
সিলেটের জিন্দাবাজারের লতিফ সেন্টারে আছে ‘ডিভিডি গ্যালারি’। এই দোকানে প্রায় দুই যুগ পরও সিডি-ডিভিডি আগলে রেখেছেন তারেক আহমদ। দোকানটি ঘুরে এসে লিখেছেন জীবন পাল
লতিফ সেন্টারের দ্বিতীয় তলার ২১৮ নম্বর দোকানে গেলে একবার শৈশব ভ্রমণ হয়ে যায়। স্মৃতিকাতর হতেই এখানে আসে আমার মতো ‘নাইনটিজ কিডস’। গত মাসেও সিডি-ডিভিডির দোকানটায় ঢুঁ মেরেছি। ‘ডিভিডি গ্যালারি’র স্বত্বাধিকারী তারেক আহমদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছি কিছুক্ষণ।
নব্বই দশকে ক্যাসেট-সিডি-ডিভিডির বাজার ছিল রমরমা। সিনেমা বা নতুন অ্যালবাম রিলিজ মানেই ছিল দোকানে ভিড়। সময় বদলেছে, বদলেছে মানুষের গান শোনা ও ছবি দেখার ধরন। ক্যাসেট-ডিভিডির জায়গা নিয়েছে এখন মুঠোফোন, ইউটিউব কিংবা মেমোরি কার্ড। তবে ‘ডিভিডি গ্যালারি’তে এখনো সযত্নে সাজানো অডিও-ভিডিও সিডি-ডিভিডি আর পুরোনো দিনের অডিও ক্যাসেট। যার পেছনে আছেন এই তারেক আহমদ।
নব্বই দশকে এই দোকান চালাতেন তারেক আহমদের মামাতো ভাই লিটন আহমেদ। ২০০২ সালে এটির মালিক হন তারেক আহমদ। দোকানের পরিধি তখন অনেক বড় ছিল। আশপাশের দোকানগুলোতেও সিডি, ক্যাসেট, ডিভিডির বাহার ছিল। সময়ের স্রোতে সব বদলে গেছে। কেউ ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন, কেউ পেশা বদলেছেন, কিন্তু তারেক রয়ে গেছেন।
তারেক জানান, এখনো তাঁর দোকানে লাখ টাকার বেশি ক্যাসেট ও সিডি-ডিভিডি রয়েছে। প্রতি দুই মাসে ঢাকা থেকে আনতে হয় প্রায় ১০ হাজার টাকার ক্যাসেট। বেচাকেনা কমলেও একেবারে থেমে যায়নি। বিশেষ করে সিলেটের লন্ডনপ্রবাসীদের মধ্যে এখনো এই সিডি-ক্যাসেটের চাহিদা আছে। দেশে এলে ১৫ থেকে ২০টি ক্যাসেট একসঙ্গে কিনে নিয়ে যান তাঁরা। জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই ক্রেতাদের আনাগোনা বেশি থাকে। তাঁদের পছন্দের তালিকায় থাকে প্রিয় শিল্পীর গানের ক্যাসেট, কোরআন তিলাওয়াত বা বাংলা গজলের ডিভিডি।
তারেক জানান, আগে যে ডিভিডি ৬০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ৯০ টাকা। ৫০ টাকার ভিডিও সিডি এখন ১৫০ টাকা। অনেকেই পুরোনো গাড়িতে বাজানোর জন্য অডিও ক্যাসেট খোঁজেন। কেউবা ঘরে থাকা সিডি-ডিভিডি প্লেয়ারে শোনার জন্য ক্যাসেট নিতে আসেন। বিভিন্ন এলাকার নিয়মিত ক্রেতাও রয়েছেন, যাঁরা মাঝেমধ্যেই এসে পছন্দের গান, শিল্পীর ক্যাসেট খোঁজেন। তরুণের চেয়ে বয়স্ক ব্যক্তিদের সংখ্যাটাই বেশি।
২০০৫ সালের দিকে দিনে লাখ টাকার ক্যাসেটও বিক্রি হতো বলে জানান তারেক আহমদ। সকালে দোকান খোলার আগেই চলে আসতেন অনেক ক্রেতা। আর ঈদের সময় দোকানে ভিড় থাকত রাতভর। ‘তখন ক্যাসেট পাওয়া মানে আনন্দ ছিল। কে আগে সংগ্রহ করল, কে আগে শুনল—এসব আনন্দের প্রতিযোগিতার মতো ছিল। লন্ডনপ্রবাসীরা তো ২০ পাউন্ডে ২০টি ক্যাসেটও কিনতেন, কারণ, ওখানে এক ক্যাসেটের দামই ছিল ২০ পাউন্ড’, বলেন তারেক।
এই ডিজিটাল যুগে যেখানে সব গান হাতের মুঠোয়, সেখানে এখনো একটি অডিও ক্যাসেট কিনতে কেউ কেউ আসেন কষ্ট করে। হয়তো তাঁরা ফিরে যান নিজেদের শৈশবে, কিংবা খুঁজে ফেরেন হারানো কোনো ভালোবাসা। আর তাঁদের কাছে সিডি-ডিভিডির এই ছোট্ট দোকানটি শুধু দোকান নয়, একটি সময়ের স্মারক।