প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বিচ্ছেদের পর করণীয়

পাঁচ বছরের দীর্ঘ প্রেমের সম্পর্ক রাতুল ও আফসানার। মনের অমিল এবং নানান জটিলতায় ব্রেকআপ তথা প্রেমে বিচ্ছেদ ঘটে তাঁদের। নিজেদের ছোট ছোট ভুল এবং সমস্যার কারণেই ঘটল এমনটা। কিন্তু উভয়ই বিচ্ছেদ-পরবর্তী জীবন ও সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না। মন নেই কাজে এবং লেখাপড়ায়। বিরহকাতরতায় দিন কাটছে তাঁদের। রাতুল ও আফসানার মতো লাখো মানুষের জীবনে প্রেম আসে, প্রেম ভেঙেও যায়। কিন্তু কী করলে অতিদ্রুত মনের কষ্ট ভুলে দুঃখ উপশম হয়, তা অনেকেরই অজানা। তাই এক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নানান কিছুতে মেতে উঠে আরও অনেক সমস্যাই তৈরি করে ফেলি আমরা। আপনার পোস্ট ব্রেকআপ ডেইলি রুটিন এবং সেরে উঠতে করণীয় কী হতে পারে, তা জেনে নেওয়া যাক।

নিজেকে সময় দিন

মনের মানুষটির সঙ্গে নানান কিছুতে ব্যস্ত থেকে হয়তো নিজেকে সময় দেওয়া হয়ে ওঠেনি আপনার। সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর প্রথম যে কাজটি করা উচিত তা হলো, নিজেকে সময় দেওয়া। চাইলে দুঃখকাতরতার জন্য কিছু সময় রাখুন। নিজেকে নিয়ে ভাবুন, নিজের ভুলগুলোর কথা মনে করুন। সর্বোপরি নিজেকে আরও নির্ভুল ও শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করুন।

প্রতীকী ছবি

বাড়িয়ে দিন সামাজিকতা

বিচ্ছেদের পর নিজেকে একা করে ফেলবেন না। প্রিয়জনের বিরহকাতরতায় ডুবে না থেকে সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিন। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে থাকুন। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠুন। চারপাশের এই মানুষগুলোই আপনার মনের ক্ষত সারিয়ে তুলবে।

মন দিন স্বাস্থ্যসচেতনতায়

দুঃখভারাক্রান্ত মন আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে দেয়। তাই বিচ্ছেদ-পরবর্তী সময়ে সচেতনভাবেই খাবার গ্রহণে মনোযোগী হওয়া উচিত। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। দৈনন্দিন শারীরিক ব্যায়াম যদি না করেন, তবে অন্য ব্যায়াম করুন। ভালো হয় কোনো জিম বা শরীরচর্চা কেন্দ্রে ভর্তি হয়ে নিয়মিত ব্যায়াম করলে।

প্রতীকী ছবি

তার সঙ্গে যোগাযোগ থাক বন্ধ

বিচ্ছেদ যখন হয়েই গেছে, জোড়া লাগার সম্ভাবনা যখন আর নেই, তখন প্রাক্তনের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়াটা দুজনের জন্যই ভালো। কথায় বলে, ‘চোখের আড়াল তো মনের আড়াল’। সুতরাং, মোবাইল থেকে নাম্বার ডিলিট করে দেওয়া, ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেও সম্ভব হলে তাকে ব্লক করে দিন।

কানে বাজুক গান

মনের দুঃখ লাঘবে গান অনেকটা ম্যাজিকের মতোই কাজ করে। বিচ্ছেদ-পরবর্তী সময়ে গান হতে পারে আপনার দুঃখ দূর করার অনন্য ওষুধ। এই সময়গুলোয় নিয়ম করে গান শোনার চর্চা করুন। তৈরি করে নিতে পারেন ব্রেকআপ প্লে-লিস্ট। সফল মেলোডি থেকে শুরু করে হার্ড রক, সবই থাকতে পারে এই লিস্টে। রবীন্দ্রসংগীতও আপনার মনে আনতে পারে দারুণ প্রশান্তি।

প্রতীকী ছবি

বেরিয়ে পড়ুন ভ্রমণে

এত দিন হয়তো কোথাও ঘুরতে যেতে চাইতেন কিন্তু সময়ের অভাব, ব্যস্ততা বা মনের মানুষটির অনিচ্ছায় আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। সময় নষ্ট না করে ঘুরতে চলে যেতে পারেন সেই জায়গা কিংবা অন্য কোনোখানে। প্রকৃতির কাছে গেলে মনের ক্ষত সেরে ওঠে আপনাআপনি। ভ্রমণে গেলে ফিরে এসে দেখবেন কতটা হালকা লাগছে, মনে চেপে থাকা ভারী পাথর কতটা নেমে গেছে।

পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন

শৈশব-কৈশোরের বন্ধুরা একেকজন হাজারো স্মৃতির জানালা। এত দিন হয়তো নানা ব্যস্ততা এবং সঙ্গীকে সময় দেওয়ার কারণে পুরোনো এই বন্ধুদের অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ রক্ষা করা হয়ে ওঠেনি। মনকে হালকা করতে, স্মৃতির খেয়ায় ভাসতে এবং আনন্দময় সময় কাটাতে পুরোনো বন্ধুদের খুঁজে বের করুন। তাদের সঙ্গে তাল কেটে যাওয়া সম্পর্কটা আবারও ঝালিয়ে নিন। দেখবেন কতটা ভালো কাটবে আপনার সময়।

প্রতীকী ছবি

মন দিন ক্যারিয়ার ও কাজে

প্রেম সবার জীবনেই আসে, সব প্রেমের সমাপ্তি আনন্দের হয় না। তাই বলে বিচ্ছেদ ঘটলে দুঃখের সাগরে ভেসে গিয়ে দৈনন্দিন জীবনের সব রুটিন এলোমেলো করাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। নিজেকে সামলে নিয়ে ক্যারিয়ার ও নিজের কাজে মন দেওয়া অতি জরুরি। কারণ জীবন তো থেমে থাকে না কারোরই জন্য। ভালোবাসার মানুষটি নেই বলে জীবনের রেস থেকে কেন পিছিয়ে যাবেন আপনি।

পড়া-লেখায় কাটুক সময়

ক্লাস বা বইয়ের পড়ালেখার কথা কিন্তু বলছি না মোটেই! বিরহমুখর এই সময়গুলো কাটাতে চাইলে ‘আউট বই’ তথা গল্প-উপন্যাস বা কবিতা পাঠে মন দিতে পারেন। পড়ার পাশাপাশি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ম করে ডায়েরি লিখুন। ডায়েরির একটা নাম দিন, তাকেই বন্ধু বানিয়ে লিখুন। কাউকে বলতে পারছেন না যে কথাগুলো, সেই কথামালা। আপনার মনের সুস্থতায় এটা কাজ করবে টনিকের মতো।

প্রতীকী ছবি

কিছু অভ্যাস পাল্টান, কিছু যোগ করুন

বিচ্ছেদ-পরবর্তী সময়ে কিছু অভ্যাস পাল্টে ফেলা খুবই জরুরি। ঘুম থেকে দেরিতে ওঠা, সময়মতো খাবার না খাওয়া, কাজে অনিয়মিত ও অমনোযোগী থাকা। এমন কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে অতি দ্রুত এই অভ্যাসগুলো পাল্টে ফেলুন। কিছু নতুন অভ্যাস বা শখের প্রতি মন দিন। বারান্দায় গাছ লাগানো, খাঁচায় পাখি পালন, ঘরে অ্যাকুরিয়াম রাখা এবং নিয়মমাফিক দৈনন্দিন কাজগুলো সেরে ফেলা, এমন কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে উঠুন।

মাদককে না বলুন...

দুঃখ ভুলতে অনেকেই মাদকের সঙ্গে সঙ্গী পাতাতে চায়। এমনটা যদি করেন, তবে নিজের জন্য এর চেয়ে বড় সর্বনাশ আর কিছুই হতে পারে না। অ্যালকোহল, তামাক, নিকোটিন বা সিগারেটসহ সব ধরনের মাদক থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। এসব আপনাকে দুঃখ থেকে মুক্তি তো দেবেই না, বরং আবেগ কাতর করে আরও আরও দুঃখের কাছাকাছি নিয়ে যাবে। বিচ্ছেদ-পরবর্তী সময়ে মাদক আপনাকে এক ব্ল্যাকহোলে ফেলে দিতে পারে, যেখান থেকে মুক্তির সহজ কোনো পথ নেই।

প্রতীকী ছবি

ক্ষমা করুন, ভুলে যান

সবশেষে বলব, যে মানুষটি আপনাকে ছেড়ে গেছে বা আপনাদের সঙ্গে সম্পর্ক আর নেই, সেই মানুষকে ক্ষমা করুন। নিজের ভুলের কারণে যদি এমনটা ঘটে থাকে, তবে নিজেকেও ক্ষমা করে শুধরে উঠুন। কারণ বিচ্ছেদের জ্বালা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে ক্ষমার চেয়ে বড় কোনো ওষুধ নেই। যেদিন ক্ষমা করতে পারবেন, সেদিনই দেখবেন কতটা হালকা লাগছে নিজেকে, কতটা প্রফুল্ল লাগবে মন। এবং ধীরে ধীরে অতীতগুলোও ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করুন।