বিদেশি খাবার সহজ করে রাঁধেন রাবা খান
বিদেশি খাবার সহজ করে রাঁধেন রাবা খান

রাবার হাতের ভাইরাল এমাদাৎসির রেসিপি, সঙ্গে রান্না নিয়ে আলাপ

রাবা খান জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর। ফ্যাশন, মেকআপ, খাবার, ভ্রমণসহ জীবনযাপনের নানা বিষয়ে কনটেন্ট বানান। রান্না নিয়ে তৈরি তাঁর কনটেন্টগুলোর বিশেষত্ব হলো, ভিনদেশি তারকা বা অন্য কারও রেসিপি দেখে নিজের মতো করে সেটা রান্না করেন। তাঁর রান্নার খোঁজখবর জানাচ্ছেন বিপাশা রায়

রান্নাঘরে হাতের কাছে যে মসলাগুলো থাকে, সাধারণত সেগুলোই ব্যবহার করেন রাবা। মূল রেসিপি হয়তো একই থাকে, তবে ব্যবহৃত মসলাগুলো হয় সহজলভ্য।

শুধু রাঁধতেই নয়, খেতেও খুব ভালোবাসেন রাবা। আর পছন্দ করেন বাজার করতে। খুব দামি বা বিশেষ খাবার নয়, রাবার পছন্দ দেশি খাবার। নানা ধরনের শাকসবজি খান রাবা। ঢ্যাঁড়স ও ফুলকপির যেকোনো রান্নাই তাঁর পছন্দ। আর সব খাবারের মধ্যে বিশেষ পছন্দ পাঙাশ মাছ। মজা করে রাবা বলছিলেন, ‘পাঙাশ মাছ শুনলে বেশির ভাগ মানুষই নাক সিঁটকান। কিন্তু এই মাছই আমার অনেক পছন্দ।’ কথায়–কথায় বললেন, তাঁর স্বামী আরাফাত মহসীনও মাছটি পছন্দ করেন। ‘মসলা দিয়ে কষিয়ে ভুনা ভুনা পাঙাশ মাছ রান্না করি, যেটা একদম মাংসের মতো স্বাদ হয়। এর কাছে অন্য খাবারের স্বাদ একেবারেই নগণ্য,’ বলছিলেন রাবা খান। মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতেও ভালোবাসেন রাবা। কুমিল্লা–ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের ছানামুখী তাঁর বিশেষ পছন্দ। ভালোবাসেন চিনি দেওয়া খাবার।

রাবা জানালেন, সাত–আট বছর বয়স থেকেই রান্নার প্রতি তাঁর আগ্রহ। তবে বাবার শর্ত ছিল, ১০ বছর বয়সের আগে রান্নাঘরে যাওয়া যাবে না। সেই কথা মেনে দশম জন্মদিনের পর রান্নাঘরে ঢোকেন রাবা। তখন বেকিং আইটেমের প্রতিই আগ্রহ ছিল বেশি। এরপর নানা রকম পানীয় বানাতেন। জানালেন, মা রান্নায় পারদর্শী হলেও কখনো তাঁর কাছে রান্না শেখেননি। মা চাইতেন, নিজের মতো করে রান্না শিখুক রাবা। স্বাদের বিষয়েও মা নাকি বেশ খুঁতখুঁতে। যখন কোনো রেসিপি তৈরি করেন, মাকে পরখ করতে দিলে খুব কম সময়ই তিনি সন্তুষ্ট হন। মা চান, রান্নায় যেন আরও নিখুঁত হয় মেয়ে। ‘তবে বাবা একেবারেই অন্য রকম। যা–ই রান্না করি, খুব মজা করে খান বাবা,’ বলেছিলেন রাবা।

এমা দাৎসি রান্না করে ভিডিও আপলোডের পর সেটা ভাইরাল হয়েছিল

রান্নার কোনো ভ্লগ বানানোর আগে বাসায় একবার সেই রেসিপি রান্না করেন রাবা। বড় ভাই ফাহাদ খান সেটা পরখ করেন। মাত্র দুই বছরের বড় এই ভাইটার সঙ্গে রাবার সম্পর্কটা একেবারেই বন্ধুর মতো। বোনের কাজগুলোতে সব সময়ই ভাইয়ের সহযোগিতা থাকে। এই যে বর্ণিল খাবারদাবার–এর প্রচ্ছদের জন্য রান্নাবান্না করে ছবি তুললেন রাবা খান, বোনের ছায়াসঙ্গী হিসেবে সেখানেও ছিলেন ভাই ফাহাদ। রান্না করে নিয়ে আসা খাবারগুলো ফটোশুটের আগে সুন্দরভাবে প্লেটিং করে দিলেন তিনি।

শুটে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে ছিল সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া রাবা খানের রেসিপি এমা দাৎসি। বলিউড তারকা দীপিকা পাড়ুকোনের প্রিয় খাবার এমা দাৎসি, এক ইন্টারভিউ দেখে রেসিপিটি তৈরি করেন রাবা। ফেসবুকে যা ইতিমধ্যেই ভাইরাল।

হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘আমি তো ফাঁকিবাজি রান্না করি।’ কী রকম, জানতে চাইলে রাবা বলেন, ‘অন্যের রেসিপিগুলোকেই নিজের মতো করে খুব সহজ উপায়ে উপস্থাপন করার চেষ্টা করি। তাই রান্নার উপকরণ হিসেবে রান্নাঘরে আছে, এমন জিনিসই বেছে নিই। বিদেশি রান্না হলেও যে কারণে সেটার দেশি লুক তৈরি হয়। তবে টেস্ট কিন্তু কমে না।’

রাবা খানের চার রেসিপি

ঈদের দিন পানীয় হিসেবে এই রেসিপি টেবিলে রাখতে পারেন

ব্রাজিলিয়ান লেমোনেড

উপকরণ: ৩টি লেবুর রস, পানি ৩ কাপ, কনডেন্সড মিল্ক ১ কাপের ৫ ভাগের ১ ভাগ, বরফের টুকরা কয়েক কিউব, পুদিনাপাতা ৪টি।

প্রণালি: বরফের টুকরা ও পুদিনাপাতা ছাড়া সব একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিন। পরিবেশনের সময় গ্লাসে বরফের টুকরা ও পুদিনাপাতা দিয়ে দিন।

শ্রিম্প টাকোস

শ্রিম্প টাকোস

উপকরণ: রুটি ৬টি, টমেটোকুচি ৩টি, মাঝারি আকারের চিংড়ি ২৪টি, ব্রেডক্রাম্ব ৪ টেবিল চামচ, তেল ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজকুচি ২টি, ধনেপাতা, মেয়োনেজ ও লেবুর রস স্বাদমতো।

প্রণালি: আটার রুটিগুলো মাঝারি আকারে গোল করে বানিয়ে নিন। চিংড়িগুলো ব্রেডক্রাম্বে গড়িয়ে একটি পাত্রে তেল দিয়ে ভেজে নিন। রুটিগুলো গরম করুন। রুটিগুলো টাকোর মতো আকার দিয়ে মাঝে কয়েকটি করে চিংড়ি, টমেটো, পেঁয়াজ ও ধনেপাতা দিন। শেষে লেবুর রস ও মেয়োনেজ ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

ভুটানি খাবার এমা দাৎসি

এমা দাৎসি

উপকরণ: মাখন ১ টেবিল চামচ, রসুন ৩ কোয়া, কাঁচা মরিচ ৬টি, চিজ ৪ স্লাইস, পানি পরিমাণমতো।

প্রণালি: প্রথমে কাঁচা মরিচ আড়াআড়ি করে কেটে বীজ ফেলে দিন। চুলায় পাত্র গরম করে মাখন দিন। এবার রসুন ও কাঁচা মরিচ দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে নিন। পরিমাণমতো পানি দিয়ে ঢেকে কাঁচা মরিচ নরম না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এবার ঢাকনা উঠিয়ে চিজ দিয়ে একটু নেড়ে নিন। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

ক্রিমি চিকেন মাশরুম

ক্রিমি চিকেন মাশরুম

উপকরণ: মুরগির রানের মাংস ৩০০ গ্রাম, অলিভ অয়েল পরিমাণমতো, মাখন ১ টেবিল চামচ, মাশরুম ২০০ গ্রাম, শুকনা মরিচের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, ক্রিম আধা ক্যান, অরিগানো ১ টেবিল চামচ, থাইম ১ টেবিল চামচ, রোজমেরি ১ টেবিল চামচ, সাদা গোলমরিচ ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, পার্সলে সামান্য।

প্রণালি: শুকনা মরিচের গুঁড়া, গোলমরিচগুঁড়া ও পরিমাণমতো লবণ দিয়ে মাংস আধা ঘণ্টা ম্যারিনেট করে রাখুন। একটি পাত্র গরম করে অলিভ অয়েল দিয়ে মাংসের টুকরাগুলো লাল করে ভেজে তুলে রাখুন। এবার পাত্রে মাখন দিন। পেঁয়াজকুচি, মাশরুম, ক্রিম, অরিগানো, থাইম, রোজমেরি, সাদা গোলমরিচ ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে নাড়াচাড়া করে ভেজে রাখা মাংস দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করুন। পরিবেশনের সময় পার্সলে ছড়িয়ে দিন।