রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট। ঢাকা, ২৩ নভেম্বর
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট। ঢাকা, ২৩ নভেম্বর

বিদেশিদের সঙ্গে বন্দর চুক্তি বাতিল না করলে ৪ ডিসেম্বর যমুনা ঘেরাও: বাম জোট

বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দেশের বন্দরগুলো নিয়ে করা চুক্তি ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে বাতিল না করলে ৪ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। আজ রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।

বাম জোটের সমন্বয়ক বলেন, বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রণীত সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) আইনের ৩৪ ধারায় বলা আছে, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের আগে চুক্তির শর্ত প্রকাশ করা যাবে না।

বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘শেখ হাসিনার করা আইন অনুযায়ী আপনারা চুক্তির শর্ত প্রকাশ করেননি। কিন্তু চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর তো প্রকাশে কোনো বাধা নেই। সরকার সেটাও করেনি। চুক্তি সম্পাদনের পরেও প্রকাশ না করা গোপন উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত করে। সরকারের এই গোপনীয়তা প্রমাণ করে, চুক্তির মধ্যে এমন কিছু আছে, যা জনগণের সামনে আনতে সরকার সাহস পাচ্ছে না।...এ জন্যই আমরা সন্দেহ করি—এখানে দেশের স্বার্থ নেই, আছে ব্যক্তিগত বা আন্তর্জাতিক স্বার্থরক্ষা।’

সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, ‘আমরা দেখি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান প্রায়ই বলেন, দেশে আইনের শাসন, ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। চুরি করে, গোপন করে, দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে কখনো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয় না। যে দেশে গোপনে চুক্তি করা হয়, চুক্তিতে কী লেখা আছে, তা জনগণের সামনে প্রকাশ করা হয় না, সে দেশে কীভাবে আপনি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান।’

সিপিবির এই নেতা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দেবে। কিন্তু বন্দর চুক্তিতে এত তাড়াহুড়া করছে কেন? কারণ, তারা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাবেই। মানুষের কী হলো, দেশের কী হলো, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের কী হলো, সে বিষয়ে তারা কোনো কথা বলে না। সেটি তারা তোয়াক্কাও করে না।

বন্দরকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়াকে অস্বচ্ছ, অযৌক্তিক ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছেন বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার নিজেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের বন্দরকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে উপস্থাপন করছে, যা একটি স্বাধীন দেশের জন্য ‘কলঙ্কজনক অধ্যায়’ রচনা করছে।

সমাবেশে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, ‘২৪-এর চেতনা কি এই ছিল যে আমাদের দেশের প্রবেশমুখের বন্দরে টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেবে? আজকের সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, এটি সর্বনাশী উদ্যোগ। এটা একটা আত্মবিধ্বংসী উদ্যোগ, এটিকে আমরা কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না।’

জনগণকে না জানিয়ে করা চুক্তিকে ফ্যাসিস্ট তৎপরতা উল্লেখ করে মোশরেফা মিশু বলেন, ‘আজকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে কিসের চুক্তি হচ্ছে। বাংলাদেশ কী পাবে, আর বিদেশি কোম্পানিগুলো কী পাবে—সেটি জানার অধিকার বাংলাদেশের জনগণের থাকল না। এটাও একটা ফ্যাসিস্ট তৎপরতা। এক ফ্যাসিস্ট উৎখাত করেছে, এখন দেখছি আরেকটা ফ্যাসিস্টের উত্থান ঘটেছে। আমরা এ ফ্যাসিস্ট রেজিমের পুনরায় আগমন কোনোভাবেই বরদাশত করতে পারি না।’

সমাবেশ শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে পুরানা পল্টন মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ-মিছিল করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁরা ‘লালদিয়ার চরে বন্দর নির্মাণ ও পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল ইজারা চুক্তি বাতিল কর’, ‘নিউমুরিং, পতেঙ্গা ও মোংলা বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার পাঁয়তারা বন্ধ কর’সহ নানা দাবিসংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।