Thank you for trying Sticky AMP!!

চুরির দায়ে গাছে বেঁধে নির্যাতন

রাজশাহীর চারঘাটের জহিরুল ইসলামের দেড় বিঘার একটা পুকুর আছে। শুক্রবার দুপুরে ওই পুকুরেই নেমেছিল তিন কিশোর। তারপর ঠিক কী ঘটেছিল, তার দুই রকম ভাষ্য পাওয়া যায়। ওই তিন ছেলের একজনের বাবার দাবি, পুকুরে স্রেফ গোসল করতে নেমেছিল তারা। আর পুকুরমালিকের দাবি, না বলে ওরা মাছ ধরতে নেমেছিল। ছুটে গিয়ে একজনকে ধরেও ফেলেন তিনি। মালিকের দাবি, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ১৩ বছরের ওই কিশোরের কাছে প্রায় দুই কেজি মৃগেলও পাওয়া গেছে। মারধর করে পুকুরের পাশেই একটি গাছের সঙ্গে তাকে বেঁধে রাখেন। ঘটনার এখানেই শেষ নয়, গাছে বাঁধা ওই কিশোরের ছবি তুলে নিজেই ফেসবুকে পোস্ট করেন।

বাবার দাবি সত্য হলে ওই কিশোরের অপরাধটা কী, তা–ই তো বোঝা গেল না। পুকুরে গোসল করা নিশ্চয় অপরাধ নয়। অনেকেই ওই পুকুরে গোসল করে। চৈত্রের কাঠফাটা গরমে পুকুর দেখলেই পানিতে নামার তাড়না যেকোনো কিশোরেরই হতে পারে। আর পুকুরমালিকের দাবিও যদি সত্য হয়, আসলেই যদি মাছ চুরি করে থাকে ওই কিশোর, তাহলেও কি তাকে ওইভাবে মারতে পারেন মালিক? আমাদের বিচারে পারে না। অথচ কাজটি জহিরুল ইসলামের কাছে মোটেই বেআইনি মনে হয়নি, বরং মনে হয়েছে, অল্প শাস্তি দিয়ে কিশোরটিকে যদি সংশোধন করা যায়। ফলে অকপটেই শিশুটিকে গাছে বেঁধে মারধর করার কথা স্বীকার করেন তিনি। কে জানে, তিনি নিজেও হয়তো কখনো বাবা-মা বা নিকটজনের হাতে একই কায়দায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাই সারা জীবন যেভাবে দেখে এসেছেন, সেই পথেই হেঁটেছেন জহিরুল। তঁার কাছে এটাই স্বাভাবিক। এতই স্বাভাবিক ও ন্যায্য যে কাজটার ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করতেও দ্বিধা করেননি। উল্টো তঁার মনে হয়েছে, কাজটায় মাছচাষিরা সচেতন হবেন। তঁার কাছে সচেতন করার এটাই মোক্ষম পদ্ধতি। শারীরিক নিগ্রহের বাইরেও যে অন্য শাস্তি থাকতে পারে, অপরাধটার জন্য যে জরিমানা করা যায়, বাবা-মায়ের কাছে বিচার দেওয়া যায়, এমনকি বুঝিয়ে-সুঝিয়েও যে এই কাজ থেকে ছেলেটিকে বিরত রাখা যায়, এসবের কিছুই তঁার মাথায় আসেনি।

সময় যে বদলে গেছে, কোনো অবস্থাতেই যে মানুষের গায়ে হাত তোলা যাবে না, এই একুশ শতকেও এই শিক্ষাটা তঁাকে আমরা দিতে পারিনি। ফলে প্রায়ই আমাদের পড়তে হয় শিক্ষকের হাতে ছাত্র নিগ্রহের খবর, শুনতে হয় গৃহকর্ত্রীর হাতে গৃহকর্মী নির্যাতনের বিবরণ।

তবে আশার কথা, এই ধরনের ঘটনায় অন্যত্র যেমনটি দেখা যায়, প্রতিকারের ব্যবস্থা না করে তামাশা দেখে লোকজন, ক্ষেত্রবিশেষে নির্যাতনেও অংশগ্রহণ করে, চারঘাটে তেমনটা হয়নি। কিশোরটিকে ওই অবস্থায় দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেছেন লোকজন।