অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান
অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

গুচ্ছকবিতা

বুকপকেটে এবড়োখেবড়ো দোয়াতকালি

শূন্যতলের স্মারক

ও মাস্টার আপা তোমার বাইসাইকেলের ঘণ্টাধ্বনি;
আমার বুকপকেটে এবড়োখেবড়ো দোয়াতকালি
মধ্যাহ্নের গায়ে লেখা চৈত্রদিনের গান
হাতে বায়ান্নাটি তাস; একটি উড়নচণ্ডী যৌবন
তুলোট কাগজের ভারে—
জলের ধোঁয়া মাথায় নিয়ে উড়ে যাচ্ছে সারস।

বৃক্ষ ও পাতার শব্দে পাশাপাশি দুখানা মুখ
সবুজ হাওয়ার সংকেত। দাঁড়ায়, ভেসে ওঠে ক্রসবারে
শোধিত বিজ্ঞাপন। জলযুদ্ধের স্মৃতিতে বপন মৎস্যগন্ধা মন—
হারিয়ে গেছে কবে এমন বেহেড মাতাল দুপুর
এক আশ্চর্য রঙিন; জীবন এক শাশ্বত কর্পূর।

অপেক্ষা

মোলায়েম আলোয় রাঙা
কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল
ছায়াসংগীতের সুরে—
বাজে নগরের রাস্তার জ্যাম
খুদে বার্তায় ঘাম-বৃষ্টির ছাট,
আজ বৃহস্পতিবার;
উইদাউট বৃষ্টিতে কাটা হচ্ছে ঘাস
ফাইলবন্দী রোদ ছেড়ে যাচ্ছে বাড়ি
বর্ষার বেড়াল সন্ধ্যায় আরেকবার
জুঁই অথবা জিনিয়ার লাজুক লিরিকে
চিরহরিৎ হৃদয় ভিজে পারাপার
ক্লান্ত চাঁদের আলো ধোয়া রাত
ভিজে গেছে তার পরনের শার্ট।

ঋতু-রংরহস্যে

শরতের ঠিকুজি নির্বাচিত কাশফুল
অথবা জার্নি বাই শরৎস্টেশন বলতে বুঝি—
আশ্বিনের রাতের আকাশে চড়িয়ে দিল শিল্পকলার রং
অতঃপর রেখাঙ্কন থেকে চাঁদটি নেমে পৌঁছে গেল
চারুকলার জয়নুল গ্যালারিতে
সেখান থেকে হয়তো সবুজবৃষ্টির ছটা গিয়ে লাগল
বালিকার বরই ফুলের মতো নাকফুলে
কিন্তু শরৎ-সৌরভ; লাহিড়ী মোহনপুর, দিলপাশারসহ
চলনবিলের উদর ফুঁড়ে বয়ে চলা শরৎনগর স্টেশনের
দুই ধার—সুভাসিত হলুদ, সওজ,
জিরা ও কাঁচা লঙ্কার ফুল—এই সব কাঁচা মসলাপাতি
ঋতু শরতের জীবনচরিত লিখতে নাসারন্ধ্র ভাসিয়ে দেয়।

শান্তিকলা

কোনো এক মঙ্গলবার দুপুর
তরুণীর গোল ঠোঁটের
দিব্যিতে মেতে উঠব;
ভুলে যাব খেলো রাজনীতি—
ছিঁড়েফুঁড়ে ফেলব বাজার অর্থনীতি,
বালিকার টোল পড়া গালের অফেরতযোগ্য দৃশ্য
আফটারম্যাথ ‘তুমি আমার আপন’
গোপন ছিল এত দিন। ভেসে বেড়ানো আনন্দ।
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের তাগিদ। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠি—বাঁচলাম;
ঠকে শেখা মাত্র। স্বগত কাক দাবার ছক থেকে খুঁজছে সঞ্জীবনী ঘাস।

বিপণন

নদীতীরবর্তী জনপদ; স্বরগ্রাম তার নাম
নাও দৌড়ানির ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভাঙে সে পাড়ের বসতি
শাহজাদি বেগুন উৎপাদনে আছে তার জগৎস্বীকৃতি
অবস্থান বুঝে ডিপ্লোমেটিক ডিসকোর্সে দিন দিন
প্রমোশন নিয়ে ঘরে ফিরল পার্পেল কালারের শাড়ি—
বিশ্বাস করুন; বুদ্ধিজীবী হিসেবে লোকাল বাসে
আমাদেরও গতায়ত ছিল নেহাত লোক দেখানো।
অর্থশাস্ত্রে বৃষ্টিফেরত কদমের মূল্য মর্যাদা মেপে মেপে
প্রেম ও পদক্ষেপ ছিল কিছুটা
তবে পরের যাত্রায় আমরা মরিয়া হয়ে উঠি
কাঁটাযুক্ত সাদা বেগুন, ব্রহ্মপুত্রপাড়ের ট্যাংরা, পুঁটির
ঝালে ঝোলে ঢেকুর তোলা গল্প...
তবু আমাদের হুঁশ ফিরল না। নয়নীগঞ্জ শাখার শ্রীমতি ব্যাংকার
তাকে জানালাম, আমার অবস্থান গাছের নিচে বেঞ্চিপাতা
দোকান আর ভ্যান গঘের আকাশি রঙের কাঁচামিঠা রোদ
সবুজ জোছনায় নেয়ে ওঠা চাঁদ।