বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদ ফেরদৌসী আক্তার মারিয়া
বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদ ফেরদৌসী আক্তার মারিয়া

পাওয়ারম্যান প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এবার মালয়েশিয়া যাচ্ছেন মারিয়া

মাইলের পর মাইল দৌড় ও সাইক্লিংয়ের মতো রোমাঞ্চকর কর্মকাণ্ড নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘পাওয়ারম্যান’। মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রাজায়ায় ২০ থেকে ২২ জুন বসছে ‘পাওয়ারম্যান মালয়েশিয়া’র ২০তম আসর। এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে এবার অংশ নিচ্ছেন ফেরদৌসী আক্তার মারিয়া। প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে গত বছর ‘আয়রনম্যান ৭০.৩ ’-এ সাফল্য পান এই ক্রীড়াবিদ।

পাওয়ারম্যানের ক্ল্যাসিক শাখায় অংশ নেবেন মারিয়া। এই শাখার ক্ল্যাসিক ওপেন (১৮ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের) বিভাগে দুই দফায় ২০ কিলোমিটার দৌড়ানোর পাশাপাশি তাঁকে ৬০ কিলোমিটার সাইকেল চালাতে হবে। তাঁর পর্বটি অনুষ্ঠিত হবে ২২ জুন।

মারিয়ার এই পাওয়ারম্যান যাত্রায় সহায়তা করছে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্র্যান্ড সেনোরা। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের প্রথম আলো কার্যালয়ে সেনোরার পক্ষ থেকে তাঁর হাতে প্রতীকী চেক তুলে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক, স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক তেহসিনা খানম, ব্র্যান্ড ব্যবস্থাপক তানজিম ইসলাম, বিপণন বিভাগের নির্বাহী অনিক প্রপাত প্রমুখ।

মারিয়ার পাওয়ারম্যান যাত্রায় সহায়তা করছে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্র্যান্ড সেনোরা

অনুষ্ঠানে আনিসুল হক বলেন, ‘প্রথম আলো সব সময় উদ্যমী তরুণদের পাশে থাকে, মেয়েদের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখার চেষ্টা করে। মারিয়ার লড়াই একজন প্রান্তিক মানুষের লড়াই, একজন নারীর লড়াই—তাই তার সঙ্গেও আমরা আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে মিলে প্রথম আলো শুরু থেকেই নানা ধরনের আয়োজন করে আসছে। মারিয়ার এ যাত্রায় পাশে দাঁড়ানোয় সেনোরাকে ধন্যবাদ।’

স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক তেহসিনা খানম বলেন, সেনোরা সব সময় ট্যাবু ভাঙার জন্য কাজ করেছে—সেটা হোক পিরিয়ডবিষয়ক ট্যাবু, বাবার সঙ্গে মেয়ের কথা বলার ট্যাবু। মারিয়ার সঙ্গে সেনোরার এই যাত্রাও একটি ট্যাবু ভাঙার প্রয়াস।’

বাংলাদেশি নারী ট্রায়াথলেট ফেরদৌসী আক্তার মারিয়া

রংপুরের পীরগঞ্জের এক প্রত্যন্ত গ্রামে মারিয়ার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাবা মো. দবির উদ্দীনের পেশা কৃষিকাজ। মা রেহানা বেগম গৃহিণী। ৪ বোন ১ ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় মারিয়া; ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি তাঁর অদম্য আগ্রহ। সেই আগ্রহ থেকেই বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে ভর্তির সুযোগ পান। সেখানে মারিয়ার বিষয় ছিল ফুটবল। প্রিমিয়ার লিগ পর্যায়েও খেলেছেন বেশ কয়েকবার। ফেসবুক ও ইউটিউবে বাংলাদেশের আয়রনম্যান সামছুজ্জামান আরাফাত ও আরিফুর রহমানের ভিডিও দেখে এক দিনের কঠিনতম এই ট্রায়াথলনের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। ২০২৪ সালে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু ম্যারাথনে অর্ধদূরত্বে (২১.১ কিলোমিটার) অংশ নেন ও সফল হন। এরপর ৯-১০টা হাফ ম্যারাথনে অংশ নেন। এর মধ্যে ৭-৮টায় প্রথম তিনের মধ্যে ছিলেন। গত ১২ অক্টোবর মালয়েশিয়ার লাংকাউইতে অনুষ্ঠিত আয়রনম্যান ৭০.৩ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সফল হন মারিয়া। এই ট্রায়াথলনে তিনি ৮ ঘণ্টা ১৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে সম্পন্ন করেছেন ১.৯ কিলোমিটার সাঁতার, ৯০ কিলোমিটার সাইক্লিং ও ২১.১ কিলোমিটার দৌড়। এর মধ্য দিয়েই স্পেনে আসছে নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় আয়রনম্যান ৭০.৩ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করেন।

সেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতেই এখন প্রস্তুত হচ্ছেন মারিয়া। প্রথম আলো ও সেনোরাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথম আলোর সব সময় আমার পাশে আছে। এর আগে আয়রনম্যানের বিশেষ সাইকেলের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এই যাত্রায় সেনোরা পাশে থাকায় আমার কাজটা সহজ হলো। আশা করি, পরবর্তী প্রতিযোগিতাগুলোতেও এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’