বেঁচে থাকার অক্ষমতাকে সক্ষমতাদানের ক্ষেত্রে কার্ল মার্ক্সের ‘এলিয়েশন’ ভাবনা বেশ কার্যকর। যেমন অসুস্থ পরিবেশে বা সমাজে সুস্থ থাকাটাই অস্বাভাবিকতা। ফলে সমাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন ভাবার চিন্তা যদি ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়, তবে অবশ্যই হয়ে উঠবে সেটি স্বাতন্ত্র্যবাদী সত্তার কারণে। ধরুন, আপনি সব দিক থেকেই নিজেকে মিসফিট ভাবছেন। সমাজ-পরিবারের সঙ্গে আপনার সম্পর্কটি আলগা। এমনকি রাষ্ট্রের সঙ্গেও। পেশার সঙ্গেও। সবখানেই মিসফিট ভাবছেন। কেন ভাবছেন? প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছেন না। এই হচ্ছে আপনার অক্ষমতা, এই তো ভাবছেন! কিন্তু নিজের ব্যক্তিসত্তাকে সামাজিক সত্তায় রিলেট করুন, এবার দেখুন, শুধু আপনি না, সবাই এই অসুস্থ দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। ফলে আপনি কাদের কাছে নিজেকে মিসফিট ভাবছেন, যেখানে তাঁরা বরং আপনার চেয়ে কম সংবেদনশীল বলেই, কম সুস্থ বলেই এ গোটা ব্যবস্থাকে সুস্থ ভেবে দিব্যি কাজ করে যাচ্ছেন—তাঁদের কাছে? মানে সামাজিক-রাষ্ট্রিক সত্তার সঙ্গে ব্যক্তিক সত্তাকে রিলেট করে দেখলে ‘অক্ষমতা’কে ‘সক্ষমতার চরিত্র’ দেওয়া যায়। এলিয়েনেশন ব্যাপারটা তাই।
আপনি যে রাষ্ট্রে বা সমাজেই জন্মান বা বসবাস করেন না কেন, আপনার জন্য কিছু সিলেবাস তৈরি হয়ে আছে। যেমন রাষ্ট্র চায় তার মতো সুনাগরিক। সে তার মতোই আপনাকে গড়ে তুলতে চাইবে। তার বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে একটি অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও নিশ্চয়ই সিলেবাস আছে। সেই সিলেবাসেই পড়তে হবে আপনাকে। পেশার জগতে প্রতিষ্ঠানে, প্রতিষ্ঠানগুলোর সিলেবাসেই আপনাকে কাজ করতে হবে। এভাবে এবার মেলাতে থাকুন, দিনের পর দিন প্রতিদিন কীভাবে প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রের, সম্প্রদায়ের ইচ্ছায় আপনি চালিত হচ্ছেন। সবশেষে দেখবেন, আপনার ইচ্ছায় হয়তো চলছেন মাত্র দুই ভাগ। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা তো আপনার শরীর আর আপনার শরীর রাখেনি। কিনে নিয়েছে। ধরুন, অসুস্থ হলেন। হাসপাতাল-চিকিৎসা। সেখানে বহুজাতিক পুঁজির দৌরাত্ম্যে স্পেশালাইজড হাসপাতাল, বিভিন্ন প্রেসক্রিপশন আর ওষুধের খপ্পরে পড়ে মারা যাওয়ারই উপক্রম। ভালো ওষুধই যে খাচ্ছেন, এর নিশ্চয়তা আছে কোনো? তার মানে স্বেচ্ছাধীন অবস্থায় কতটুকুই আর বাঁচতে পারি আমরা! তাহলে কীভাবে নিজের শরীরকে মেরে ফেলার কথা ভাবছেন?
আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য প্রচলিত ও জনপ্রিয় একটি কথা চালু আছে। কথাটি এমন, আত্মহত্যা হচ্ছে সাময়িক সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান। আলব্যের কামুর কাছে আত্মহত্যা করার মানে হলো স্বাধীনতাকে প্রত্যাখ্যান করা।
আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য প্রচলিত ও জনপ্রিয় একটি কথা চালু আছে। কথাটি এমন, আত্মহত্যা হচ্ছে সাময়িক সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান। কিন্তু কথাটি খুবই ক্লিশে। আত্মহত্যা এড়াতে হলে দার্শনিকই হতে হবে বিষয়টি এমন নয়, বলেছেন স্লাভয় জিজেক। তিনি বলছেন, জীবনকে বুঝতে পারাটাই হচ্ছে আসল। মানুষের জীবনমাত্রই দার্শনিকতা। যে মানুষটি নিরক্ষর, তারও আকাশ আছে। সুরের সঙ্গে সুর জোড়া লাগান। সমুদ্রের পানিতে হাত ডুবিয়ে বলতে পারেন কখন জোয়ার বা ভাটা আসবে। একেবারে প্রফেশনাল আবহাওয়াবিদের মতন। আর জীবন ও জগৎকে ব্যাখ্যা করাই হচ্ছে দর্শনের কাজ। ব্যাখ্যাটা করবে একেক দর্শন একেক রকমভাবে। যেমন উদ্ভটত্ববাদী দর্শন। ফরাসি-আলজেরীয় উদ্ভটত্ববাদী দার্শনিক আলব্যের কামু, ঈশ্বরহীন মহাবিশ্বে আত্মহত্যা একটি প্রয়োজনীয় কাজ হলেও সেটা করা যাবে না—এমন তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করাকেই উদ্ভটত্ববাদের লক্ষ্য হিসেবে দেখেছেন। কামুর কাছে আত্মহত্যা করার মানে হলো স্বাধীনতাকে প্রত্যাখ্যান করা। তাঁর মতে, বাস্তবতার উদ্ভটত্ব বোঝার পর তার থেকে কুহকে বা ধর্মে বা মৃত্যুতে পালিয়ে যাওয়াই একমাত্র সমাধান নয়। জীবনের উদ্ভট অর্থহীনতা বোঝার পর পালিয়ে না গিয়ে তা থেকে উদ্দীপনা নিয়ে জীবনকে আলিঙ্গন করতে হবে।
‘দ্য মিথ অব সিসিফাস’-এর শুরুতেই কামু বলেছেন, দুনিয়ায় একটাই প্রকৃত গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক সমস্যা আছে, আর সেটা হলো আত্মহত্যা। জীবন বেঁচে থাকার যোগ্য কি না, সেই বিচারই দর্শনের মূল প্রশ্ন অথবা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্তর। জীবনের মানে খুঁজতে গিয়ে বা অর্থ আরোপ করতে গিয়ে, কী আশ্চর্য, মানুষ কখনো মৃত্যুকে বেছে নেয়। নীতি, ধর্ম, আদর্শ যা কিছু অবলম্বন করে ব্যক্তি বা সমষ্টি বাঁচতে চায়, সেই সব অবলম্বনদেরই বাঁচাতে গিয়ে তারা শেষ পর্যন্ত জড়িয়ে পড়ে হত্যা বা আত্মহত্যায়। এর সমান্তরালে অনেক অনেক মানুষ জীবনের (আপাত) অর্থহীনতার মধ্যেই...অর্থহীনতাকে সহজে নিয়েই পূর্ণ সময় বেঁচে থাকে। তাহলে কী মূল্য বাঁচার সেই সব অবলম্বনের, যারা জীবনকে ব্যাহত করে? কামু বলেছিলেন, জানা প্রয়োজন, যে বিপর্যস্ত লোকটি এইমাত্র আত্মহত্যা করল আজ তার কোনো বন্ধু কি তার সঙ্গে অবন্ধুসুলভ ব্যবহার করেছিল? সে তাহলে দোষী, কারণ অসহায়তা থেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য অনুঘটকের কাজ হয়তো সে-ই করে থাকতে পারে।
মনে রাখতে হবে, সম্পূর্ণ জীবন আর জীবন পরিস্থিতি এক নয়। ব্যবসায় ক্ষতি বা কোনো বিষয়ে ভয়, প্রিয়জনের ছেড়ে যাওয়া—সবই জীবন পরিস্থিতি, জীবন নয়। এ দুটোকে আলাদা করে বুঝতে হবে। সে জন্যই রয়েছে আত্মহত্যাবিরোধী দর্শন।
মনে রাখতে হবে, সম্পূর্ণ জীবন আর জীবন পরিস্থিতি এক নয়। ব্যবসায় ক্ষতি বা কোনো বিষয়ে ভয়, প্রিয়জনের ছেড়ে যাওয়া—সবই জীবন পরিস্থিতি, জীবন নয়। এ দুটোকে আলাদা করে বুঝতে হবে। সে জন্যই রয়েছে আত্মহত্যাবিরোধী দর্শন। জন স্টুয়ার্ট মিল তাঁর প্রভাবশালী প্রবন্ধ ‘স্বাধীনতা প্রসঙ্গে’–তে আত্মহত্যা প্রতিরোধের সপক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন। তাঁর বিবেচনায়, যেহেতু স্বাধীনতার পূর্বশর্তই হচ্ছে একজন ব্যক্তির মুক্ত ইচ্ছা ধারণ করা ও সে অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া, সেহেতু যে ধরনের মুক্ত ইচ্ছা, সেই ব্যক্তিকে পরে অন্য যেকোনো বিষয়ে মুক্ত ইচ্ছা চরিতার্থ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবে, সে ধরনের মুক্ত ইচ্ছাকে প্রতিহত করা উচিত। একই যুক্তিতে স্বেচ্ছায় দাসত্ববরণকেও প্রতিরোধ করা উচিত বলে মিল মনে করেন।
তবে একই সঙ্গে স্টুয়ার্ট মিল মনে করতেন, একজন ব্যক্তি তার স্বাধীন ইচ্ছার শ্রেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক। একজন ব্যক্তি একটি ভাঙা ব্রিজ পার হতে চাইছে, এ রকম উদাহরণ ব্যবহার করে তিনি বিষয়টি পরিষ্কার করেন এভাবে—আমরা লোকটিকে বাধা দিতে পারি এবং বোঝাতে পারি যে এই ভাঙা ব্রিজ পার হওয়াটা বিপজ্জনক, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে ব্রিজটি পার হতে সম্পূর্ণরূপে বাধা দিতে পারি না, কারণ সে-ই শুধু জানে তার জীবনের মূল্য, ভাঙা ব্রিজ পার হওয়ার বিপদের সঙ্গে কতটা তুলনীয়!
এমানুয়েল কান্ট তাঁর ‘নৈতিক অধিবিদ্যার মূলনীতি’ বইয়ে আত্মহত্যার বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন। কান্ট যুক্তি দেখিয়েছেন এভাবে, ‘যে আত্মহত্যা করার কথা ভাবছে, সে যেন নিজেকে জিজ্ঞেস করে তার এই হারিয়ে যাওয়া মানবজাতির উদ্দেশ্যের সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ? কান্ট আত্মহত্যাকে অনৈতিক বলেছেন। তাঁর মতে, যে আত্মহত্যা করল, সে নিজেকে ব্যবহার করে নিজের ইচ্ছা পূরণ করল। কিন্তু একজন মানুষ ব্যবহৃত হতে পারে না...।’ কান্টের তত্ত্ব শুধু কাজের প্রতি দৃষ্টিপাত করে, কাজের পরিণতির প্রতি করে না। নিজের কাজকে সাধারণীকরণ করা যাবে কি না অর্থাৎ একজন ব্যক্তি নিজে যে কাজ করছেন, তা সবার করা উচিত কি না—এ ধরনের প্রশ্ন প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতিটি কাজের বৈধতা নির্ধারণ করবে।
জাঁ জ্যাক রুশো ‘সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট’ বইয়ে বলছেন, একটি সমাজের সঙ্গে একজন মানুষের চুক্তি হলো প্রত্যেক মানুষের নিজের জীবন রক্ষাকল্পে জীবনের ঝুঁকি নেওয়ার অধিকার আছে। হবস তাঁর ‘লেভিথান’ বইয়ে জানান, নিজের জীবন ধ্বংসকারী যেকোনো ক্রিয়াই প্রাকৃতিকভাবে নিষিদ্ধ। এই প্রাকৃতিক নিয়ম ভঙ্গ করা অযৌক্তিক এবং অনৈতিক। মানুষের জন্য যৌক্তিক হলো সে মৃত্যুকে ভয় পাবে এবং সে সুখের প্রত্যাশায় থাকবে।
শোপেনহাওয়ার আত্মহত্যাকে অনৈতিক বলে মনে করেন না, আত্মহত্যাকে একজন ব্যক্তির অধিকার বলে মনে করেন। আত্মহত্যার সমর্থনে চমৎকার একটি রূপক ব্যবহার করেছেন শোপেনহাওয়ার। আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যুকে দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকা একজন ঘুমন্ত মানুষের ঘুম ভেঙে বাস্তবে ফেরার সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি।
ডেভিড হিউমের মৃত্যুর পর আত্মহত্যা বিষয়ে তাঁর একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধে হিউম আত্মহত্যার কর্মকে, ঈশ্বরকে অপমান করার একটি চেষ্টা বলে অভিমত দিয়েছেন। এ জন্যই কি আর্নেস্ট হেমিংওয়ে আত্মহত্যার কয়েক দিন আগে বলেছিলেন, ‘আমার জন্ম হয়েছে অন্যের ইচ্ছায়। মৃত্যুটা তো যেকোনো সময় নিজের হাতেই ঘটাতে পারি।’ এখানে কারও বা ঈশ্বরের হাত নেই। আত্মহত্যা হলো ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। দেখুন, যে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে বলা হচ্ছে, সেই ঈশ্বরকেই আবার অপরোক্ষভাবে মানা হচ্ছে না।
যে আত্মহত্যা করার কথা ভাবছে, সে যেন নিজেকে জিজ্ঞেস করে তার এই হারিয়ে যাওয়া মানবজাতির উদ্দেশ্যের সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ? যে আত্মহত্যা করল, সে নিজেকে ব্যবহার করে নিজের ইচ্ছা পূরণ করল। কিন্তু একজন মানুষ ব্যবহৃত হতে পারে না।এমানুয়েল কান্ট
অমিয় ভূষণ মজুমদার ‘লিখনে কী ঘটে’ প্রবন্ধে বলেছেন, যোগী, মাতাল, শিল্পী, সাহিত্যিক সবাই নিজের মতো করে বাস্তবের অপ্রিয় উপস্থিতি থেকে পালানোর চেষ্টা করে। ঘুম হলো দৈনন্দিন পলায়নের সহজতম উদাহরণ। নিশি-স্বপ্নের মতো দিবাস্বপ্নও বাস্তবের লাগাম এড়ানো এক ‘এসকেপ’। তিনি বলছেন, নিজেই শিকার এমন পলায়নে ফাঁক থাকে। স্বপ্ন সর্বদা ঘুমকে নিশ্চিত করে না, বরং তার মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে ‘উচ্চ চিৎকার’।
ফ্রয়েড বলেছেন, মানুষের ব্যক্তিসত্তার বেশিটাই গড়ে তোলে তার মনের নিশ্চেতন অন্ধকার জগৎ। মানুষ ভুল বলে, স্বপ্ন দ্যাখে, ভুলে যায়, সাফল্যের জন্য অবিরাম চেষ্টা করে, একই আচরণ বাববার করে, কবিতা লেখে, গল্প লেখে, ছবি আঁকে—এসব দেখে মানুষকে রহস্যময় মনে হয়। এসবের পেছনে থাকে মনের অন্ধকার জগতের হাতছানি। আমরা তা দেখতে পাই না। মানুষের অস্বাভাবিক আচরণগুলোকে রহস্যময় মনে করি।
নিশ্চেতন স্তর ছাড়া মনের আরও দুটি স্তর আছে, সচেতন স্তর, প্রাক্চেতন স্তর। মনের যে স্তর সর্বদাই আমাদের সাক্ষাৎ জ্ঞানের বিষয়, তা সচেতন স্তর। যে স্তর সাক্ষাৎভাবে জ্ঞানীয় স্তরে থাকে না, কিন্তু যেকোনো সময় জ্ঞানের বিষয় হয়ে যেতে পারে, তা প্রাক্চেতন স্তর। আর যে স্তরের জ্ঞানই আমাদের থাকে না, তা-ই নিশ্চেতন স্তর। এই নিশ্চেতন, ফ্রয়েডীয় তত্ত্বে বেশিরকম গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রয়েডের মতে, নিশ্চেতনই ব্যক্তিজীবনের নিয়ামক। এই নিশ্চেতন অন্ধকারেই মানুষের যাবতীয় অবদমিত ইচ্ছা, কামনা-বাসনা সঞ্চিত থাকে, সচেতন স্তরে ভেসে উঠতে চায়, কিন্তু নিশ্চেতনের প্রবল অবদমন শক্তি তাদের আবার টেনে নিয়ে যায় অতল অন্ধকারে। ফ্রয়েড জড়বাদী ও বিবর্তনবাদী ডারউইনতত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। জড়ের মধ্যে একধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে প্রাণের উদ্ভব। এই প্রাণ, মানুষের প্রাণ মাঝেমধ্যেই জড়ত্বের দিকে ফিরে যেতে চায়, যা প্রকাশিত হয় মানুষের মৃত্যু-বাসনার দ্বারা। তাই কোনো কোনো মানুষ কখনো কখনো আত্মঘাতী হয় কিংবা আত্মহত্যা করতে চায়। মানুষের স্বাভাবিক জীবনশক্তির বিকাশ ব্যাহত হলে কিংবা জীবনবিকাশে তার একান্ত হতাশা এলে, সে আত্মঘাতী হয় কিংবা আত্মহত্যার ইচ্ছা পোষণ করে। অর্থাৎ সে জড়ে অন্তর্লীন হতে চায়। জীবনানন্দ দাশের ‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতার নায়ক এভাবেই আত্মঘাতী হয়েছিল।