ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের ২৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. সাজেদুর রহমান। বর্তমানে তিনি স্টার টেক লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে কর্মরত। তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের অভিজ্ঞতা কেমন?

উচ্চমাধ্যমিকের পর ভেবেচিন্তেই এগোচ্ছিলাম। কারণ, সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করা তো সহজ কথা নয়; বরং বলা যায় এটাই শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তগুলোর একটি। আমি সব সময় এমন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চেয়েছিলাম, যেখানে ক্লাসরুমের পড়াশোনার মান ভালো হবে, আবার বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগও পাব। সব খোঁজখবর নিয়ে ইউএপির কার্যক্রমই আমার ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়েছে। কারণ, এখানকার শিক্ষার পরিবেশ ও পাঠ্যসূচি শুধু ডিগ্রি নয়, চিন্তাশীল মানুষ গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখন পেছনে ফিরে তাকালে মনে হয়, এটাই ছিল জীবনের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ।
ইউএপির শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানেই সীমাবদ্ধ নয়। সমস্যা সমাধানের মানসিকতা, দলগত কাজ, নেতৃত্ব এবং চ্যালেঞ্জকে ভয় না করা—জীবনঘনিষ্ঠ সব দক্ষতাই শিখেছি এখানে। ওই ভিত্তিই পেশাজীবনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
বর্তমানে দেশের অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান স্টার টেক লিমিটেডের একজন পরিচালক হিসেবে কাজ করছি। কেবল অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা নয়, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ও পণ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করাও আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। প্রতিদিন হাজারো গ্রাহক আমাদের ওয়েবসাইট ব্যবহার করেন। তাদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করাই আমার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ইউএপিতে শেখা ধৈর্য, নেতৃত্ব আর সমস্যা সমাধানের দক্ষতাই আমাকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন দেখতাম। ইচ্ছা ছিল, এ খাতে একদিন পরিবর্তন আনব। সে জন্যই ভর্তি হই সিএসই বিভাগে। দক্ষ সফটওয়্যার প্রকৌশলী হওয়াই ছিল লক্ষ্য। ভালো চাকরি করব, পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করব—এই লক্ষ্যেই পরিশ্রম করেছি। তবে একটি উপলব্ধি বিশ্ববিদ্যালয়জীবনেই হয়েছে। শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়, সমাজের জন্যও কিছু করা প্রয়োজন। তাই ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি দেশের ই-কমার্স খাতকে উন্নত করা, তরুণদের জন্য সুযোগ তৈরি করা এবং বিশ্বাসযোগ্য অনলাইন কেনাকাটার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আমার জীবনের বড় অনুপ্রেরণা। খেয়াল করেছি, তাঁরা কখনোই মুখস্থ পড়ার ওপর জোর দেননি। শিখিয়েছেন প্রশ্ন করে কীভাবে খুঁজতে হয় উত্তর। তাঁদের এ ধরনের প্রচেষ্টা শিক্ষার্থীদের ভাবনার জগৎকে প্রসারিত করেছে। বিশেষ করে সায়েদ স্যার, আশিস স্যার, আবেদীন স্যার, মামুন স্যার, অনিল স্যার এবং রাশেদ স্যারের কথা বলতে চাই। তাঁরা সব সময় প্রোগ্রামিং শেখার গুরুত্ব বোঝাতেন। দেখাতেন, বাস্তব জীবনে এর প্রয়োগও। শ্রেণিকক্ষের বাইরেও সময় বের করে নানা রকম পরামর্শ দিতেন। এ সবকিছুই আমার পেশাগত জীবনে অমূল্য ভূমিকা রেখেছে।
আমি স্নাতক শেষ করি ২০১৩ সালে; কিন্তু এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার কথা মনে পড়ে। তখন প্রোগ্রামিং ক্লাবগুলোর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকার সুযোগ হয়েছে। জোর দিয়েই বলি, জীবনের অন্যতম বড় শেখার জায়গা ছিল ক্লাব ও এই আয়োজনগুলো। এসব প্রতিযোগিতা আমাকে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব, দলগত কাজ, ধৈর্য, আত্মবিশ্বাস এবং ব্যবস্থাপনার কৌশল শিখিয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাগুলো আজও আমার কাজের জায়গায় সমানভাবে কার্যকর। বর্তমান শিক্ষার্থীদের এ সুযোগগুলো লুফে নেওয়া উচিত।
ক্যারিয়ার গড়তে নতুনদের সঠিক পরামর্শ দেওয়া আমাদের দায়িত্ব বলেই মনে করি। আমি নিজেও বড় ভাইদের সাহায্য পেয়েছি। তাই কোনো জুনিয়র যোগাযোগ করলে যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করি। ওদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে পারলে স্বস্তি পাই।
আমি মনে করি, ইউএপির অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক আমাদের জন্য একটি অসাধারণ সুযোগ। একে অপরকে সহযোগিতা করলে শুধু জুনিয়র নয়; বরং সবার জন্যই এটি একটি মূল্যবান প্ল্যাটফর্ম হতে পারে। আমার স্বপ্ন, একদিন এই অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের প্রযুক্তি ও শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি অনন্য শক্তি হয়ে উঠবে।
ইউএপি শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়েছে তা নয়; বরং আমার জীবন, ক্যারিয়ার ও দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে বড় ভূমিকা রেখেছে। আজ যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, তার পেছনে ইউএপির অবদান অপরিসীম।