উল্টো দিকে হাঁটার যে এত উপকার, জানতেন?

প্যাট্রিক হারমন নামে এক মার্কিনি ১৯১৫ সালে উল্টো দিকে হেঁটে হেঁটে সান ফ্রান্সিসকো থেকে নিউইয়র্ক পৌঁছেছিলেন। মজা করে খেলাচ্ছলে কাজটা করেছিলেন তিনি। কিন্তু আধুনিক গবেষণা বলছে, বিচিত্র এই হণ্টনের নানা স্বাস্থ্যকর দিকও আছে।

ইংরেজিতে উল্টো দিকে হাঁটাকে বলে ‘রেট্রো ওয়াকিং’
ছবি: পেক্সেলস

প্রতিদিন হাঁটার উপকারিতা আমরা সবাই জানি। কিন্তু সামনের বদলে যদি উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করেন, শরীর ও মন—দুটিতেই প্রভাব পড়বে।
ইংরেজিতে উল্টো দিকে হাঁটাকে বলে ‘রেট্রো ওয়াকিং’। এতে পেশি শক্ত হয়। স্মৃতিশক্তি বাড়ে। শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতেও এটি সহায়ক।
কিন্তু রাস্তাঘাটে তো আর উল্টো হাঁটা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের রাস্তায় তো নয়ই! শরীর ভালো রাখতে অনেকে নাকি ট্রেডমিলে উল্টো দিকে হাঁটেন। আবার লেখার শুরুতে যেই প্যাট্রিক হারমনের কথা বলছিলাম, তিনি তো এক কাণ্ডই করেছিলেন। বুকের সঙ্গে কায়দা করে গাড়িতে ব্যবহৃত ছোট ছোট আয়না বেঁধে নিয়েছিলেন। যে আয়নায় পেছন দিকটা দেখতে পাওয়া যেত। আয়না দেখে দেখেই ২৯০ দিন হেঁটে প্রায় ৬ হাজার ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিলেন প্যাট্রিক!

ও রকম পাগলামি করার পরামর্শ নিশ্চয়ই দিচ্ছি না। কিন্তু আপাতত উল্টো হাঁটার উপকারিতাগুলো জেনে রাখতেই পারেন।

পেশি ও ভারসাম্যের জন্য ভালো

ইউসিএলএ হেলথের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উল্টো দিকে হাঁটার সময় শরীরের বিভিন্ন পেশি ভিন্নভাবে কাজ করে। সাধারণভাবে হাঁটার সময় যেসব পেশি কম ব্যবহার হয়, উল্টো দিকে হাঁটলে সেগুলোও সক্রিয় হয়ে ওঠে।
পায়ের বিভিন্ন পেশি, যেমন হ্যামস্ট্রিং, কোয়াড্রিসেপস (থাই) এবং কাফের (হাঁটুর নিচে, পেছনের দিকের অংশ) ওপর বেশ ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। হাঁটুর ওপর চাপও কম পড়ে, কারণ পায়ের ভর অন্যভাবে ভাগ হয়।
বয়স বাড়লে ভারসাম্যের সমস্যা দেখা দেয়। মাঝেমধ্যে উল্টো দিকে হাঁটার ব্যায়াম এই ভারসাম্য উন্নত করতেও সাহায্য করতে পারে।

উল্টো দিকে হাঁটার সময় মস্তিষ্ককে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হয়।

মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব

আমরা যখন সামনে হাঁটি, সেটা শরীরের জন্য অনেকটাই স্বাভাবিক। কিন্তু উল্টো দিকে হাঁটার সময় মস্তিষ্ককে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হয়। কারণ, প্রতিটি পদক্ষেপে তখন ভাবতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া লস অ্যাঞ্জেলেসের গবেষণা বলছে, মস্তিষ্কের ‘প্রিফ্রন্টাল করটেক্স’ নামের যে অংশটি চিন্তা, পরিকল্পনা আর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজ করে, সেটি উল্টো দিকে হাঁটলে আরও সক্রিয় হয়।
মজার বিষয় হলো, এক পরীক্ষায় দেখা গেছে—যারা শুধু কল্পনায় উল্টো দিকে হাঁটার কথা ভাবছিলেন, তাঁদের মস্তিষ্কেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তার মানে ‘রেট্রো ওয়াকিং’ শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্কের জন্যও ভালো ব্যায়াম।

পিঠের ব্যথা কমায়

গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে চার দিন ১০ মিনিট করে উল্টো দিকে হাঁটলে কোমরের ব্যথা কমতে পারে। কারণ, উল্টো হাঁটার সময় মেরুদণ্ডের ওপর চাপ কমে এবং কোমরের চারপাশের পেশিগুলো ভালোভাবে নড়ে।

ওজন কমাতে সহায়ক

বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, উল্টো দিকে হাঁটলে সাধারণ হাঁটার তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি ক্যালরি বার্ন হতে পারে। যেহেতু পেশিগুলোকে ভিন্নভাবে ব্যবহার করতে হয়, তাই শরীরকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। যাদের নিয়মিত ব্যায়াম করার সময় নেই, তাদের জন্য এটি ভালো বিকল্প হতে পারে।

কীভাবে শুরু করবেন

যেহেতু উল্টো হাঁটার সময় দেখা যায় না, আবার পেছন দিকে তাকিয়ে হাঁটাও ঠিক নয়, তাই শুরুটা নিরাপদভাবে করা জরুরি।
প্রথমে ঘরের ভেতর, খালি জায়গায়, ধীরে ধীরে চর্চা করুন। ট্রেডমিলে গতি কমিয়ে হাঁটতে পারলে সেটাই নিরাপদ। একা না হেঁটে প্রথমে কাউকে সঙ্গে নিয়ে চর্চা করতে পারেন। প্রতিদিন মাত্র ১০-১৫ মিনিটই যথেষ্ট।

সতর্কতা

উল্টো দিকে হাঁটলে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, তাই অসমতল জায়গা বা ভিড় এড়িয়ে চলুন। যাঁদের হাঁটুর ব্যথা বা ভারসাম্যের সমস্যা আছে, তাঁরা শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। প্রবীণদের বেলায় অতিরিক্ত সতর্কতা প্রয়োজন। এই ব্যায়ামের সময় অবশ্যই কাউকে সঙ্গে রাখবেন।

সূত্র: বিবিসি, গার্ডিয়ান ও ইউসিএলএ হেলথ