হোয়াটসঅ্যাপে ‘আলী’ লিখে সার্চ দিলাম। কী আশ্চর্য, কোনো সেভ করা নাম নেই অথচ কদিন আগে নিজে হাতেই সেভ করেছি! আবারও ‘আলী’ লিখে সার্চ করতে করতেই ভুলটা ভাঙল। আলী নয় তো—আল আমিন। কান চলচ্চিত্র উৎসবের মতো আমার মাথার ভেতরেও ‘আলী’ আর আল আমিন মিলেমিশে একাকার।

বলছি ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ মর্যাদা পাওয়া বাংলাদেশি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আলী’র নামভূমিকায় অভিনয় করা আল আমিনের কথা। উৎসবের প্রিমিয়ারের দিন সেখানে উপস্থিত অনেকেই আল আমিনকে দেখে জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘আলী?’
বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার ২৩ বছর বয়সী আল আমিনও বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমিই আলী।’
তখন তাঁরা তাঁকে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য অভিবাদন জানিয়েছেন। তা ছাড়া ‘আলী’ সিনেমার পরিচালক আদনান আল রাজীব ও সেটের সবাই শুরু থেকেই আল আমিনকে আলী বলে ডাকতেন। এতে নাকি চরিত্রে ঢোকা সহজ হয়।
মে মাসের শুরুতে ‘আলী’র পরিচালক আদনান আল রাজীবের মাধ্যমে আল আমিন জানতে পারেন, তাঁদের চলচ্চিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে নির্বাচিত হয়েছে। তিনি অংশ নেবেন প্রিমিয়ারে।
সে সময় আল আমিন বাংলাদেশের ফ্যাশন ডিজাইনারদের উদ্দেশে ফেসবুকে পোস্ট দেন, পোশাক বানানোর বা কাস্টমাইজড করে নেওয়ার জন্য। দু–একজন সাড়া দিয়েছিলেন বটে।
আল আমিন বললেন, ‘তাঁদের কথা বলতে চাই না। একজন কান চলচ্চিত্র উৎসবের পোশাক বানানোর জন্য অনেক টাকা চেয়েছিলেন। আরেকজন ঠিকমতো কথাও বলেননি।’
উপায়ান্তর না পেয়ে আল আমিন ভাবেন, তিনি যে পোশাকটি পরবেন, সেখানে তাঁর ‘পার্সোনাল টাচ’ থাকবে। তাঁর একটা স্যুট ছিল। পুরোনো সেই স্যুট বের করে সেখানে আঁকতে শুরু করেন। প্যারিস থেকে আল আমিন বললেন, ‘স্যুটটি খুবই অল্প টাকায় কেনা। ভাবলাম, আঁকতে গিয়ে যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে না হয় আরেকটা স্যুট কিনব। এরপর আঁকা শেষে মনে হলো, বাহ্, ভালোই তো হয়েছে!’
কাপড়ে পেইন্ট করার অভিজ্ঞতা ছিল?
আল আমিন বললেন, ‘নিজের দু-একটা টি-শার্টে টুকটাক এঁকেছিলাম। অভিজ্ঞতা এটুকুই।’
কান চলচ্চিত্র উৎসবে যে স্যুট পরেছেন, সেটার ওপর আল আমিন এঁকেছেন বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। ‘আলী’র পোস্টারেও দেখা যায় শাপলা। কেননা আলী চরিত্রটির সঙ্গে গভীর যোগ আছে শাপলার। তাই কান চলচ্চিত্র উৎসবে আলীর পরনের স্যুটের শাপলা যেমন আলীর প্রতিনিধিত্ব করেছে, তেমনি বাংলাদেশেরও। এই স্যুট আল আমিন পরেছেন উৎসবের শেষ দিন অর্থাৎ পুরস্কার ঘোষণার দিন।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে আপনার স্যুটের শাপলা দেখে লোকে কী বলল?
শুনে আল আমিন বললেন, ‘জিজ্ঞেস করেছে, কে এঁকেছে! যখন বলেছি, আমি; তখন ওরা বলেছে, তুমি ভালো অ্যাক্টরের পাশাপাশি দুর্দান্ত পেইন্টারও বটে! শুনে আমি হাসি।’
স্যুটে আঁকা শেষ করে আল আমিনের মনে হয়েছিল, একটা ডিজাইনার কালেকশন না নিলেই নয়! তখন তিনি জুরহেমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অনলাইনে তাঁদের পেজে নক করেন। এরপর জুরহেমের ম্যানেজার ফোন করেন আল আমিনকে। জানান, তাঁরা তাঁর পোশাক স্পনসর করতে চান।
এরপর আল আমিন বাংলাদেশি লাক্সারি ফ্যাশন ব্র্যান্ড জুরহেমের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান ফ্যাশন ডিজাইনার মেহরুজ মুনিরকে একটি পোশাকের ছবি পাঠান। সেটি ছিল ‘দ্য কিসিং বুথ’ সিনেমার অভিনেতা জ্যাকব এলর্ডির পরা একটি সেমি-ফরমাল পোশাক। সেটির অনুপ্রেরণায় আল আমিন একটি পোশাক তৈরি করে দিতে বলেন।
এর মধ্যেই আল আমিন জানতে পারেন, এবার কান চলচ্চিত্র উৎসবের লালগালিচায় যেতে হবে ফরমাল পোশাকে, কালো টাক্সিডো আর বো টাই পরতে হবে।
আল আমিন বললেন, ‘মেহরুজ মুনির ভাই আমার জন্য দারুণ একটা ফরমাল পোশাক বানালেন। বাঁ পাশে বুকের ওপরে ত্রিমাত্রিক মোটিফে রাখলেন একটা শাপলা। সঙ্গে সঙ্গে সেই পোশাকের ছবি আমাদের পরিচালক আদনান ভাই আর শিল্পনির্দেশক শিহাব ভাইকে পাঠালাম। তাঁরাও খুব পছন্দ করলেন। এই পোশাকটাই “আলী”র প্রিমিয়ারে পরেছি।’
আল আমিন যেদিন কানের লালগালিচায় পা রাখলেন, সেদিন পরেছিলেন তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনার বিশ্বজিৎ মজুমদারের নকশা করা কালো শার্ট-প্যান্ট, ধূসররঙা ভেস্ট ও কালো লং কোট।
এ ছাড়া আল আমিনের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবও তাঁর কানযাত্রা উপলক্ষে পোশাক উপহার দিয়েছেন। সেসবও পরেছেন বিভিন্ন সময়ে। আর ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে তো পোশাক নিয়েছেনই।