সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

শুভ বড়দিন

দূর হোক হিংসা, দূর হোক অশান্তি

আজ শুভ বড়দিন। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়; বরং মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক অনন্য আলো জ্বলে ওঠার দিন। আজ থেকে ২ হাজার ২৫ বছর আগে ফিলিস্তিনের বেথলেহেম নগরের এক সাধারণ গোয়ালঘরে জন্ম নিয়েছিলেন যিশুখ্রিষ্ট। তাঁর আগমন মানবজাতিকে নতুন করে ভালোবাসা, ক্ষমা ও সহমর্মিতার অর্থ শিখিয়েছিল।

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের খ্রিষ্টান সম্প্রদায় আজ এই দিন উদ্‌যাপন করছে গভীর শ্রদ্ধা, আনন্দ ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে। তারা স্মরণ করছে সেই যিশুকে, যিনি মানবজাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে এসেছিলেন; হিংসা, বিদ্বেষ ও অমানবিকতার অন্ধকার ভেদ করে মানুষের সামনে খুলে দিতে চেয়েছিলেন ভালোবাসা, করুণা ও মিলনের পথ। যিশুর জীবন ছিল নিঃস্ব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি আশাহীনদের মনে জাগিয়েছেন আশা, ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত মানুষকে দিয়েছেন ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস।

যিশু যে মানবিক আদর্শের বাণী রেখে গেছেন, তা কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম বা জাতির জন্য সীমাবদ্ধ নয়। তা সর্বকালের, সব মানুষের জন্য প্রযোজ্য। যুদ্ধ, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের বিপরীতে তিনি উচ্চারণ করেছিলেন ক্ষমার ভাষা। অমানবিক নির্যাতন ও নিগ্রহের শিকার হয়েও তিনি পাল্টা আঘাতের কথা বলেননি; বরং সমগ্র মানবজাতির দুঃখ-যন্ত্রণা নিজের মধ্যে ধারণ করে মানবতার এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে চেয়েছিলেন। তাই যিশুর শিক্ষা আজও মানুষকে প্রকৃত মানব হয়ে ওঠার পথ দেখায়।

বড়দিনকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বহু দেশে উৎসবের রং ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এ উৎসবমুখরতার আড়ালেও বিশ্বজুড়ে রয়ে গেছে গভীর অস্থিরতা।

আজকের পৃথিবী সংঘাত ও সহিংসতায় ক্লান্ত। শান্তিচুক্তির পরও যিশুর জন্মভূমি ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধ হয়নি। সুদানে গণহত্যা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়েই সংঘাত–হানাহানি বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যা শুরু করেছে, সেটাকে যুদ্ধই বলা যায়। এমন সময়ে যিশুর শান্তির বাণী আরও গভীর অর্থ বহন করে।

বাংলাদেশের বাস্তবতাও কম উদ্বেগজনক নয়। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদলের পর যে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল, তার রেশ চলতি বছরেও কাটেনি। জুলাই আন্দোলনের নেতা ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির নিহত হওয়া; এরপর প্রথম আলো, ডেইলি স্টার কার্যালয়সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা জাতিকে নতুন করে শঙ্কিত করেছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন ঘিরে জনমনে রাজনৈতিক অশান্তির আশঙ্কাও রয়েছে।

এ অস্থির বাস্তবতায় যিশুর অহিংসা, সহনশীলতা ও শান্তির দর্শন আমাদের জন্য হতে পারে গভীর অনুপ্রেরণার উৎস।

আজ বড়দিনে কোটি কোটি মানুষ যিশুর বন্দনায় কণ্ঠ মেলাবেন, প্রার্থনায় নত হবেন পৃথিবী থেকে হিংসা, বিদ্বেষ ও অশান্তি দূর করার আকাঙ্ক্ষায়। এই পবিত্র দিনে আমরা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। বড়দিনের আলোয় আলোকিত হোক পৃথিবী। দূর হোক যুদ্ধ, সহিংসতা ও অমানবিকতা। বিজয়ী হোক শান্তি, মানবতা ও ভালোবাসা।