Thank you for trying Sticky AMP!!

এত দিনেও কেন সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি

সম্পাদকীয়

২০০৭ সালে চট্টগ্রামের মতিরঝর্ণায় ভয়াবহ পাহাড়ধসে ১২৭ জনের প্রাণহানির পর সরকারের গঠিত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি ৩০টি সুপারিশ দিয়েছিল। কিন্তু ১৫ বছর পরও সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি। এর ফলে ফি বছর পাহাড়ধস এবং মানবিক বিপর্যয় হচ্ছে। সর্বশেষটা ঘটতে দেখলাম চট্টগ্রামে।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, গত শুক্রবার গভীর রাতে বৃষ্টির মধ্যে চট্টগ্রাম নগরের আকবরশাহ থানার ১ নম্বর ঝিল বরিশালঘোনা ও ফয়’স লেকের লেকভিউ আবাসিক এলাকায় পৃথক পাহাড়ধসে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বরিশালঘোনায় পাহাড়ধসে যমজ শিশু তাসকিয়া ইসলাম তানহা ও তাকিয়া ইয়াসমিন তিন্নির মা ও খালা মারা গেছেন। মা শাহীনুর আকতার গুরুতর আহত হয়েও বুকে আগলে রাখায় প্রাণে রক্ষা পায় শিশু দুটি।

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা এবং কক্সবাজারে পাহাড়ধসে এ ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঘটেই চলেছে। ছোটখাটো দুর্ঘটনাগুলোয় কেউই তেমন গুরুত্ব দেয় না। বড় বিপর্যয় হলেই সব পক্ষ সোচ্চার হয়। ২০০৭ সালের পর ২০১৭ সালে রাঙামাটিসহ ছয় জেলায় পাহাড়ধসে ১৬৮ জনের প্রাণহানির পর আবার কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটিও বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল।

পাহাড়ধস বন্ধে ২০০৭ ও ২০১৭ সালে সরকারের কমিটিগুলো যেসব সুপারিশ করেছে, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পাহাড়ধসপ্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের পাকাপাকিভাবে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা, পাহাড়ধসের প্রভাবকে প্রশমিত করে—বেশি করে সে রকম গাছ লাগানো, পাহাড় কাটা বন্ধ করা ও জড়িত ব্যক্তিদের প্রতিহত করার জন্য পাহাড়ের চতুর্দিকে বেড়া দেওয়া।

এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি। উল্টো পাহাড় কাটা, নির্বিচার বৃক্ষনিধনের মতো ঘটনা প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে। এ কাজে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাও জড়িত থাকছে। আবার ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়ার পেছনে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যুক্ত থাকায় সেটা বন্ধ করা যায় না। প্রশাসন মাইকিংয়ের মাধ্যমে সতর্ক করে কিংবা কিছু উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু দেখা যায়, উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হলেই আবার নতুন করে ঘরবাড়ি উঠে যায়।

পাহাড়ধস বন্ধ করতে হলে যেকোনো মূল্যে সরকারের তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রশ্ন হলো, এত বছরেও কেন সেগুলো বাস্তবায়ন করা যায়নি? এ বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসে যাতে আর কোনো প্রাণহানি না হয়, সে জন্য ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর প্রশাসনকে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।