সমাজে সবার অর্থনৈতিক অবস্থা এক নয়। বন্ধুদের মধ্যেও এমন কেউ থাকতে পারেন, যিনি অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল। এমনও হতে পারে, তিনি নিজের অসচ্ছলতার কথা বলতে চান না। ফলে সচ্ছল বন্ধুদের সঙ্গে ওঠাবসায় তাঁকে হয়তো অস্বস্তিতে পড়তে হয় মাঝেমধ্যেই। তাই বন্ধুটি অসচ্ছল কি না, তা জানা ও তাঁর সঙ্গে চলার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা সবার জন্যই ভালো।
অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল বন্ধুকে খুব দামি কোনো উপহার দেওয়ার আগে ভাবুন। আপনি হয়তো ভালো উদ্দেশ্যেই উপহারটি দিচ্ছেন, কিন্তু সেই উপহার তাঁকে তাঁর আর্থিক অক্ষমতার কথা মনে করিয়ে দিতে পারে। এতে বন্ধুটি হয়তো লজ্জা বা অপরাধবোধে ভুগতে পারেন।
ধরুন, অসচ্ছল বন্ধুকে আপনি একটা এসি কিনে দিলেন, কিন্তু মাস শেষে যে বিলের চাপ, সেটাই তাঁর জন্য হতে পারে আতঙ্কের বিষয়। আবার তিনি যখন আপনাকে উপহার দিতে চাইবেন, তখন দামি উপহার দিতে না পারলে তাঁর মধ্যে হীনম্মন্যতার সৃষ্টি হতে পারে। ফলে দূরত্ব চলে আসতে পারে আপনাদের বন্ধুত্বে।
সব সময় যে অনেক টাকা খরচ করেই আনন্দ পেতে হবে, এমন কিন্তু নয়। বন্ধু যদি তাঁর টিউশনের টাকা দিয়ে নিজের খরচ চালান, তাঁকে বেশি খরুচে কোনো ভ্রমণে যেতে চাপাচাপি করবেন না। এতে তাঁর মন খারাপ হবে, জোর করলে বরং বিব্রত হবেন।
এর চেয়ে সেই বন্ধুর সঙ্গে বিকেলে হাঁটতে বের হোন, কোনো প্রদর্শনী বা আয়োজনে যোগ দিন। বড় কোনো রেস্তোরাঁয় না গিয়ে সাধারণ কোনো জায়গায় বসুন। টংদোকানের চায়ের আড্ডায়ও কাটাতে পারেন দারুণ সময়।
বন্ধু হঠাৎ আর্থিক সমস্যায় পড়লে যতটা সম্ভব তাঁকে সাহায্য করুন। কখনো খাবারের বিল মিটিয়ে দিতে পারেন কিংবা কখনো সিনেমার টিকিট। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এটি যেন বন্ধুর হীনম্মন্যতার কারণ না হয়। আপনি তাঁকে দয়া করছেন, এমনটি মনে হলে বন্ধুত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আপনি যদি এমন কোনো চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখেন, যা আপনার বন্ধুর কাজে আসতে পারে, তাহলে তা তাঁকে পাঠাতে দ্বিধা করবেন না। আপনার এই ছোট্ট কাজ হয়তো আপনার বন্ধুর জন্য হতে পারে বড় উপকার। কোথাও ফ্রিল্যান্সিং করে আয়ের উপায় থাকলেও বন্ধুকে সুযোগ দিন।
হঠাৎ কোথাও খেতে অথবা ঘুরতে যাওয়া বা খরচসাপেক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সমস্যায় পড়তে পারেন আপনার অসচ্ছল বন্ধু। তাই যেকোনো পরিকল্পনা আগে থেকেই বন্ধুকে জানিয়ে দিন। যাতে ওই বন্ধু যেন নিজের মতো করে ভাবার সময় পান।
খেয়াল রাখতে হবে, নিজের আর্থিক অবস্থার কারণে কোনো বন্ধু যেন বিব্রত না হন। তাই টাকা নিয়ে যেন খোলামেলা আলোচনা করা যায়, নিজেদের মধ্যে তেমন পরিবেশ সৃষ্টি করুন।
যাঁর আয় কম, তাঁর সামনে নিজের ‘অতিরিক্ত খরচের কষ্ট’ নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলবেন না। কারণ, আপনার বিলাসবহুল জীবনের এসব অভিযোগ তাঁর কষ্ট বাড়াতে পারে।
‘এটা তো মাত্র ৫০০ টাকার বিষয়’ বা ‘খুব বেশি খরচ তো নয়’, এমন মন্তব্য অনেক বন্ধুকে আঘাত করতে পারে। আপনার বাজেটের তুচ্ছ খরচ হয়তো কারও বাজেটে বড় অঙ্ক। তাই সব সময় কত টাকা খরচ হবে, সেটা স্পষ্ট করে বলুন। সাময়িকভাবে যে কারও হাতে টাকা কম থাকতেই পারে। তাই বন্ধুর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার চেষ্টা করুন।
সূত্র: মিডিয়াম, ফিন্যান্সিয়াল ডায়েট ও র্যাভিস্লি