
জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। তাদের শেখার কৌশলগুলো শুধু কার্যকরই নয়, আনন্দদায়কও। এসব কৌশল শিশুকে শেখায় সহজ করে, কোনো কিছু মনে রাখাও সহজ হয়ে যায়।
ধাপে ধাপে শেখা, ছবি ব্যবহার করা, প্রশ্ন করে শেখা—সব মিলিয়ে জাপানিরা শেখাকে একদম জীবনঘনিষ্ঠ করে তোলে। জাপানিদের এমন সাতটি অসাধারণ শিক্ষার কৌশল জানা থাকলে আমাদেরও কাজে লাগতে পারে।
১. কাইজেন (ক্রমাগত উন্নতি)
জাপানি ভাষায় ‘কাইজেন’ মানে হলো প্রতিদিন একটু একটু করে উন্নতি করা। আপনি যে বিষয় শিখতে চান, তা যদি ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে শিখতে পারেন, তাহলে শেখাটা সহজ হয় এবং তা অনেক দিন মনে থাকে। এই পদ্ধতি মেনে আপনি জটিল বিষয়ও খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারবেন। যেমন ইংরেজি ভাষা শিখতে চাইলে প্রতিদিন শুধু ৫টি নতুন শব্দ শিখতে পারেন, তাতে এক মাসে ১৫০টি শব্দ আয়ত্ত করতে পারবেন। এতে মস্তিষ্কে চাপ পড়বে কম, আর শেখাটাও হবে দৃঢ়।
২. স্পেস রিপিটেশন (দূরত্বভিত্তিক পুনরাবৃত্তি)
জাপানিরা কোনো একটা বিষয় বারবার পড়ে। এতে বিষয়টি অনেক দিন মনে থাকে। তবে বারবার পড়তে হবে বিরতি নিয়ে। আমরা যখন কোনো তথ্য ভুলে যেতে শুরু করি, তখন যদি আবারও সেটা পড়ি তখন মস্তিষ্কে আরও ভালোভাবে বসে যায়। এভাবে তথ্য অনেক দিন পর্যন্ত মনে থাকে। ধরুন আজ একটা কিছু মুখস্থ করলেন। কাল আবার পড়লেন, তারপর তিন দিন পর আবার, তারপর এক সপ্তাহ পর আবার—এভাবে সময় বাড়িয়ে পড়লে সেটা অনেক দিন মনে থাকবে।
৩. কাইনেসথেটিক লার্নিং (হাতে-কলমে শেখা)
এ পদ্ধতিতে হাতে-কলমে কোনো কাজ করে শেখানো হয়। যেমন নিজে কোনো জিনিস তৈরি করা বা কোনো কাজে অংশ নেওয়া। যেমন জাপানের স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই খাবার পরিবেশন করে, টেবিল গোছায় এবং খাওয়ার পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করে। এর মাধ্যমে তারা শুধু সহযোগিতা ও দায়িত্ববোধই শেখে না, জীবনদক্ষতাও আয়ত্ত করে।
৪. অ্যাকটিভ রিকল (সক্রিয়ভাবে মনে করা)
এই পদ্ধতিতে নিজেকে প্রশ্ন করে বা কোনো কিছু মনে করার চেষ্টা করে কোনো কিছু শেখা হয়। এতে শেখা অনেক ভালোভাবে হয়। যখন আমরা নিজে থেকে কিছু মনে রাখতে চাই, তখন আমাদের মস্তিষ্ক আরও সক্রিয় হয় এবং শেখাটা মজবুত হয়। যেমন কোনো কিছু পড়ার পর বই বন্ধ রেখে ভাবা—‘আমি কী শিখেছি?’ বা ‘আমি এটা অন্য কাউকে বুঝিয়ে বলতে পারব কি না?’ এভাবে ভাবলে বা প্রশ্ন করলে বিষয়টা বেশি দিন মনে থাকে এবং আমরা সহজে ভুলি না।
৫. ভিজ্যুয়ালাইজেশন (ছবি ও শব্দের মেলবন্ধন)
এই পদ্ধতিতে রঙিন বা মজার ছবি দিয়ে কোনো কথা বা বিষয় মনে রাখা হয়। জাপানের ছাত্রছাত্রীরা কঠিন জিনিস মনে রাখার জন্য কার্টুন, ছবি বা মজার উপমা ব্যবহার করে। এতে শেখা সহজ আর আনন্দদায়ক হয়। যেমন ইংরেজি ‘volcano’ শব্দটা মনে রাখতে পারেন, একটা পাহাড় থেকে আগুন বের হচ্ছে এমন একটা ছবি এঁকে। এতে শব্দটা শুধু মজার হয় না, অনেক দিন মনে থাকে।
৬. মাইন্ড ম্যাপিং (ভাবনার মানচিত্র)
মাইন্ড ম্যাপিং মানে হলো কোনো বিষয়কে ছবির মতো সাজিয়ে দেখা, যাতে তথ্যগুলো কীভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত, তা বোঝা যায়। এতে বোঝা আর মনে রাখা দুটিই সহজ হয়। যেমন যদি আপনি ‘শরীর ভালো রাখার উপায়’ বিষয়ে শিখতে চান, তাহলে মাঝখানে লিখুন ‘শরীর ভালো রাখা’। এরপর চারপাশে লিখতে পারেন—ভালো খাবার, ব্যায়াম, ঘুম, মানসিক শান্তি। এভাবে সাজালে পুরো বিষয়টা পরিষ্কারভাবে চোখে ভেসে ওঠে, আর শেখাও অনেক সহজ হয়।
৭. ফাইনম্যান টেকনিক
ফাইনম্যান টেকনিকের নাম এসেছে বিখ্যাত মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যানের নাম থেকে। তিনি বিশ্বাস করতেন, কোনো বিষয় যদি সহজ ভাষায় অন্যকে বোঝানো যায়, তবে সেটা ভালোভাবে শেখা হয়েছে। তিনি জটিল বিষয় সহজ করে বোঝাতেন। এই অভ্যাস থেকেই ফাইনম্যান টেকনিকের উদ্ভব, যেখানে শেখার পর নিজের ভাষায় অন্যকে বোঝাতে হয়, যাতে শেখাটা শক্ত ও স্থায়ী হয়। জাপানের ছাত্রছাত্রীরা এ পদ্ধতিটি ভালোভাবে প্রয়োগ করে।
সূত্র: এমএসএন