Thank you for trying Sticky AMP!!

‘একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’—এই স্লোগান কীভাবে দেয়, প্রশ্ন নুরুলের

বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘ডাকসুতে বর্বর হামলার দুই বছর এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী-নির্যাতনের বিরুদ্ধে’ সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্র অধিকার পরিষদ

‘একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’— ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে দেওয়া এই স্লোগানের কঠোর সমালোচনা করেছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক। এই স্লোগান যাঁরা দেন, তাঁরা কি সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলোর এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম পরিচালনার বিপক্ষে অবস্থান রয়েছে।

ছাত্রলীগের কর্মীদের মারধরের শিকার হওয়ার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবির নিয়ে কথা বলেন নুরুল হক।

সদ্য গঠিত গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল বলেন, ‘রাজু ভাস্কর্যে দাঁড়িয়ে ছাত্রলীগ স্লোগান দেয়, একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর। শিবির যদি নিষিদ্ধ সংগঠন হয়, তাদের আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করুন। আমরাও একমত। অপকর্ম থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু একটা সংগঠন কীভাবে মানুষকে জবাই করার স্লোগান দেয়? এদের কি সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ বলে মনে হয়?’

আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন নিয়ে নুরুল হক বলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে, কিন্তু কোনো বর্তমান নেই। গত ২০ বছরে এমন কোনো অঘটন নেই, যা ছাত্রলীগ করেনি। অভিভাকদের বলব, আপনার সন্তান এই গুন্ডা-পান্ডাদের সঙ্গে মিশে খুনি হয়ে যাচ্ছে কি না, এটা খেয়াল রাখতে হবে। ছাত্রলীগ নামের মেশিনে ঢুকে মেধাবী শিক্ষার্থীরা খুনি হয়ে যাচ্ছে। এই মেশিন ভাঙতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আধুনিক দাসপ্রথা তৈরি করেছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের এই দুর্বৃত্তায়ন আর মেনে নেওয়া যাবে না।’

২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর ডাকসু ভবনে নুরুল হক ও তাঁর সহযোগীদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা। এতে নুরুলসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। সেই ঘটনা নিয়ে ‘ডাকসুতে বর্বর হামলার দুই বছর এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী-নির্যাতনের বিরুদ্ধে’ ছাত্র অধিকার পরিষদ এই সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে নুরুল হক বলেন, ছাত্রলীগের সঙ্গে তখন তাদের কোনো বিরোধ ছিল না, পাল্টাপাল্টি কোনো কর্মসূচি ছিল না। তবু ছাত্রলীগ হামলা করেছিল ‘সরকারের উচ্চ পর্যায়ের’ নির্দেশনায়। তিনি বলেন, ‘এটি কোনো সাধারণ ঘটনা ছিল না। এ দেশের ভারতীয় এজেন্টদের পৃষ্ঠপোষকতায় এটি ঘটেছিল। শুধু এনআরসি–সিএএ নিয়ে প্রতিবাদ করায় ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় র-এর দালাল ও উগ্র হিন্দুত্ববাদের দোসরেরা সেদিন ডাকসু ভবনে আমাদের ওপর হামলা ও তাণ্ডব চালিয়েছিল।’

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে বলে মন্তব্য করেন নুরুল হক। তিনি বলেন, ‘আমি বলছি, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। এই মাফিয়াদের নির্মম পতন হবে। সেদিন প্রতিটি আঘাতের কড়ায়-গন্ডায় শোধ নেওয়া হবে। দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনা হবে।’

দুই বছর আগে ডাকসুতে হামলার আলোকচিত্র নিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন নুরুল হক

র‍্যাব ও এই বাহিনীর কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নুরুল হক বলেন, নিষেধাজ্ঞা আরও আসবে। ছাত্রলীগের সব অপকর্মের তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করুন। ছাত্রলীগকেও আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হবে। শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ, দুর্বৃত্তদের এই সংগঠনকে পরিত্যাগ করুন। ছাত্রলীগের মধ্যে ভদ্র, মার্জিত, মেধাবী ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন যাঁরা আছেন, তাঁদের বলব যে টিকিয়ে রাখতে চাইলে ছাত্রলীগের এই দুর্বৃত্ত চরিত্র বদল করতে হবে। অন্যথায় এ দেশে ছাত্রলীগও নিষিদ্ধ হবে।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে গণ অধিকার পরিষদের নেতা মুহাম্মদ রাশেদ খান ও ফারুক হাসান, ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসাইন প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশের পাশাপাশি ডাকসু ভবনে হামলার ছবি নিয়ে রাজু ভাস্কর্যেই একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী করে ছাত্র অধিকার পরিষদ। সমাবেশ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ মিছিলও করে তারা।