Thank you for trying Sticky AMP!!

বায়ু ও শব্দদূষণ

‘যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু’—এই কথা রবীন্দ্রনাথ রূপকার্থে লিখেছিলেন, বায়ুদূষণের কথা ভেবে লেখেননি। কারণ, বায়ুদূষণ কিংবা শব্দদূষণ বলতে এখন যা বোঝায়, রবীন্দ্রনাথের কালে অন্তত এই অঞ্চলে তা ছিল না। এখন ভারী কারখানা, ইটের ভাটা, রাসায়নিক প্ল্যান্ট, হাইড্রোলিক হর্ন, মাইকের উচ্চ শব্দ, ইত্যাদির উৎপাতে কুবাতাস ও কুশব্দ এতটাই বেড়েছে যে বিশেষত ঢাকাবাসী শ্বাসরোধকর অবস্থায় পড়ে গেছে।

পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্রিন পিস তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে যে তথ্য দিয়েছে তা ভয়াবহ। তারা বলছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। বায়ুদূষণজনিত রোগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ৯৬ হাজার শিশুর অকালমৃত্যু হয়েছে। বছরে ৪০ লাখ মানুষ অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসছে চিকিৎসা নিতে। বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজ্যুয়ালের হিসাবে, গত বুধবার ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় ছিল, দূষণের দিক থেকে যা বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ।

এর পাশাপাশি আছে শব্দদূষণ। গবেষণায় দেখা গেছে, শব্দের সহনীয় মাথা ৫০ ডেসিবেল হলেও ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় ৯০ ডেসিবেলের বেশি মাত্রায় শব্দ হয়। কোথাও কোথাও তা ১২০ ডেসিবেলও ছাড়িয়ে যায়। ঢাকার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এখন শব্দদূষণে আক্রান্ত। এভাবে শব্দদূষণ অব্যাহত থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ কানে কম শুনবে। এদের একটি অংশ পুরোপুরি বধির হয়ে যাবে।

এ কথা ঠিক যে বায়ুদূষণ হঠাৎ করে ব্যাপক মাত্রায় কমিয়ে আনা কঠিন। কারণ, এর জন্য দূষণ ঘটানো বহু ইটের ভাটা, কারখানা, যানবাহন ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে। গত দেড় বছরে অবৈধ ইটভাটাগুলোর ৬২ শতাংশ বন্ধ করা গেছে। কিন্তু কিছু কিছু উদ্যোগ আছে, যা দ্রুত নেওয়া যায়। শহরে যখন-তখন যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়টিকে পরিকল্পনার আওতায় আনা এবং দূষণ ঠেকাতে কিছু নিয়মকানুন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সুযোগ আছে। বিশ্বের বড় শহরগুলোতে পাকা রাস্তার বাইরের সব জায়গায় ঘাসের আচ্ছাদনের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। ঢাকার ক্ষেত্রে সে উদাহরণ অনুসরণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সড়ক বিভাজকে গাছ লাগানো হয়। কিন্তু সেই বিভাজকের মাটি ঘাস দিয়ে ঢাকা থাকে না, এর ধুলা বায়ুদূষণে ভূমিকা রাখে। গাছ লাগানোর পাশাপাশি গাছে নিয়মিত পানি দেওয়া এবং ঢাকার সব ফাঁকা জায়গা ঘাসের আচ্ছাদনে ঢেকে দেওয়ার প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার।

অন্যদিকে শব্দদূষণ তাৎপর্যপূর্ণ মাত্রায় কমিয়ে আনার জন্য সরকারের সদিচ্ছা ও কিছু উদ্যোগ যথেষ্ট। বিশেষ করে গাড়ির হর্ন এবং মাইকের যথেচ্ছ ব্যবহার প্রশাসন চাইলেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। যেহেতু এর সঙ্গে অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্পর্ক নেই বললেই চলে, সেহেতু এটি করতে গেলে প্রশাসনকে বড় ধরনের কোনো চাপের মুখেও পড়তে হবে না।

মোদ্দা কথা, ঢাকা শহরকে বায়ু ও শব্দদূষণের হাত থেকে বাঁচাতে প্রথম দরকার নীতিনির্ধারকদের মানসিকতার পরিবর্তন। দূষণাসুরকে বধ করতেই হবে, এই লক্ষ্যে অটল থেকে যদি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলেই শ্বাসরোধকর অবস্থা থেকে ঢাকা বেরিয়ে আসবে।