১৯৮৫ সালের কথা। পঞ্চম শ্রেণির ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। বরাবরের মতো আমার রোল নম্বর ১। পরিবারের সবাই খুশি। এবার ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পালা। সেটাও হয়ে গেল। উপজেলার সবচেয়ে নামকরা স্কুলে ভর্তি হলাম।
পড়াশোনা, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা ও হেঁটে স্কুলে যাওয়া—সবই ভালোই চলছিল। কিন্তু আমার অপেক্ষা, কবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি পরীক্ষার ফল পাব। এই অপেক্ষার মধ্যেই সময় চলছে সময়ের নিয়মে।
তখন খুব সম্ভবত আম পাকার মৌসুম শুরু হবে হবে করছিল। গাছে ঝুলছে থোকা থোকা আম। এক বিকেলে বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম আমভর্তা খাব। যেই কথা সেই কাজ। খেলাধুলা বাদ দিয়ে আমরা হাজির হলাম মালিকানাহীন এক বিশাল আমগাছের তলায়। সবাই ঢিল ছুড়ে আম পাড়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এর মধ্যেই হঠাৎ দেখতে পাই আফসার স্যার আমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। ভাবলাম, হয়তো শাস্তি দেবেন। আমরা ভয় পেয়ে পালাতে লাগলাম। কিন্তু কিছুটা দূরে গিয়ে খেয়াল করলাম, স্যার আমাদের পালাতে দেখে হাসছেন আর ইশারায় ডাকছেন।
সাহস নিয়ে স্যারের কাছে গেলাম। স্যার সস্নেহে আমাকে কাছে নিয়ে বলেন, মোকাদ্দেছ, তুমি বৃত্তি পেয়েছ!
আমার মাথা থেকে আম পাড়ার চিন্তা উবে গেল। স্যারকে সালাম করেই ছুটলাম বাড়ির দিকে। সুখবর জেনে মা–বাবা, ভাইবোন আমার চেয়েও যেন খুশি হলেন। বৃত্তি পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ল সারা গ্রামে।
পরদিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিষ্টি বিতরণ করলাম। এদিকে বৃত্তি পাওয়ার খবরে আমার বর্তমান স্কুলেও কদর বেড়ে গেল।
সেদিনের আমভর্তা আর কোনো দিন খাওয়া হয়নি। তাই হয়তো মনের গহিনে আজও গেঁথে আছে স্মৃতিটা।
প্রিয় পাঠক, আপনিও লিখুন ‘ছুটির দিনে’র নিয়মিত বিভাগ ‘জীবন যেমন’–এ। লিখে জানাতে পারেন জীবনের কোনো সুখ–স্মৃতি, রোমাঞ্চ–জাগানিয়া ঘটনা, উত্থান–পতন, পাওয়া না–পাওয়ার গল্প।
লেখা পাঠানোর ঠিকানা
ছুটির দিনে, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা–১২১৫
ই-মেইল: chutirdine@prothomalo.com
ফেসবুক পেজ: fb.com/ChutirDine
খামের ওপর বা ই–মেইলের subject-এ লিখুন ‘জীবন যেমন’।