ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করতে হবে

গ্রামীণ অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

কোভিড-১৯ মোকাবিলা এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকারের দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে আয়োজিত দ্বিতীয় আলোচনা সভা হয় গত বৃহস্পতিবার। এ ধরনের আলোচনায় নীতিনির্ধারকদের পাশাপাশি অংশীজন ও বিশেষজ্ঞরাও উপস্থিত থাকেন। এর মাধ্যমে অপর মত জানা যায়। ওই দিনের আলোচনার প্রতিপাদ্য ছিল ‘কর্মসৃজন ও গ্রামীণ অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন’।

বক্তাদের কথায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশ মানে শুধু শহরাঞ্চল নয়। এখনো সিংহভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। গ্রামের অর্থনীতি চাঙা করা এবং কর্মসংস্থান বাড়ানোর প্রতিই সরকারকে অধিক মনোযোগী হতে হবে। এ কথা ঠিক যে করোনাকালে শহর ও গ্রামাঞ্চল উভয়ের অর্থনীতি ও জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের ছোট ছোট শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্যোক্তারা বিপাকে পড়েছেন। এ অবস্থায় গ্রামাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল, তা ছিল বাস্তবমুখী পদক্ষেপ। প্রণোদনা পেলে বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার মালিক বা অন্য উদ্যোক্তারা ফের উৎপাদনে যেতে পারবেন।

সরকারঘোষিত ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে ৬টি প্যাকেজ কর্মসৃজন ও গ্রামীণ অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলো হচ্ছে পাঁচ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কর্মসূচি, ৫ হাজার কোটি টাকার কৃষি পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচি, ৩ হাজার কোটি টাকার কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচি, ১ হাজার ২৫৭ কোটি টাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সরাসরি নগদ সহায়তা কর্মসূচি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের (এসএমই) শিল্প এবং কুটিরশিল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার চলতি মূলধন ঋণ। এ ছাড়া রয়েছে এসএমই খাতের জন্য ঋণঝুঁকি কর্মসূচিও।

করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সরকারের দেওয়া ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার তুলনায় গ্রামীণ খাতে ঋণের পরিমাণ খুবই কম। তা–ও যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা না পান, তাহলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হবে কীভাবে? সূত্রমতে, এ খাতে প্রণোদনার টাকা বিতরণ না হওয়ার কারণ, ব্যাংকের সঙ্গে অধিকাংশ উদ্যোক্তার যোগাযোগ না থাকা। এ ছাড়া ঋণের পরিমাণ কম বলে ব্যাংকগুলোও উৎসাহ দেখায় না। তারা তেলা মাথায় তেল দিতেই বেশি উৎসাহী।

ছোট উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণ পান না বলে উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এবার খোদ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘যারা ঋণ পাওয়ার যোগ্য তাদের কাছে ঋণ যাচ্ছে না।’ এর জন্য তিনি ব্যাংকগুলোকে দায়ী করে বলেছেন, ‘আইন আইনই। আইনকে অসম্মান করা যাবে না। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, কোনো কোনো ব্যাংক আইন মানছে না। আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে প্রকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছাতে না পারা।’

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আলোচনা সভায় উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন। আমরা আশা করছি, এ ব্যাপারে তিনি ভূমিকা রাখবেন। যেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে তাদের পুরস্কার এবং যারা করতে পারবে না, তাদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। উদ্যোক্তারা নাগালের বাইরে থাকলে ব্যাংকগুলো এনজিওগুলোর সহায়তা নিতে পারে। কৃষিঋণের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি সুফল দিয়েছে। খাতওয়ারি প্রাক্কলিত প্রণোদনা ঋণ দিতে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করতে হবে। কেবল ঋণ আদায় নয়, ঋণ প্রদানেও নজরদারি বাড়াতে হবে।