যেসব রেস্তোরাঁয় না দেখেই খেতে হয় খাবার

মজার ব্যাপার হলো, ‘ব্লিন্ডকুহ’ রেস্তোরাঁয় যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা সবাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী
ছবি: উইকিপিডিয়া কমনস

অনেক রেস্তোরাঁই এখন অন্দরসজ্জা বা খাবার পরিবেশনকে খাবারদাবারের মতোই সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। শুধু ছবি তোলার জন্য রেস্তোরাঁগুলোয় রাখা হচ্ছে আলাদা জায়গা। তবে এই ট্রেন্ডের বিপরীতে বছর ২০ ধরে আরেক ধরনের রেস্তোরাঁ চালু হয়েছে, যেখানে ছবি তোলা দূরে থাক, কী খাবার খাচ্ছেন, তা-ও দেখতে পারবেন না আপনি।

কারণ, তাদের মতো রেস্তোরাঁর মূল লক্ষ্য তো খাবার, ছবি তোলা না। বরং খাবারের স্বাদ যত ভালোভাবে নেওয়া সম্ভব, তত ভালো। সেই জায়গা থেকেই জন্ম নিয়েছে অভিনব এক ধারণা—‘ডার্ক ডাইনিং’।

‘ডার্ক ডাইনিং’ কী?

এককথায় বলতে গেলে ‘ডার্ক ডাইনিং’ হলো অন্ধকারে খাওয়াদাওয়া। যেখানে আপনি খাবার দেখতে পারবেন না, শুধু স্বাদ নিতে পারবেন। আলো নেই মানে যে আধো-আলো ছায়াতে খাওয়াদাওয়া করছেন, তা কিন্তু না। রীতিমতো চোখ বেঁধে রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করানো হবে। ওয়েটাররা আপনাকে নির্দিষ্ট টেবিলে নিয়ে যাবেন। আপনি শুধু বসে খাবার উপভোগ করবেন। পুরো সময়টায় আপনার কাছে কোনো মুঠোফোনও থাকবে না। কারণ, রেস্তোরাঁর প্রবেশমুখেই সেটি জমা দিয়ে আসতে হবে।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ধর্মযাজক ইয়র্গ স্পিলম্যানের কাছ থেকে প্রথম এ ধরনের রেস্তোরাঁর পরিকল্পনা এসেছিল। জুরিখে একবার ‘ডায়ালগ ইন দ্য ডার্ক’ নামে একটি প্রদর্শনী হয়েছিল, যেখানে যে কেউ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জীবন কেমন, কীভাবে প্রতিদিনের কাজ করেন তাঁরা, তা অনুভব করতে পারতেন। সেখান থেকেই প্রশ্ন আসে, সম্পূর্ণ অন্ধকারে কি কেউ খেতে পারে? বিজ্ঞানীদের ধারণা, যখন কারও একটি ইন্দ্রিয় কাজ করা বন্ধ করে, বাকি ইন্দ্রিয়গুলো তখন আরও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। পুরোপুরি অন্ধকারে খাওয়ার ফলে অন্য ইন্দ্রিয়গুলো (ঘ্রাণ, স্বাদ, স্পর্শ) আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ফলে খাবারের সূক্ষ্ম গন্ধ, হালকা কোনো স্বাদ ও প্রতিটি উপাদান আরও ভালোভাবে উপভোগ করা যায়।

এই প্রদর্শনীর এক বছর পর ১৯৯৯ সালে বন্ধুদের নিয়ে প্রথম ডার্ক ডাইনিং রেস্তোরাঁর সূচনা করেন ইয়র্গ স্পিলম্যান। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্লিন্ডকুহ’। যেখান থেকে পরিচালনা করা হবে সব কটি রেস্তোরাঁ। মজার ব্যাপার হলো, এই রেস্তোরাঁয় যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা সবাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। কেউ পুরোপুরি, কেউ অল্প। বর্তমানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রয়েছে এদের শাখা।

খাবার অর্ডার?

প্রশ্ন করতে পারেন, যদি না-ই দেখতে পারি, তাহলে খাবার কীভাবে অর্ডার করব? রেস্তোরাঁভেদে এর কিছুটা ভিন্নতা আছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই অতিথিরা নির্দিষ্ট কোনো পদ না জেনে শুধু কী কী আছে, তা থেকে খাবার নির্বাচন করতে পারেন। যেমন: নিরামিষ, সি-ফুড বা মাংস। আপনার যদি কোনো কিছুতে অ্যালার্জি থাকে, তবে তা-ও বলতে পারবেন। এতে অবশ্য অন্য রকম একটি রোমাঞ্চ আছে। আপনি যেমন জানতে পারছেন না, কী আছে মেন্যুতে, তেমনই যেটাই আসছে তার পুরো স্বাদ নিজের মতো গ্রহণ করতে পারছেন।

আবার কিছু কিছু রেস্তোরাঁয় মেনু থাকে, সেখান থেকে রেস্তোরাঁয় প্রবেশের আগেই খাবার বেছে নেওয়া যায়।

বর্তমানে বেশ কয়েকটি দেশে চালু আছে এই ‘ডার্ক ডাইনিং’। ইউরোপে শুরু হওয়া এই ট্রেন্ড এশিয়ায়ও পৌঁছে গেছে। সিঙ্গাপুরের পর ভারতেও চালু হয়েছে এ ধরনের রেস্তোরাঁ।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে ও বিবিসি