
ইলিশ দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করতে ভালোবাসেন রাবা খান। ভালোবাসেন মাওয়ায় গিয়ে ইলিশভাজা খেতে। ইলিশ নিয়ে এমন আরও অনেক মজার গল্প জানালেন জনপ্রিয় এই কনটেন্ট ক্রিয়েটর।
পাতুরি খেতে গিয়েছিলাম কক্সবাজারের পালংকীতে। ভেটকি আর চিংড়ি মাছের পাতুরি খেয়ে এত ভালো লাগল যে বাসায় এসে ভাবলাম, ইলিশ মাছ দিয়ে পাতুরি বানাই। যেই ভাবা সেই কাজ। যেহেতু প্রথম রান্না করলাম, তাই পাতুরির অবস্থা যে কী হলো, তা আর নাই বললাম। পাতা আর মাছ মিলেমিশে একাকার। পাতুরি রান্নায় তাপের যে একটা ব্যাপার থাকে, সেটা তখনো জানতাম না।
এভাবে মাঝেমধ্যে ইলিশ নিয়ে নানা ধরনের রান্নার এক্সপেরিমেন্ট করি। যদিও এত রকম পদের মধ্যে ইলিশভাজা খেতেই ভালোবাসি বেশি। স্বাদের চেয়ে ইলিশের ঘ্রাণটা আমায় টানে বেশি। খুব মসলা দিয়ে রান্নার চেয়ে শুধু তেলেভাজা ইলিশ খেতে ভালো লাগে বেশি।
ইলিশ মাছ খেতে প্রায়ই মাওয়ায় চলে যাই। মাওয়ার দোকানগুলোর একটি জিনিস খুব ভালো লাগে। চোখের সামনেই সব রান্না করে দেয় তারা। মাছ পছন্দ করে দেওয়ার পর তারা বলে, কীভাবে রান্না হচ্ছে দেখেন। বিষয়টা আমাকে খুব টানে। শর্ষের তেলে ভাজা মাওয়ার ইলিশের কাছে যেকোনো খাবারের স্বাদ নগণ্য। মাওয়ায় আমার ভালো লাগে ইলিশের ডিমভাজা ও লেজভর্তা।
তবে ইলিশ মাছ খেতে ভালোবাসলেও এই মাছের কাঁটার জন্য মাঝেমধ্যে একটু বিরক্তও লাগে। আরেকটা জিনিস আমি করি। বিদেশি কোনো বন্ধু বেড়াতে এলে তাকে ইলিশ দিয়ে আপ্যায়ন করি। ইলিশের স্বাদটা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই।
কিছুদিন আগে শ্রীলঙ্কা ও ইন্ডিয়া থেকে আমার দুই বন্ধু এসেছিল, তাদের আপ্যায়নের জন্য রেখেছিলাম ইলিশের আয়োজন। সেই বন্ধুরা খেয়ে তো মুগ্ধ। যদিও সেদিন আমি নই, আমার মা রান্না করেছিল। ইলিশের ডিম দিয়ে মা একটা দোপেয়াজি রান্না করে, সেটা মায়ের হাতে রাঁধা আমার খুব পছন্দের ইলিশের রেসিপি।
মা তো ইলিশ ভালো রান্না করেই, তবে আমার শাশুড়ি মায়ের (মাহমুদা আপন) ইলিশ রান্নার হাত অতুলনীয়। তাঁর হাতের ভাপা ইলিশ, লেবু ইলিশ যে একবার খেয়েছে, সে কখনো এর স্বাদ ভুলবে না। আজকে ‘নকশা’র আয়োজনে তাঁর রেসিপি দেখেই রান্নার চেষ্টা করেছি। যদিও ইলিশ রান্নায় এখনো আমি তাঁদের মতো এতটা পারদর্শী হয়ে উঠতে পারিনি।
উপকরণ
মাঝারি আকারের ইলিশ মাছের পেটি ও পিঠের অংশ কাটা ৮–১০ টুকরা, পেঁয়াজবাটা দেড় কাপ, সাদা শর্ষে ২ টেবিল চামচ, কালো শর্ষে ২ টেবিল চামচ, শর্ষের তেল আধা কাপ, কাঁচা মরিচ ১৫টি, হলুদ ২ চা–চামচ, লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি
সাদা ও কালো শর্ষে পরিষ্কার করে নিয়ে শুকনা অবস্থায় ব্লেন্ডারে গুঁড়া করে নিতে হবে। গুঁড়া শর্ষের সঙ্গে ৫–৬টি কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ একসঙ্গে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। চাইলে শিল–নোড়ায় বেটে নেওয়া যেতে পারে। বাটা শর্ষে, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচের সঙ্গে হলুদ ও লবণ তেল দিয়ে মাখতে হবে। মাখা মসলা পরিষ্কার করে ধুয়ে রাখা মাছের গায়ে মেখে একটি ঢাকনাসহ বাটিতে সাজিয়ে ওপরে কাঁচা মরিচ দিন। একটি বড় হাঁড়িতে পানি দিয়ে মাছের বাটি বসিয়ে ঢাকনা শক্ত করে এঁটে দিতে হবে। মাছের বাটির অর্ধেক পর্যন্ত পানি থাকতে হবে।
হাঁড়িতে ঢাকনা দিয়ে চুলায় ভাপে বসাতে হবে ১২ থেকে ১৫ মিনিট। এই ভাপেই মাছ, কাঁচা মসলা মিলে তৈরি হবে ভাপা ইলিশ। ইলিশের আকারের একটু বড় ও পদ্মার ইলিশ হলে খেতে সুস্বাদু হবে।
উপকরণ
একটু বড় আকারের ইলিশ ৮ টুকরা (পেট ও পিঠের মাছ একসঙ্গে করে কাটা), দেশি পেঁয়াজ চৌকো ছোট করে কাটা ২ কাপ, কাঁচা মরিচ (ছোট ছোট করে কাটা) ৮–৯টি, লেবুর রস ৩ টেবিল চামচ, সাদা তেল আধা কাপ, লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি
প্রথমেই মাছ পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। কাটা পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, লবণ একসঙ্গে হালকাভাবে চামচ দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। একটি পাত্রে কাটা পেঁয়াজ, কাটা কাঁচা মরিচের মধ্যে মাছগুলো সাজিয়ে তেল, লেবুর রস ও লবণ দিতে হবে। মাছ সাজানো হলে ঢাকনা দিয়ে পাত্র ঢেকে চুলায় মাঝারি আঁচে দিতে হবে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পেঁয়াজের রস, লেবুর রস ও ইলিশের গন্ধ জানান দেবে, খাবারের জন্য তৈরি লেবু ইলিশ। রান্নার জন্য যে পাত্র ব্যবহার করবেন, সেটির তলা সমান থাকতে হবে, তাহলে মসলাগুলো সমানভাবে মিশতে পারবে।