সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

শরীয়তপুরে সড়ক নির্মাণ প্রকল্প

দ্রুত জমি অধিগ্রহণ শেষ করুন

শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে ইব্রাহিমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার সড়কটি কেবল একটি যোগাযোগ অবকাঠামো নয়; এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের জীবনযাত্রা, বাণিজ্য ও যোগাযোগের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত একটি অর্থনৈতিক ধমনি। সেই সড়ক আজ পাঁচ বছরের অবহেলা, প্রশাসনিক অদক্ষতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।

৯৫ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের জন্য ৪৩১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এত বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হওয়ার পরও এখনো ৪৬ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ হয়নি। এই ব্যর্থতার দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই; দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরই।

প্রকল্প অনুমোদনের সময়ই স্পষ্ট ছিল, জমি অধিগ্রহণ এই সড়ক নির্মাণের প্রধান পূর্বশর্ত। অথচ বাস্তবে দেখা গেল, ৪৯ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করেই বরাদ্দের প্রায় পুরো টাকা শেষ হয়ে গেল। অবশিষ্ট রইল মাত্র দেড় কোটি টাকার মতো, যা দিয়ে বাকি ৪৬ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ অসম্ভব।

প্রশ্ন জাগে,  প্রাক্কলন কি বাস্তবসম্মত ছিল? নাকি শুরু থেকেই উদাসীনতা ও দায়সারা মানসিকতা প্রকল্পটিকে ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দিয়েছে?

এই প্রশাসনিক ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় শিকার জমির মালিকেরা। ভূমি অধিগ্রহণ আইনের নোটিশ ঝুলে আছে বছরের পর বছর, অথচ ক্ষতিপূরণের টাকা নেই। ফলে মানুষ ঘর মেরামত করতে পারে না, জমি বিক্রি করতে পারে না, জীবনের স্বাভাবিক সিদ্ধান্তগুলো আটকে যায় অনিশ্চয়তার দেয়ালে। এটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববোধের চরম ঘাটতির দিকেই আঙুল তোলে।

ভোগান্তির আরেক প্রান্তে রয়েছে সড়ক ব্যবহারকারীরা। খানাখন্দে ভরা এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ট্রাক, বাস ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। সময় নষ্ট হচ্ছে, খরচ বাড়ছে, দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে। একটি আঞ্চলিক সড়কের এই দশা শুধু স্থানীয় সমস্যা নয়; এটি জাতীয় অর্থনীতির প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

এত বছরেও মাত্র ছয় কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হয়েছে। এটি উন্নয়নের নয়, বরং ব্যর্থতার প্রতীক। ভূমি অধিগ্রহণ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদার কাজ শুরু করেননি, আবার নির্মাণ ব্যয় পুরোনো বাজারদরে নির্ধারণ করায় আগ্রহী ঠিকাদারও পাওয়া যাচ্ছে না।

এ সবই প্রশাসনিক সমন্বয়হীনতা ও দূরদর্শিতার অভাবের ফল। প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়মতো ডিপিপি সংশোধন, বাস্তবসম্মত ব্যয় নির্ধারণ এবং জমি অধিগ্রহণে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ—এ সবই ছিল কর্তৃপক্ষের করণীয়, যা তারা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

এখন প্রয়োজন স্পষ্ট ও কঠোর পদক্ষেপ। কেন ৪৩১ কোটি টাকা খরচের পরও ৪৬ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ হলো না—এর দায় নির্ধারণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর, পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে দ্রুত ডিপিপি সংশোধন করে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ, জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন এবং সড়ক নির্মাণের কাজ পুনরায় শুরু করতে হবে।