বিয়ের পর ভালোবাসা প্রকাশের ধরনে পরিবর্তন আসে, আর সেটাকে অনেকে ভালোবাসা নেই বলে ধরে নেন
বিয়ের পর ভালোবাসা প্রকাশের ধরনে পরিবর্তন আসে, আর সেটাকে অনেকে ভালোবাসা নেই বলে ধরে নেন

বিয়ের পর কেন ভালোবাসা বদলে যায়

অনেকেই অভিযোগ করেন যে বিয়ের পর তাঁদের ভালোবাসার সম্পর্ক বদলে গেছে। এটা নিয়ে আবার একজন আরেকজনকে দোষারোপ করতে থাকেন। এই অভিযোগ বাড়তে থাকলে অনেক সময় বিচ্ছেদ পর্যন্ত হতে পারে। অথচ একটু খেয়াল করলে অনেক সমস্যা শুরুতেই সমাধান করে ফেলা সম্ভব।

বাটারফ্লাই ম্যাট্রিমনিয়ালের সম্পর্কবিষয়ক পরামর্শক হুরায়রা শিশির বলেন, বিয়ের পর তখনই এমন অভিযোগ আসে, যখন সঙ্গীরা একে অপরকে আগের মতো আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন না। বিয়ের আগে ভালোবাসায় যেসব অতিরিক্ত চেষ্টা দেখা যেত, সেসব আর না থাকলে অন্যজনের এমনটা মনে হতে থাকে। অনেকে ভাবেন, বিয়ে তো হয়েই গেছে, এখন তো আর মন জয়ের চেষ্টা করে লাভ নেই।

বিয়ের পর সঙ্গীর মন জয়ের চেষ্টা করে কী লাভ? এই ধারণা যেমন ভুল, তেমনি সঙ্গীর তরফ থেকে আগের মতো একই ঢঙে ভালোবাসা প্রকাশের চাহিদাও সব সময় ঠিক নয়।

বিয়ের পর ভালোবাসা প্রকাশের ধরনে পরিবর্তন আসবে, এটাই স্বাভাবিক। অনেকে এটাকে ‘আর ভালোবাসা নেই’ বলে ভুল বোঝেন। মনে রাখতে হবে, সম্পর্কের শুরুতে যখন একে অন্যকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন, তখন তাঁরা নিজেদের সেরা দিকটাই তুলে ধরেন। ফলে নানা রোমান্টিক উপায়ে ভালোবাসার প্রকাশ চোখে পড়ে। কিন্তু বিয়ের পর ভালোবাসার প্রকাশ পায় ছোট ছোট কাজে।

যেমন একসঙ্গে খাওয়ার পর বাসনগুলো ধুতে সাহায্য করা, তারে মেলে রাখা কাপড়গুলো গুছিয়ে দেওয়া অথবা ক্লান্ত হয়ে বাইরে থেকে ফেরার পর সঙ্গীর জন্য কিছু রান্না করা। আর প্রতিদিনের এসব সাধারণ কাজের মধ্যেই তখন ভালোবাসার প্রকাশ দেখা উচিত বলে মনে করেন সম্পর্কবিশেষজ্ঞরা।

ভালোবাসার পাঁচ পর্যায়

ভালোবাসার প্রথম পর্যায়ে সবকিছুই খুব রোমান্টিক লাগে

‘বিয়ের পর ভালোবাসা আগের মতো নেই’—সরাসরি এমন অভিযোগ না করে বরং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সঙ্গী কোন বিষয়গুলো আপনার জন্য করছে, সেটা খেয়াল করুন। কারণ, ভালোবাসার পাঁচটি পর্যায় আপনারও জানা থাকা জরুরি।

হুরায়রা শিশির মনে করেন, সম্পর্কের শুরুতে আপনাদের মধ্যে যেসব রোমান্টিক বিষয় ঘটবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাতে বদল আসা স্বাভাবিক।

এবার দেখে নিন, ভালোবাসার পাঁচটি ধাপ, যেসব প্রায় সব দম্পতিই পার করেন।

প্রথম ধাপ: প্রেমে পড়া। এটা সেই সময়, যখন প্রিয় মানুষের কথা ভাবলেই বুকের ভেতর সুখের প্রজাপতি উড়তে থাকে। সবকিছুই খুব রোমান্টিক লাগে। সঙ্গী একটা হাসি দিলেই একবেলার ক্ষুধা উবে যায়। মনে হয়, দিনের পর দিন দুজন হাতে হাতে রেখেই কাটিয়ে দেওয়া যাবে।

দ্বিতীয় ধাপ: বিশ্বাস তৈরি হওয়া। এই পর্যায়ে সঙ্গীর ওপর পুরোপুরি বিশ্বাস তৈরি হতে শুরু করে। আপনি বুঝতে পারেন যে তাঁকে আপনি নির্দ্বিধায় ভরসা করতে পারেন কি না। কোনো দ্বিধা থাকলে সেসব কাটিয়েই পরের ধাপে এগোতে চেষ্টা করে মানুষ।

তৃতীয় ধাপ: সম্পর্কের এই পর্যায়ে এসে ভালোবাসা নাকি মোহ, সেটা দুজনই বুঝতে পারেন। বাস্তবতা বুঝতে পারার এই ধাপেই ‘হানিমুন পিরিয়ড’ শেষ হয়ে যায়। এই সময়ে দুজনই সম্পর্ক ধরে রাখতে পরিশ্রম, ধৈর্য ও চেষ্টা করেন। সেই সঙ্গে এটাও বুঝতে পারেন যে ভালোবাসাকে স্থায়ী করতে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে।

নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে ভালোবাসা আরও শক্ত হয়

চতুর্থ ধাপ: এ সময় সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য তৈরি হতে থাকেন দুজনই। নানা রকম ভুল–বোঝাবুঝি কাটিয়ে দুজনই আরও দৃঢ়ভাবে ভালোবাসার সম্পর্কটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন।

পঞ্চম ধাপ: নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে ভালোবাসা আরও শক্ত হয়। এই ধাপে জুটি একসঙ্গে সমস্যার মোকাবিলা করে আরও পোক্ত হয়ে ওঠেন। ভালোবাসা আরও গভীরভাবে প্রতিষ্ঠা পায়। ডেটে যাওয়া থেকে যত্নের মাধ্যমে তার রূপান্তর ঘটাতে থাকে।

বিয়ে–পরবর্তী মোহ বনাম ভালোবাসা

আমরা যখন কারও প্রেমে পড়ি, তখন আবেগ, অনুভূতি, চিন্তা—সব যেন ঝড়ের গতিতে ছুটে যায়। শরীরেও নানা রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া হয়, যা আমাদের আরও বেশি করে মানুষটিকে চাইতে বাধ্য করে। অনেকেই এই অনুভূতিকে ধরে রাখতে চান, আর সে কারণেই দ্রুত সম্পর্ককে বিয়ের মাধ্যমে পাকাপোক্ত করে ফেলেন।

তাড়াহুড়া করে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত অনেক সময় ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ভালোবাসার প্রথম ধাপে থাকতেই কেউ বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলে সেটা অনেক সময় ভুল সম্পর্ক হিসেবেও ভবিষ্যতে সামনে আসতে পারে।

ভালোবাসা আর বিয়ে অবশ্যই একসঙ্গে চলতে পারে। তবে বিয়ের পরের প্রেমকে আগের প্রেমের সঙ্গে মিলিয়ে ফেললেই বিপদ বাড়ে। কারণ, বিয়ের পর বেশির ভাগ সময় আগের সেই অতিরিক্ত রোমান্টিক আকর্ষণ থাকে না।

প্রেমের প্রথম কয়েক মাসে আমরা সঙ্গীর অনেক ত্রুটিই দেখতে পাই না

বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রথম প্রেমের যে তীব্র উত্তেজনা, তার কাজই হলো দুজনকে কাছাকাছি আনা এবং সন্তান উৎপাদনের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। তাই এই রাসায়নিক অনুভূতি কয়েক মাসের বেশি স্থায়ী হওয়ার সুযোগ কম।

সত্যি বলতে, প্রেমের প্রথম কয়েক মাসে আমরা সঙ্গীর অনেক ত্রুটিই দেখতে পাই না। কিন্তু একসময় বাস্তবতা সামনে আসে, এটা খারাপ কিছু নয়। এই সময়কেও দুজন মিলে মোকাবিলা করতে পারলেই সুখী দাম্পত্য গড়ে তোলা সম্ভব। শুধু দুজনকেই মেনে নিতে হবে যে সম্পর্কের অনুভূতি সময়ের সঙ্গে বদলানোটাই স্বাভাবিক।

বিয়ে করে হানিমুন পিরিয়ড কেটে যাওয়ার পর, বাস্তবতা সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন শুধু ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখলে হয় না, বাস্তবতা মেনে দায়িত্ব নিতে হয়। চাকরি, পরিবার পরিকল্পনা, টাকাপয়সা, দায়িত্ব আর ‘সঙ্গীর যত্ন’ মিলিয়ে তখন সত্যিকারের জীবন শুরু হয়।

এ সময় আপনি সঙ্গীকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেটার ওপর ভালোবাসা যেমন নির্ভর করে, তেমন একজন আরেকজনের প্রতি যত্নবান থাকাও জরুরি। এ সময় আপনি আপনার সঙ্গীকে আগের মতো ভালোবাসবেন কি না, তা নির্ভর করে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুজন কতটা মানিয়ে নিতে পারছেন, তার ওপর।

সূত্র: ম্যারেজ ডটকম