গ্রাফিকস: প্রথম আলো
গ্রাফিকস: প্রথম আলো

বইমেলা

বইয়ের মহামেলায়, ফ্রাঙ্কফুর্টে

প্রস্তাবটা এল একেবারে আকস্মিকভাবে। আমাদের পুরোনো বন্ধু—কথাসাহিত্যিক ও আইনের অধ্যাপক—আসিফ নজরুল ফোন করে বললেন, আমাকে জার্মানিতে যেতে হবে, ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে। মাসখানেকও হয়নি, বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে বিরাট উথাল–পাথাল ঘটে গেছে। বাংলাদেশের মানুষের উত্তাল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার অগণতান্ত্রিক ও নিপীড়নমূলক সরকারের লজ্জাজনক পতন ঘটে গেছে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের রাজপথ থেকে আসিফ নজরুল নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্য হয়েছেন। তাঁর কাঁধে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের ভার। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়েরও।

আসিফ নজরুলকে বললাম, যোগ্যতর আর কাউকে এই প্রস্তাব দেওয়া যায় কি না, সেটা যেন তাঁরা ভেবে দেখেন। আসিফ বললেন, না, তাঁরা বুঝেশুনেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ নিয়ে আর কোনো কথা নেই। বললেন, প্রতিবছর অনেকে মিলে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় যান। আমলাদের সংখ্যাও কম থাকে না। এবার তাঁরা সরকারের টাকা অপচয় করতে চান না। এবার বাংলাদেশকে একজনই প্রতিনিধিত্ব করবেন। যাব কেবলই আমি।

প্রস্তাব পেয়েছি আগস্টের শেষ দিকে। বইমেলা বসবে অক্টোবরে। সময় বলতে গেলে একদমই নেই। তাড়াহুড়া করে সব করতে হবে। আসিফ বললেন, বইমেলায় এবার যেন বাংলাদেশের সেরা বইয়ের উপস্থিতি থাকে। কী কী বই যাবে, দিন দুয়েকের মধ্যে তিনি এর একটি তালিকা করে দিতে অনুরোধ করলেন। না হলে বই সংগ্রহ করে বইমেলায় সময়মতো সেগুলো পাঠানো কঠিন হবে।

বই সংগ্রহ আর পাঠানোর ব্যবস্থাপনা করবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর অন্য বহু প্রতিষ্ঠানের মতো গ্রন্থকেন্দ্রের শীর্ষ পদও তখন শূন্য পড়ে আছে। আমার সঙ্গে যোগাযোগ হলো গ্রন্থকেন্দ্রের উপপরিচালক ফরিদউদ্দীন সরকারের সঙ্গে। বাংলাদেশের প্রায় সব প্রকাশনীর ক্যাটালগ নিয়ে আমার অফিসে এসে হাজির হলেন তিনি। দারুণ অমায়িক ও সহযোগিতাপ্রবণ নিপাট এক ভদ্রলোক। সাহিত্যজগতের কেউ নন, কিন্তু কথা বলে বিন্দুমাত্রও তা মনে হওয়ার উপায় নেই। বইয়ের জগতের সঙ্গে একাকার হয়ে আছেন। কথা বলে খুব আরাম হলো।

আমাদের পুরোনো বন্ধু—কথাসাহিত্যিক ও আইনের অধ্যাপক—আসিফ নজরুল ফোন করে বললেন, আমাকে জার্মানিতে যেতে হবে, ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে। বললাম, যোগ্যতর আর কাউকে এই প্রস্তাব দেওয়া যায় কি না, সেটা যেন তাঁরা ভেবে দেখেন। আসিফ বললেন, এবার তাঁরা সরকারের টাকা অপচয় করতে চান না। এবার বাংলাদেশকে একজনই প্রতিনিধিত্ব করবেন।

রাত জেগে বাংলা আর ইংরেজি মিলিয়ে ৩০০টির মতো বইয়ের একটি তালিকা তৈরি করলাম।

ভিসার প্রক্রিয়া শুরুর দিন কয়েক আগে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক পদে নিয়োগ হলো। নতুন কথাসাহিত্যিক আফসানা বেগম। জানতে পারলাম, ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার সফরে তিনিও যুক্ত হচ্ছেন। সেটাই হওয়ার কথা। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কেউ না গেলে এই মেলায় যোগ দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। বাংলাদেশে গ্রন্থজগতের উন্নয়ন ও বিকাশে এই প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ধাত্রীর, যদিও দুঃখজনকভাবে অতীতের কোনো সরকারই এই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব বোঝেনি। জাতীয় সমাজে বইয়ের প্রসারের অর্থপূর্ণ ও বৃহত্তর ভূমিকায় কাজে না লাগিয়ে আগের সব সরকার ও আমলারা প্রতিষ্ঠানটিকে ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে রেখেছেন। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর যদি সরকার এই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব বোঝে এবং এর মধ্যে কিছু বনিয়াদি পরিবর্তন নিয়ে আসে।

বইয়ের মহাযজ্ঞে

আমরা ফ্রাঙ্কফুর্ট গিয়ে পৌঁছালাম ১৫ অক্টোবর। ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইমেলা। সারা পৃথিবী–বিস্তর লোক এই সময়ে এসে এখানে জড়ো হন—প্রকাশক, লেখক, সম্পাদক, এজেন্ট, অনুবাদক, সমালোচক, গ্রন্থাগারিক, বইয়ের বিক্রেতা ও সরবরাহকারী। কে নয়? এ কারণে সব হোটেলের দাম আকাশে চড়ে যায়। হোটেল খালি পাওয়াও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। আমরা শেষ সময়ে যুক্ত হয়েছি। ফলে ভালো কোনো হোটেল আমাদের ভাগ্যে জোটেনি। দরিদ্র ধরনের একটা হোটেলে গিয়ে আমরা উঠেছি। এই হোটেলের একটাই ভালো দিক, রেলস্টেশনটা একেবারে লাগোয়া।

এই মেলা হয় ফ্রাঙ্কফুর্টের মেজে নামে একটা স্থানে বিশাল জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা এক ভবনে। ভবনটি গড়ে তোলা হয়েছে নানা ধরনের মেলা আয়োজন করারই উদ্দেশ্যে। সেখানে ঢুকে চোখ ছানাবড়া হয়ে যাওয়ার জোগাড়। বাংলাদেশের স্টলে যাওয়ার জন্য করিডরের পর করিডর ধরে আমরা হেঁটে চলেছি, কিন্তু কত দূর? করিডরের কোথাও কোথাও লেখক ও পাঠকের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর ছোট ছোট বিক্রয়কেন্দ্র—কলম, নোটবই, মার্কার ইত্যাদি। আর সেসব ছাপিয়ে দুই পাশে রাশি রাশি স্টলের পর স্টল চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। নানা দেশ এখানে স্টল দিয়েছে। কেউ দিয়েছে ছোট স্টল। কোনো কোনো দেশ বিরাট জায়গা নিয়ে নিজের মতো করে আঙিনা তৈরি করে নিয়েছে। সেই আঙিনার ভেতরে দেশটির প্রকাশকেরা যাঁর যাঁর সাধ্যমতো ছোট–বড় নানা আকারের স্টল বসিয়েছেন। নিজেদের প্রকাশকদের নিয়ে বিভিন্ন দেশ যেমন এসেছে, কিছু কিছু প্রকাশকও স্টল দিয়েছেন নিজ উদ্যোগে।

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বাংলাদেশের স্টল

ফ্রাঙ্কফুর্টের এই ৭৬তম বইমেলায় এ রকম স্টল বসেছিল ৪ হাজার ৩০০টি। আর এতে এসেছিলেন ২ লাখ ৩০ হাজার দর্শনার্থী।

শুধু স্টল তো নয়, এই মেলা যেহেতু বইয়ের সঙ্গে যুক্ত নানা পেশাদার মানুষের বিচিত্র আদান–প্রদানের ক্ষেত্র, তাঁদের মধ্যে গুরুতর কথাবার্তা হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। জায়গায় জায়গায় সে কারণে বড় জায়গাজুড়ে ছোট ছোট চেয়ার–টেবিল পেতে রাখা হয়েছে। পরের কয়েকটা দিন সেখানে ছিল গিজগিজে ভিড়। আমাদের যাওয়া–আসার পথে একটা জায়গায় তৈরি করা হয়েছে আলোচনা সভার পরিসর। সাহিত্য, বিদ্যাচর্চা আর গ্রন্থজগৎ নিয়ে সেখানে দেখেছি সকাল–সন্ধ্যা অবিরাম একটার পর একটা আলোচনা চলতে।

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বই বিক্রি হয় না, এই মেলা বই প্রদর্শনের। প্রথম তিনটি দিন সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্যও নয়। এই কদিন কেবলই প্রকাশক, অনুবাদক, এজেন্ট, সম্পাদক বা বইয়ের ব্যবসায়ী–জাতীয় লোকেরা আসবেন। ঘুরে ঘুরে দেখবেন কোনো বইয়ের প্রকাশনা বা অনুবাদস্বত্ব কেনা যায় কি না, নতুন কোনো লেখক কোথাও আবির্ভূত হলেন কি না, যাঁকে নিয়ে ভবিষ্যতে বাজি ধরা যায় ইত্যাদি।

যাহোক, আমরা বাংলাদেশের স্টলে গিয়ে পৌঁছালাম অবশেষে। প্রথম দিন আমাদের কাজ বই সাজানো। প্রতিটি স্টলে বই সাজানোর কাজই প্রধানত চলছে। কেউ কেউ স্টল সাজানোর সর্বশেষ কাজটুকু তখনো সারছেন। বাংলাদেশ দূতাবাসের তরুণ কমার্শিয়াল কাউন্সেলর গোলাম রাব্বি আমাদের পাঠানো প্যাকেটবন্দী বইগুলো নিয়ে এসেছিলেন। আমাদের সঙ্গে এসেছেন মাইনজের বাসিন্দা আমাদের বন্ধু অপু আলম। সবাই মিলে বই সাজানোর কাজে হাত লাগালাম।

আমার তালিকার ৩০০ বইয়ের দু–চারটি বই বাদে প্রায় সবই এসেছে। আসিফ নজরুলের দুটি বই আমার তালিকায় ছিল—সংবিধান বিতর্ক আর আমি আবু বকর। বই দুটি আসেনি কেন? তালিকা থেকে তিনি নিজেই নাকি বই দুটির নাম কেটে দিয়েছেন। বইয়ের স্তূপের মধ্যে আমার ঈশ্বর দর্শন বইটা দেখে আমি তো অবাক। তালিকায় তো ছিল না। এ বই এল কী করে? আফসানা বললেন, তিনিই পরে তালিকায় ঢুকিয়েছিলেন।

ইংরেজি আর বাংলা বই আলাদা আলাদা তাকে রাখা হলো, যাতে দর্শনার্থীদের দেখতে সুবিধা হয়। বাইরের পাঠকদের কী ধরনের বইয়ের ব্যাপারে আগ্রহ হতে পারে, সেটা ভেবে কিছু কিছু বিষয়ের বই আমরা এমন জায়গায় রাখলাম, যেন সহজেই চোখে পড়ে—যেমন রোহিঙ্গা, পরিবেশ ও জলবায়ু, লোকসংস্কৃতি, এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ইতিহাস, ব্রিটেনের উপনিবেশপর্ব, ইসলাম–হিন্দু–বৌদ্ধ ধর্মের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান ইত্যাদি। একই বিষয়ের বইগুলো কাছাকাছি রাখা হলো।

আমাদের সঙ্গে আরও দুয়েকজন জার্মানপ্রবাসী বাঙালি এসে যোগ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ থেকে আসা এত এত বই দেখে তিনি বিস্মিত। একজন বললেন, ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় কখনোই বাংলাদেশ থেকে এত বিচিত্র বিষয়ের বই আসেনি, প্রদর্শিত হয়নি। পরেও প্রবাসী বাংলাদেশি যাঁরাই বইমেলায় এসেছেন, সবাই এক সুরে একই কথা বললেন। একজন বাংলাদেশ স্টলের পুরোনো কিছু ছবিও সেলফোন থেকে বের করেও দেখিয়েছিলেন। মাত্র তিন–চারটি বইয়েরই একাধিক কপি স্টলজুড়ে ফাঁক ফাঁক করে সাজানো। সে বইগুলোর মধ্যে বিগত সরকারের রাজনৈতিক প্রকল্পের লজ্জাকর প্রতিফলন। বাংলাদেশের রাজনীতির একচেটিয়া আগ্রাসন সুদূর ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলাকেও গ্রাস করেছিল।

বলে রাখা ভালো, ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বই বিক্রি হয় না, এই মেলা বই প্রদর্শনের। জানতে পারলাম, বইমেলার প্রথম তিনটি দিন সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্যও নয়। এই কদিন কেবলই প্রকাশক, অনুবাদক, এজেন্ট, সম্পাদক বা বইয়ের ব্যবসায়ী–জাতীয় লোকেরা আসবেন। ঘুরে ঘুরে দেখবেন কোনো বইয়ের প্রকাশনা বা অনুবাদস্বত্ব কেনা যায় কি না, বিক্রয়কেন্দ্র বা গ্রন্থাগারের জন্য কোন বই বড় সংখ্যায় সংগ্রহ করা দরকার, নতুন কোনো লেখক কোথাও আবির্ভূত হলেন কি না, যাঁকে নিয়ে ভবিষ্যতে বাজি ধরা যায় ইত্যাদি।

বাংলাদেশের স্টলে (ডান দিক থেকে) কবি দাউদ হায়দার, ডয়চে ভেলে বাংলার সাবেক পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ফারূক, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ এবং বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম

প্রবাসী বাংলাদেশিদের আরেকটি কথায় আমরা খুবই অবাক হলাম। তাঁরা বললেন, প্রতিবছর দেশ থেকে অনেকে মিলে এই বইমেলায় এসেছেন, কিন্তু ছবি তোলার পর্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রায় কেউই আর একবারের জন্যও মেলায় ঢুঁ মারেননি। চলে গেছেন বার্লিনে বা অন্য কোনো শহরে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে।

আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিলাম। প্রতিদিন সকালে আমরা এখানে চলে আসব। স্টলে থাকব মেলা শেষ হয়ে যাওয়ার সময় পর্যন্ত। এই স্টলে যাঁরাই আসবেন, বাংলাদেশের বই বা প্রকাশনা নিয়ে যে কারও কোনো প্রশ্ন বা কৌতূহল থাকলে সেটা মেটানোর চেষ্টা করব।

বাংলাদেশের বইয়ের যতটা সম্ভব বৈচিত্র্যপূর্ণ উপস্থাপন এবং পুরোটা সময় বইমেলায় থাকা, সামান্য এই দুটি মাত্র উদ্যোগ অপূর্ব এক অভিজ্ঞতা হয়ে ফিরে এল আমাদের কাছে।

অপার সম্ভাবনার গ্রন্থবিশ্ব

আমি অন্তত ভেবেছিলাম, এই বিদেশ–বিভুঁইয়ে কোন পাগল আসবে বাংলাদেশের বই দেখতে? কিন্তু আমাকে হতবাক করে দিয়ে বিচিত্র ধরনের লোক আসতে শুরু করলেন। কেউ কেউ এলেন নিজেরই ব্যবসায়িক প্রস্তাব নিয়ে। ‘তোমাদের দেশের কোনো প্রকাশকের কি ইলাস্ট্রেশন করার লোক দরকার? আমি কিন্তু সস্তায় খুব ভালো ইলাস্ট্রেশন করে দিতে পারি।’ ‘তোমাদের কেউ যদি শিশু–কিশোরদের জন্য কোনো পত্রিকা করে, আমরা তাকে নিয়মিত সুন্দর সুন্দর কনটেন্ট সরবরাহ করতে পারি। আছে কারও দরকার?’ এ রকম নানা প্রস্তাব নিয়ে নানা ধরনের লোক এলেন।

আমরা অবাক হয়ে গেলাম অন্য আরেক ধরনের প্রস্তাব শুনে। যেমন ফিনল্যান্ডের এক ভদ্রমহিলা এলেন একদিন। তিনি আর তাঁর স্বামী মিলে একটি প্রকাশনা দিয়েছেন, কেবলই শিশু–কিশোরদের বই প্রকাশ করার জন্য। দেখালেনও তাঁদের কিছু বই। পুরু কাগজে ছাপানো, রঙিন সচিত্রকরণে অসম্ভব সুদৃশ্য সব বই। প্রতিটি পৃষ্ঠাজুড়ে বড় ছবি আর গল্পের দুয়েকটা করে লাইন। বললেন, বাংলাদেশ থেকে তিনি কিছু শিশুসাহিত্যের স্বত্ব কিনতে চান। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া সম্ভব কি না। ইংরেজি, ফিনিশ, জার্মান বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে সেসব বই তাঁরা নানা দেশে প্রকাশ করবেন।

তাঁর প্রস্তাব শুনে আমরা তো স্বাভাবিকভাবেই খুবই উত্তেজিত। অসম্ভব আগ্রহ নিয়ে তাঁর সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে কথা হলো। আফসানা বেগম তাঁর নাম–ঠিকানা রেখে দিলেন। দেশে ফিরেই যোগাযোগ করিয়ে দেবেন।

আমি জানতে চাইলাম, তিনি বাংলাদেশি শিশুসাহিত্যের স্বত্ব কিনতে চাইছেন কী কারণে? এর কোনো বিশেষত্বের কথা কি কোথাও শুনেছেন? ‘না, না, কোনো বিশেষত্বের ব্যাপারই এটা নয়। পৃথিবীর সব দেশের শিশু–কিশোরেরাই গল্প শুনতে উৎসুক। বিশ্বজুড়ে এ ধরনের বইয়ের চাহিদা তাই বিপুল।’ পশ্চিমা বিশ্বে এ ধরনের বই বের করতে গেলে লেখককে বড় অঙ্কের টাকা রয়্যালটি দিতে হবে। তার থেকে অনেক কম টাকায় তিনি বাংলাদেশের মতো দেশ থেকে বইয়ের স্বত্ব কিনতে পারবেন। সার্বিয়ায় তাঁর পরিচিত একজন শিল্পী আছেন। তিনি যৎসামান্য অর্থে সুন্দর ছবি এঁকে দেন। ব্যস, কম খরচে হয়ে যাবে আন্তর্জাতিক বাজারে পরিবেশন করার মতো শিশুসাহিত্যের বই।

একদিন এক ভদ্রলোক স্টলে এসে বিভিন্ন বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে অবশেষে হাতে তুলে নিলেন অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের পলিটিক্যাল পার্টিজ ইন ইন্ডিয়া বইটি। বেশ মনোযোগ দিয়ে বইয়ের পাতা উল্টে গেলেন। তারপর এসে বললেন, তিনি কাতারের একটি প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। এ বইয়ের একটি আরবি সংস্করণ তিনি সেখান থেকে প্রকাশ করতে ইচ্ছুক।

এ রকম অভিজ্ঞতা একটি নয়, হলো বেশ কয়েকটি। একদিন এক ভদ্রলোক স্টলে এসে বিভিন্ন বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে অবশেষে হাতে তুলে নিলেন অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের পলিটিক্যাল পার্টিজ ইন ইন্ডিয়া বইটি। বেশ মনোযোগ দিয়ে বইয়ের পাতা উল্টে গেলেন। তারপর এসে বললেন, তিনি কাতারের একটি প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। এ বইয়ের একটি আরবি সংস্করণ তিনি সেখান থেকে প্রকাশ করতে ইচ্ছুক।

আরেক দিন এলেন মেক্সিকোপ্রবাসী বাঙালি লেখক আনিসুজ্জামান। এস্পানিওল ভাষায় লেখা তাঁর প্রথম উপন্যাসটি সম্প্রতি মেক্সিকো থেকে বেরিয়েছে। সেই বইসহ আরও নানা বই বিপণন করতে এই মেলায় এসেছেন তাঁর প্রকাশক বা এজেন্ট। সেই মেক্সিকান ভদ্রলোককেও তিনি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের স্টলে। মাহমুদুল হকের জীবন আমার বোন উপন্যাসটি আনিসুজ্জামান এস্পানিওলে অনুবাদ করতে চান। মেক্সিকান ভদ্রলোক জানালেন, তাঁরা মেক্সিকো থেকে বইটি প্রকাশের উদ্যোগ নেবেন। কী দারুণ খবর! তাঁদের ঠিকুজি–কুলুজিও টুকে রাখলেন আফসানা।

এ রকম বেশ কয়েকটি অপরূপ অভিজ্ঞতা হলো। এক থাই ভদ্রলোক এলেন আরেকটি বইয়ের অনুবাদ বের করার বাসনা নিয়ে। এলেন চীনের এক সরকারি কর্মকর্তা। তাঁরা বাংলাদেশে চীনা বই নিয়ে কিছু একটা করতে আগ্রহী। চাইলে তাঁরা চীন থেকে একই সঙ্গে একটি সাংস্কৃতিক দলও নিয়ে আসবেন। ভারতের দিল্লি থেকেও দুয়েকজন প্রকাশক এসে বই ঘেঁটে ঘেঁটে দেখলেন। পাঁচ–ছয়টি বই পছন্দ করলেন তাঁরা। ভারত থেকে পুনঃপ্রকাশ করতে চান।

ইউক্রেনের স্টলে সাম্প্রতিক রাশিয়ান হামলায় তাঁদের লাইব্রেরি ও বই পুড়ে যাওয়ার বাস্তবতা তুলে ধরা হয়

সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার পর প্রবাসী বাংলাদেশিরা এলেন দল বেঁধে। বাংলাদেশের স্টল নিয়ে কী যে আনন্দ তাঁদের। একদিন এলেন এক তরুণ। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দ্বিতীয় প্রজন্মের জার্মান। তিনি খুঁজছেন ইংরেজি অনুবাদে বাংলা কবিতার বই। কেন? কবিতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অন্তরাত্মাকে স্পর্শ করতে চান তিনি। সুদূরের পিতৃভূমির জন্য আবেগে তরুণটির চোখ ছলছল করছে।

দুদিনের জন্য আমাদের সঙ্গে গল্প করার জন্য বার্লিন থেকে চলে এলেন সদ্য প্রয়াত কবি দাউদ হায়দার আর লেখক নিজমুন নাহার পিয়ারি। কাছের শহর হাইডেলবার্গ থেকে আরেক দিন ঘুরে গেলেন ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক আব্দুল্লাহ আল ফারূক।

দারুণ আনন্দ আর উত্তেজনায় উড়ে গেল কয়েকটা দিন।

কী নিয়ে ফিরলাম

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বাংলাদেশের স্টল যে এবার বিদেশি প্রকাশক, অনুবাদক বা এজেন্টদের এতটা দৃষ্টি আকর্ষণ করল, তার মূল কারণ বিচিত্র ধরনের বইয়ের প্রাচুর্য। যখনই যাঁরা কথা বলতে এসেছেন, কথা বলার লোক পেয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি, তথ্য দিয়ে কৌতূহল মিটিয়েছি। আফসানা বেগম সবাইকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে এসব ব্যাপারে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র তাঁদের সব সহযোগিতা দেবে।

এবারের বইমেলায় থিম কান্ট্রি ছিল ইতালি। বাংলাদেশকে কি ভবিষ্যতে কখনো থিম কান্ট্রি করা সম্ভব নয়? আফসানা এ নিয়ে খুবই উদ্‌গ্রীব। আমরা আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ খুঁজলাম। বইমেলার ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া কাইজার সেই সূত্রে একদিন বাংলাদেশের স্টলে এলেন। বাংলাদেশ নিয়ে গত কয়েক দিনের অভিজ্ঞতার কথা শুনে তিনি দারুণ খুশি।

ক্লডিয়া বললেন, থিম কান্ট্রির কথা ভাবার আগে বাংলাদেশ অন্য কতগুলো পদক্ষেপ নিতে পারে। কাউকে থিম কান্ট্রি করা হলে এর সঙ্গে বিপুল খরচ জড়িয়ে পড়ে। তার আগে বরং দরকার বাংলাদেশকে এখানে দৃশ্যমান করে তোলা। বইমেলায় যেসব সভা–সেমিনার হয়, বাংলাদেশ সেখানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিক না কেন। বই বা লেখকদের নিয়ে পরিকল্পিতভাবে কিছু ইভেন্ট করুক। এভাবে কয়েক বছরের পরিকল্পিত লক্ষ্য রেখে কাজ করে গেলে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই একদিন থিম কান্ট্রি হিসেবে হাজির হতে পারবে।

সেটা করতে পারলে সংস্কৃতিমান জাতি হিসেবে বিশ্বের চিন্তাশীল মানুষদের কাছে বাংলাদেশের যে বিরাট উপস্থাপন হবে, তা আর কোনোভাবে সম্ভব হতে পারে! এ দেশের সাহিত্য আর মননকে বিশ্বের গোচরে আনার এবং নানা ভাষায় অনূদিত হয়ে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এত বড় মঞ্চ আর হতে পারে না। তবু এ তো গেল বড় একটা স্বপ্ন। এই অল্প কয়েকটা দিনে ছোট একটা স্টলেই আমাদের যে অভিজ্ঞতাটুকু হলো, তার মূল্যই–বা কম কিসে?

এবারের বইমেলায় থিম কান্ট্রি ছিল ইতালি। বাংলাদেশকে কি ভবিষ্যতে কখনো থিম কান্ট্রি করা সম্ভব নয়? বইমেলার ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া কাইজার বললেন, আগে বরং দরকার বাংলাদেশকে এখানে দৃশ্যমান করে তোলা। বইমেলায় যেসব সভা–সেমিনার হয়, বাংলাদেশ সেখানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিক না কেন। কয়েক বছরের পরিকল্পিত লক্ষ্য রেখে কাজ করে গেলে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই একদিন থিম কান্ট্রি হিসেবে হাজির হতে পারবে।

যত দূর জানি, আমরা চলে আসার পর বেশ কিছু অর্থবহ যোগাযোগ এরই মধ্যে স্থাপিত হয়েছে। ফিনল্যান্ডের সেই প্রকাশক বাংলাদেশের কয়েকজন প্রকাশকের কাছ থেকে শিশুসাহিত্যের স্বত্ব কিনেছেন। দুয়েকটি বই অনুবাদ হয়ে দেশের বাইরে থেকে তাঁরা এরই মধ্যে প্রকাশও করেছেন। মাহমুদুল হকের উপন্যাসের অনুবাদস্বত্ব কেনার জন্য তাঁর উত্তরাধিকারীদের সঙ্গে মেক্সিকান এজেন্টের কথাবার্তা চলছে। দিল্লির প্রকাশকেরা বাংলাদেশের প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে কিছু বই ভারতে পুনঃপ্রকাশের বন্দোবস্ত করেছেন। চীনের সেই সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপের সূত্রে এ বছর বেইজিং বইমেলায় অংশ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা থেকে এতটা পাওয়ার কথাও কি কখনো আমরা শুনেছি? প্রায় কোনো উদ্যোগ ছাড়াই এবারে এটুকু হতে পারল। হতে যে পারল তার কারণ, বইয়ের সামান্য বৈচিত্র্যময় সমাহার, তথ্যদাতার সার্বক্ষণিক উপস্থিতি আর প্রয়োজনীয় সংযোগের জোগান।

বাংলাদেশের স্টলে জার্মান–প্রবাসী বাংলাদেশি লেখক নিজমুন নাহার পিয়ারির সঙ্গে আফসানা বেগম

এই অভিজ্ঞতাই বলে দেয়, সামান্য একটু উদ্যোগ নিলে আমরা আরও দুয়েকটি ধাপ অবলীলায় পেরিয়ে যেতে পারি। নানা ভাষায় বাংলাদেশের বই ছড়িয়ে দিতে পারি পৃথিবীর বহু দেশে। আমাদের শুধু দরকার সাম্প্রতিকতম তথ্যসমেত বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য বইয়ের বিষয়ভিত্তিক ক্যাটালগ, অনলাইনে এবং মুদ্রিত পুস্তিকা হিসেবে। এটি গড়ে তোলার দায়িত্ব জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের। কারণ, এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্যই বাংলাদেশের বইয়ের উন্নয়ন ও বিকাশ। আর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কর্তব্য এ কাজে প্রতিষ্ঠানটিকে সব রকমের সহায়তা দেওয়া।

এ কাজে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে ক্যাটালগার পদে সর্বক্ষণ কাজ করার জন্য একজন লোক প্রয়োজন। প্রকাশকেরা অল্প শব্দে তাঁদের বইয়ের বিষয়বস্তুসহ মূল তথ্যগুলো দেবেন। সেই তথ্যের মধ্যে প্রকাশকের নাম–ঠিকানাও থাকবে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সুযোগ–সুবিধা পেতে হলে এসব তথ্য দেওয়া হবে মূল শর্ত। ক্যাটালগটি হতে হবে বাংলা ও ইংরেজি—দ্বিভাষিক। বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের কাজে উন্মুক্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার করা খুবই সম্ভব। কেবল হয়তো সামান্য সম্পাদনার প্রয়োজন পড়বে।

বাংলাদেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা গ্রন্থাগার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করার জন্য এমনিতেই এ রকম একটি অনলাইন বিশদ বইয়ের ক্যাটালগ খুবই দরকার। গ্রন্থাগারগুলো ছাড়াও এই ক্যাটালগ গবেষকসহ আরও বহু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাজে লাগবে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র প্রতিবছর ফ্রাঙ্কফুর্টের মতো যেকোনো বিদেশি বইমেলার জন্য সেখান থেকে বাছাই বইয়ের একটি ছোট পুস্তিকা মুদ্রণ করে নিতে পারে।

আরেকটি ছোট্ট অভিজ্ঞতা

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা চলছে। একদিন একজন শোভন চেহারার এক ভদ্রলোক এলেন বাংলাদেশের স্টলে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব বই দেখলেন। তারপর কেমন ইতস্তত করতে লাগলেন। একটু যেচে পড়েই জানতে চাইলাম, তিনি কি কিছু বলতে চান?

ভদ্রলোক ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরের প্রধান গ্রন্থাগারটির দায়িত্বে আছেন। তিনি জানালেন, বাংলাদেশের এমন কিছু বই এখানে দেখতে পেয়েছেন, যেগুলো তাঁর পাঠকদের প্রয়োজন পড়তে পারে বলে তিনি মনে করছেন, কিন্তু এখানে তো বই বিক্রি হয় না। কোনোভাবে কি বইগুলো পাওয়া যেতে পারে?

আমরা বললাম, ‘বেশ তো, আপনি মেলার শেষ দিন এখানে চলে আসুন না। এসে নিয়ে যান।’

শেষ দিন ভদ্রলোক এলেন। হাতে ব্যাগ। বেশ বোঝা যাচ্ছে, অন্যান্য স্টল থেকেও কিছু বই সংগ্রহ করেছেন। আমাদের স্টল থেকে তিনি চার–পাঁচটি বই নিলেন। মনে পড়ে, একটি বই ছিল রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে লেখা। আর আরেকটি বই সৈয়দ জামিল আহমেদের লেখা ইন প্রেইজ অব নিরঞ্জন: ইসলাম, থিয়েটার অ্যান্ড বাংলাদেশ। বাকিগুলোর কথা মনে নেই।

এর সবই অপরিমেয় সম্ভাবনার গল্প।

এসব অভিজ্ঞতা বলে, বাংলাদেশের বই নিয়ে আমাদের আন্তর্জাতিক বাজারে ঢোকার অনেক সুযোগ আছে। পরস্পর সংযুক্ত এই বিশ্বে আমরা নানা কিছু নিয়ে একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছি। পৃথিবীর যে কোণেই থাকুক না কেন, মানুষ বহু কিছু নিয়ে জানতে চায়। জানানোর মতো কিছু তথ্য আমাদের কাছেও আছে। মানুষ গল্পও শুনতে চায়, শিশু থেকে বয়সী মানুষ। আমাদের আছে বিশ্ববাসীকে তৃপ্তি দেওয়ার মতো কিছু অপূর্ব কাহিনির সম্ভার। অনেক কম খরচে সেসব কাহিনি আমরা তাঁদের শোনাতে পারি। বলতে পারি, এই হচ্ছে বাংলাদেশের গল্প। আর এভাবে বাংলাদেশের মানুষের জীবনের সংগ্রাম আর স্বপ্ন, আনন্দ আর বেদনাকে সঞ্চারিত করে দিতে পারি বিশ্ববাসীর কল্পনায়।

বইয়ের চেয়ে বিশ্বস্ত, অন্তরঙ্গ ও ভালোবাসাভরা শুভেচ্ছাদূত বাংলাদেশের জন্য আর কে হতে পারে?