যর্থ হতে পারে।
• পরবর্তী সময়ে জীবনসঙ্গীর সঙ্গেও সাধারণ বিষয় নিয়ে বড় ধরনের ঝামেলা হতে পারে।
যিনি শৈশব থেকে রাজপুত্রের মতো অতি আদরে বেড়ে উঠেছেন, সংসারজীবনে তিনি বড় একটা ধাক্কা খেতেই পারেন। দায়িত্ব ভাগ করে নিতে অনাগ্রহের কারণে চাপে পড়তে পারেন তাঁর জীবনসঙ্গীও। তবে এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসা একেবারে অসম্ভব নয়।
• রাজপুত্র থেকে একজন সাদামাটা কিন্তু দায়িত্বশীল মানুষ হয়ে উঠতে নিজের ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে জোরালো। অল্প অল্প করে সংসারের দায়িত্ব বুঝে নিতে হবে।
• নিজের ‘উন্নত ভার্সন’ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার প্রয়াস থাকতে হবে।
• তাঁর জীবনসঙ্গীরও সব সময় তাঁর কথামতো চলা উচিত হবে না। একটা সীমারেখা সৃষ্টি করতে হবে তাঁকেও। নইলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও সেই ভুল বার্তা পেয়েই বড় হবে।