হঠাৎ একদিন চমক দিয়ে সন্তানের জীবনে নতুন একজন অভিভাবক হাজির করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। বরং পুরো বিষয়টা তার কাছে আগে থেকেই খোলাসা করে নিতে হবে, যাতে কোনোভাবে সে নিজেকে মূল্যহীন মনে না করে।
মা, বাবা আর সন্তানকে নিয়ে সাজানো–গোছানো একটা সংসার স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদে এলোমেলো হয়ে যায়। এ ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি গিয়ে সন্তানের ওপর পড়ে। পরে মা কিংবা বাবা আবার বিয়ে করলে নতুন করে ঝড় উঠতে পারে সন্তানের মনে। মা-বাবা কেউ একজন যদি মারা যান, অপরজন পুনরায় বিয়ে করেন, সে ক্ষেত্রেও নতুন অভিভাবককে মেনে নেওয়াটা অনেক সন্তানের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অভিভাবকদেরই যত্নবান হতে হবে, দিতে হবে চূড়ান্ত ধৈর্যশীলতার পরিচয়।
যে অভিভাবক নতুন সম্পর্কে জড়াচ্ছেন এবং যাঁর সঙ্গে সম্পর্কে জড়াচ্ছেন, তাঁদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। আগের পক্ষের সন্তানের আবেগপ্রবণ দিকটাকে সম্মান করতে হবে। তাই প্রথম দায়িত্বই হলো বিয়ের আগে নিজ সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করা। পুনরায় বিয়ের যুক্তিসংগত কারণ তার সামনে তুলে ধরা। সে না-ও মেনে নিতে পারে। সন্তানকে সহজ হওয়ার জন্য সময় দিতে হবে। সম্ভাব্য মতবিরোধ এড়াতে অনেকে সন্তানকে আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়ে দেন। এটা সম্পূর্ণ ভুল। কোনোক্রমেই তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন না। তার সঙ্গে মানসিক দূরত্বও যেন সৃষ্টি না হয়। সন্তানের বয়স উপযোগী করে তাকে এই নতুন সম্পর্ক বিষয়ে বলতে হবে। সময় নিয়ে বোঝান। হঠাৎ একদিন চমক দিয়ে তার জন্য নতুন একজন অভিভাবক হাজির করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। বরং পুরো বিষয়টা তার কাছে আগে থেকেই খোলাসা করে নিতে হবে, যাতে কোনোভাবে সে নিজেকে মূল্যহীন মনে না করে। এমনটাই বলছিলেন মনোরোগ চিকিৎসক ও ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ।
নতুন সম্পর্ক মেনে নিতে সন্তানকে বাধ্য করা যাবে না। জোরজবরদস্তি, বিরূপ মন্তব্য, রূঢ় আচরণ কিংবা কড়া শাসন পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলবে। অভিভাবক হয়ে ওঠার চেয়ে বরং বন্ধু হতে চেষ্টা করুন। তার মতামতকে গুরুত্ব দিন। নিজেদের ব্যক্তিগত সময়েও যদি তার কিছু প্রয়োজন হয়, সেটিকেই প্রাধান্য দিন। মোটকথা, নতুন দম্পতির জীবনেও যে তার গুরুত্বই সর্বাধিক, তা বুঝিয়ে দিন।
চট করে কাউকে নিজের মা কিংবা বাবার স্থানে বসানো চাট্টিখানি কথা না। কাজেই নতুন একটা মানুষকে ‘মা’ কিংবা ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করতে জোর করবেন না। সে যদি সম্বোধন ছাড়াই কথা বলে, তাতেই–বা ক্ষতি কী! আপনি আপনার দায়িত্বটুকু পালন করে যান। আপনার হৃদয়ের উষ্ণতা দিয়েই গলিয়ে দিন সংকোচের বরফ।
অভিভাবকদের কোনো আচরণেই যাতে শিশুটি পরিবারের প্রতি আস্থা না হারায়, নিজেকে বঞ্চিত মনে না করে। এমনকি নতুন সংসারে নতুন অতিথি এলেও সে যে তারই ভাই বা বোন এবং সবাইকে নিয়েই পরিবার—এই বিশ্বাসের বীজ তার মনে বুনে দিন। বিভিন্ন সময়ে সামাজিক পরিসরে অনেক নেতিবাচক কথা তাকে শুনতে হতে পারে। জীবনের কোন সময়ে, কোন কটুকথা কিংবা সমস্যার জন্য সে ব্যথিত হচ্ছে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। যে যা–ই বলুক, এটাই যে তার পরিবার এবং ভীষণ কঠিন বিপদেও এই পরিবারের মায়ার বন্ধনই তাকে জড়িয়ে রাখবে, সে যাতে উপলব্ধি করে।