আমরা এখন কমবেশি সবাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করি। কেউ দিনে কয়েকবার নিজের মনের কথা পোস্ট করি, কেউ আবার মাসে একবারও কিছু লেখি না। যাঁরা ভেতরে ভেতরে শান্ত আর আত্মবিশ্বাসী, তাঁরা কিন্তু সবকিছু অনলাইনে দেখানোর দরকার মনে করেন না। তাঁরা জানেন, সব কথা সবার জন্য নয়। আপনি যদি নিচের ১০টি বিষয় অনলাইনে পোস্ট না করেন, তাহলে বুঝবেন, আপনি যথেষ্ট পরিণত, সংযত ও আত্মনিয়ন্ত্রিত।
১. সম্পর্কের ঝামেলা
সঙ্গীর সঙ্গে মনোমালিন্য হলে অনেকেই ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট দেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কিন্তু এতে সমস্যার সমাধান হয় না, বরং মন্তব্যে মন্তব্যে বাস্তব জীবনে নেতিবাচক নাটক শুরু হয়। বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে, অফলাইনেই কথা বলা, শান্তভাবে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলা।
২. সাফল্য
কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি পেয়েছেন, খুবই ভালো কথা। অভিনন্দন। কিন্তু প্রতিবারই কি পোস্ট করতে হবে? বেশি শেয়ার করলে অনেক সময় অন্যদের কাছে সেটা বাড়াবাড়ি মনে হয়। কারণ, সবাই আপনার মতো বছর বছর পদোন্নতি না–ও পেতে পারেন। বুদ্ধিমানের কাজ হবে, বেশির ভাগ সময় কাছের মানুষদের সঙ্গেই আনন্দটা ভাগ করে নেওয়া, অনলাইনে নয়।
৩. জিম সেলফি
ব্যায়াম করা দারুণ অভ্যাস। কিন্তু প্রতিদিন সেলফি পোস্ট করার দরকার নেই। জিমে গিয়ে প্রতিদিন সেলফি তুলতেই পারেন। কিন্তু সেটা থাকুক নিজের জন্যই। অগ্রগতি বুঝতে পারবেন।
৪. ইঙ্গিতপূর্ণ উক্তি
ধরুন ফেসবুক লিখলেন, ‘তুমি যে পেছনে পেছনে আমার নামে আজেবাজে কথা বলো, এসব কিন্তু আমার কানে আসে’—এ রকম কিছু একটা লিখে আদতে কাকে কী বোঝাচ্ছেন, তা অনেকেরই বোধগম্য হবে না। আর এতে আপনারও কোনো লাভ হবে, বরং অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য ও মন্তব্যের উত্তর দিতে দিতে আপনার সময় নষ্ট হবে। নষ্ট হতে পারে সম্পর্কও। তার চেয়ে কিছু বলার থাকলে সরাসরি বলুন, নয়তো চুপ থাকুন—দুটোই সম্মানজনক।
৫. ত্বকের যত্ন
সিরাম, ক্রিম, মাস্ক—সবই ভালো, কিন্তু প্রতি রাতে সেসব মেখে ভিডিও পোস্ট না করাই ভালো। ত্বকের যত্ন নিজের জন্য, অন্যের জন্য নয়। বুদ্ধিমানের কাজ হবে, মাঝেমধ্যে ভালো টিপস শেয়ার করা, প্রতিদিন নয়।
৬. ‘টাকা শেষ’ ধরনের পোস্ট
মাসের শেষে সবারই টাকার চিন্তা থাকে। কিন্তু ‘বেতনের টাকা শেষ/পকেট ফাঁকা/মাসের বাকি দিনগুলো চলব কীভাবে’—এ ধরনের পোস্টে আপনাকে হালকাভাবে নেবে অনেকেই। বরং বাস্তব জীবনে বাজেট মেনে চলুন। অভিযোগ নয়, পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাধান আনুন।
৭. সাবেক সম্পর্কের কথা
আপনার প্রাক্তন নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছেন? কষ্ট লাগতে পারে, কিন্তু ‘কর্মফল হাতেনাতে মেলে’–জাতীয় পোস্ট না দেওয়াই ভালো। এতে বোঝা যায়, আপনি এখনো অতীত ভুলতে পারেননি। বুদ্ধিমানের কাজ হবে, চুপ থাকা। নীরবতাই সবচেয়ে বড় জবাব।
৮. ‘আজ খুব টেনশনে আছি’
মন খারাপ দিয়ে দিন শুরু হতেই পারে। কিন্তু প্রতিদিনের দুঃখ অনলাইনে সবাইকে জানানো ঠিক নয়। এতে মন আরও ভারী হয়, আর অন্যের ওপরও প্রভাব পড়ে। বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে, বন্ধুর সঙ্গে কথা বলা, লিখে ফেলা বা হাঁটতে যাওয়া।
৯. প্রতিটি খাবারের ছবি
খাবার ভালো লাগলে ছবি তুলতেই পারেন। কিন্তু প্রতিটি খাবারের ছবিই যদি বারবার শেয়ার করেন, তাহলে অনেকেই আর তাতে মনোযোগ দেবে না। কখনো কখনো শুধু খাবার উপভোগ করা যথেষ্ট। ফোনটা পাশে রাখুন, মন দিন খাবারের স্বাদে।
১০. ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
বড় স্বপ্ন দেখা ভালো, কিন্তু কাজ শুরুর আগেই জানিয়ে ফেললে উত্তেজনা কমে যায়। বেশি জানালে মনে হয়, ‘হয়ে গেছে’, অথচ কাজ তখনো ঢের বাকি। নীরবে কাজ করুন, সফলতা নিজেই আওয়াজ তুলবে।
সূত্র: মিডিয়াম