হঠাৎই এমন দিন আসে, যখন ঘরে কোনো ঝামেলা নেই, কাজে সমস্যা নেই, বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগও ঠিকঠাক চলছে; তবু মনে হয় ভেতরে কোথাও আটকে আছি। কষ্ট নয়, সংকট নয়—শুধু একধরনের শূন্যতা।
সব ঠিক আছে, অথচ কিছুই ভালো লাগছে না। মনোবিজ্ঞানীরা এই অবস্থার নাম দিয়েছেন ‘অ্যানহেডোনিয়া’। গ্রিক শব্দ ‘অ্যান’ অর্থ ‘বিহীন’ এবং ‘হেডোন’ অর্থ ‘আনন্দ। বুঝতেই পারছেন, অ্যানহেডোনিয়ার সহজ অর্থ কোনো কিছুতেই আনন্দ বা আগ্রহ না পাওয়া।
অনেকে একে বলেন অস্তিত্বগত ক্লান্তি। তখন মনে হয়, মস্তিষ্ক যেন ভুলে গেছে আনন্দ কাকে বলে, কৌতূহল কাকে বলে। আর কৌতূহল হারিয়ে গেলে আনন্দও মরে যায়।
আমাদের মস্তিষ্ক আদতে নতুনত্ব চায়। একঘেয়েমি সহ্য করতে পারে না। একই কাজ প্রতিদিন একইভাবে করলে ডোপামিন নামের আনন্দের হরমোন কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তখন জীবন যেন এক চক্রে আটকে যায়।
আরেকটি ফাঁদ হলো, আমরা নিজেকে বোঝাই, ‘আমি তো ভাগ্যবান, খুশি থাকা উচিত।’ কিন্তু কৃতজ্ঞতা আর আনন্দ এক জিনিস নয়। আনন্দে মানে অংশগ্রহণ, ঝুঁকি আর অজানার স্পর্শ। এ জন্য অনেকেই হঠাৎ চাকরি বদলান, সম্পর্কে সমস্যা তৈরি করেন বা না ভেবে খরচ করেন—শুধু নতুন কিছু একটা অনুভব করার জন্য।
একে অচলাবস্থার চক্রও বলা যায়। এটা সাধারণত এমন হয়—
মন শূন্য লাগে।
কেন এমন লাগছে, তা ভেবে ভেবে ক্লান্ত হই।
আবার অপরাধবোধ হয়—আমার তো খুশি থাকার কথা।
তারপর আমরা সিরিজ দেখি, খাই বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডুবে যাই।
শেষে আরও শূন্য লাগে।
এভাবেই চলতে থাকে।
এর সমাধান জীবন পুরো পাল্টে ফেলা নয়। বরং ছোট ছোট পরিবর্তনই পারে চক্রটাকে ভাঙতে।
নতুন কিছু করুন: নতুন পথে হাঁটুন, অচেনা জায়গায় যান, নতুন মানুষের সঙ্গে কথা বলুন।
নড়াচড়া করান: কেবল ব্যায়াম নয়; হাঁটুন, নাচুন বা স্ট্রেচ করুন। শরীর অনেক সময় মনে জমে থাকা আবেগকে জাগিয়ে তোলে।
তৈরি করুন: লিখুন, আঁকুন, বানান। ভালো না হলেও সমস্যা নেই। সৃষ্টির প্রক্রিয়াটাই আমাদের ‘জীবন্ত’ করে তোলে।
চ্যালেঞ্জ নিন: শুধু যাঁরা আপনাকে সমর্থন করেন, তাঁদের সঙ্গে নয়—যাঁরা ভিন্নমত দেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করুন। এটা আপনাকে নতুনভাবে ভাবতে শেখাবে।
জীবন সব সময় রোমাঞ্চকর হবে না। কোনো কোনো দিন বিরক্তিকর, কোনো কোনো মাস কঠিন যাবে। কিন্তু এই ‘মোটামুটি’ সময়গুলোকে যেন অচলাবস্থা ভেবে ভুল না করেন। আপনি আদতে আটকে নেই, শুধু বিরতিতে আছেন। আর বিরতি শক্তিশালী, যদি তা টের পান।
আনন্দ মানে নিছক ‘মুড’ নয়। আনন্দ হলো ‘জীবিত’ থাকার এবং আবার ‘বেঁচে ওঠা’র চাবিকাঠি। তাই অপেক্ষা না করে ছোট ছোট পরিবর্তন শুরু করুন। কারণ, আনন্দ নিজে থেকে আসে না, তাকে ডাকতে হয়।
সূত্র: মিডিয়াম