ইসলাম ধর্ম

হজ, ঈদ ও কোরবানির বিধিবিধান

হিজরি চান্দ্রবর্ষের দ্বাদশ মাস জিলহজ। জিলহজ মাসে রয়েছে অতিগুরুত্বপূর্ণ তিনটি ইবাদত—হজ, ঈদ ও কোরবানি। এই তিন ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য এগুলোর বিধান জানা জরুরি।

জিলহজের ৭ তারিখে হাজিরা হজের প্রথম ফরজ ‘ইহরাম’সহ মিনাতে যাবেন। ৮ জিলহজ মিনায় অবস্থান করবেন। ৯ জিলহজ আরাফাতে অবস্থান করবেন, যাকে ‘অকুফে আরাফা’ বলা হয়, যা হজের তিনটি ফরজের প্রধান ফরজ। এদিন সূর্যাস্তের পর আরাফাত থেকে মুজদালিফায় যাবেন।

এখানে ভোরে অবস্থান করা ওয়াজিব। মুজদালিফা থেকে তাঁরা ৭০টি পাথর নুড়ি সংগ্রহ করবেন। ১০ জিলহজ ফজরের পর মুজদালিফা থেকে মিনায় গিয়ে জামারাতে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর মারবেন। এরপর ওয়াজিব আমল হিসেবে তামাত্তু হজকারীরা ‘দমে শোকর’ বা কোরবানি করবেন। তারপর মাথা মুণ্ডন করে বা চুল কর্তন করে ইহরাম সমাপ্ত করবেন। এটিও ওয়াজিব।

১১ ও ১২ জিলহজ তিন শয়তানকে পাথর মারতে হবে। ১২ জিলহজের মধ্যে তাওয়াফে জিয়ারত সম্পন্ন করা হজের তৃতীয় ও শেষ ফরজ। ফরজ তাওয়াফের পর সাফা ও মারওয়া সাঈ করা ওয়াজিব।

ইসলামি পরিভাষায় কোরবানি হলো জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট পশু জবাই করা

হারাম শরিফের বাইরে অবস্থানকারী হাজিদের জন্য বিদায়ী তাওয়াফ করা ওয়াজিব। হজের আগে বা পরে মদিনা শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর রওজা মোবারক জিয়ারত করা ওয়াজিব।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ ও রাসুল (সা.)–এর পক্ষ থেকে হজে আকবর, তথা মহান হজের দিবসে মানুষের প্রতি এই ঘোষণা যে মুশরিকদের সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল দায়মুক্ত।’ (সুরা-৯ তওবা, আয়াত: ৩)

জিলহজ মাসের ১০, ১১ বা ১২ তারিখে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’ (সুরা-১০৮ কাউছার, আয়াত: ২)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘সব সম্প্রদায়ের জন্য আমি কোরবানির বিধান দিয়েছি, তিনি তাদের জীবনোপকরণস্বরূপ যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর ওপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে (জবাই করে)।’ (সুরা-২২ হজ, আয়াত: ৩৪)

ইসলামি পরিভাষায় কোরবানি হলো জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট পশু জবাই করা।

হজরত ইব্রাহিম (আ.)–এর কোরবানি ইতিহাসে বিখ্যাত। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা, ‘সে {ইবরাহিম (আ.)} বলল, “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নেক সন্তান দান করুন।” আমি তাকে সহিষ্ণু পুত্রের সুসংবাদ দিলাম, অতঃপর সে {ইসমাইল (আ.)} যখন তার পিতার সঙ্গে কর্ম সম্পাদনের বয়সে উপনীত হলো, তখন ইব্রাহিম (আ.) বললেন, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি (ওহি নির্দেশ পেয়েছি), তোমাকে আমি জবাই (কোরবানি) করছি, তোমার অভিমত কী?’

সে বলল, ‘হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন, তাই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন। যখন তারা আনুগত্য প্রকাশ করল এবং তার পুত্রকে কাত করে শোয়াল, তখন আমি ডেকে বললাম, “হে ইব্রাহিম! তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করলে!”এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয় এ ছিল এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাকে মুক্ত করলাম এক মহান কোরবানির (পশুর) বিনিময়ে। এটা পরবর্তীদের জন্য স্মরণীয় করে রেখে দিলাম। ইব্রাহিম (আ.)–এর জন্য অভিবাদন! আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও শুভেচ্ছা!’ (সুরা-৩৭ সফফাত, আয়াত: ১০০-১১০)

একটি কোরবানি হলো—একটি ছাগল কিংবা একটি ভেড়া কিংবা একটি দুম্বা। আর গরু, মহিষ ও উটের ক্ষেত্রে কমপক্ষে সাত ভাগের এক ভাগ।

কোরবানির জন্য ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স কমপক্ষে এক বছর হতে হবে। গরু ও মহিষের বয়স কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে। উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে।

দুম্বার বয়স এক বছর পূর্ণ না হলেও যদি এক বছরের মতো হৃষ্টপুষ্ট হয়, তা দিয়ে কোরবানি হবে।

গরু, মহিষ বা উটে অংশ হিসেবে কোরবানির সঙ্গে আকিকাও করা যায়। একই পরিবারের বা বিভিন্ন পরিবারের সদস্যরা একই পশুর সাত অংশে শরিক হতে পারবেন। নারী যদি সামর্থ্যবান বা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন, তাঁর জন্যও কোরবানি ওয়াজিব। হিজড়ারা মূলত নারী অথবা পুরুষ। তাই তাঁরাও প্রাপ্তবয়স্ক এবং সামর্থ্যবান হলে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের মতো প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কোরবানি ওয়াজিব হবে।

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

    যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

    smusmangonee@gmail.com