Thank you for trying Sticky AMP!!

যাঁদের পায়ে চপ্পল ছিল না, তাঁরা এখন রোলস-রয়েস গাড়িতে ঘুরছেন: মির্জা ফখরুল

জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে

যাঁদের পায়ে চপ্পল ছিল না, তাঁরা এখন রোলস-রয়েস গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আজকে সারা দেশের মানুষ জানে, আপনারা দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করছেন। মানুষ জানে, আপনাদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে।’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

আলোচনায় ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে বাড়ি কেনার অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আজকে, গতকালও আমি টেলিভিশনে দেখলাম যে বিদেশে, বিশেষ করে এখন লন্ডনে নাকি সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশিরা বাড়ি কিনছে। এরা কারা? এরা হচ্ছে নব্য আওয়ামী লীগাররা, যারা এ দেশের সম্পদ লুট করে এগুলো কিনছে।’

এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘সৎ জীবনযাপনের’ কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘শহীদ জিয়াউর রহমানের এ জায়গায় যে তিনি এত সৎ ছিলেন, মারা যাওয়ার সময় দেখা গেল, পাঁচ হাজার টাকা আছে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। তারা (আওয়ামী লীগ) ঠাট্টা-ইয়ার্কি করে বলে যে ছেঁড়া গেঞ্জি, ভাঙা স্যুটকেস। সত্যিকার অর্থেই তার ছেঁড়া স্যুটকেস ছিল। এভাবেই তিনি জীবনযাপন করতেন। এখানেই পার্থক্যটা।’

জিয়াউর রহমানকে ‘একটি অলৌকিক শক্তি, একজন ম্যাজিশিয়ান’ অভিহিত করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের পুরো চেহারা পাল্টে দিয়েছিলেন। বিভক্ত মানুষকে একত্র করেছিলেন। বন্ধ কারখানাগুলোতে তিন শিফটে চালু করে ‘শিল্পবিপ্লব’ ঘটিয়েছিলেন। খাল কেটে কৃষিতে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে বাইরে মানুষ যাচ্ছে, এখন যে রেমিট্যান্স নিয়ে বড়াই করা হয়, এটা শুরুই করেছিলেন জিয়াউর রহমান। যে গার্মেন্টস আজকে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করে, সেই গার্মেন্টসও শুরু করেছিলেন এই জিয়াউর রহমান। অথচ এই জিয়াউর রহমানকে খলনায়ক হিসেবে পরিচিত করার জন্য, তাঁকে জব্দ করার জন্য তারা বহু রকমের কায়দাকানুন করেছে। এখন নতুন একটা কাজ শুরু করেছে।’

জিয়াকে খলনায়ক বানাতে ‘মায়ের কান্না’

জিয়াউর রহমানকে ‘খলনায়ক’ বানানোর একটি চেষ্টা ‘মায়ের কান্না’ নামের সংগঠন বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন নিশ্চয়ই, একটা নতুন সংগঠন তৈরি করেছে “মায়ের কান্না”। “মায়ের ডাক” সত্যিকার অর্থে গুম হয়ে যাওয়া পরিবারগুলোর একটি সংগঠন। যখন এই পরিবারগুলোর শিশুদের চোখের পানিতে সমগ্র মানুষ উদ্বেলিত, তখন তারা নতুন একটা চক্রান্ত শুরু করেছে। সেটা কী, মায়ের কান্না। এরা কারা?’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘১৯৭৭ সালে বিমানবাহিনীর কিছু বিভ্রান্ত সৈনিক, তারা সেদিন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল। সেই অভ্যুত্থানে ১৭ জন অফিসারকে তারা লাইনে দাঁড় করিয়ে হত্যা করেছিল। তাদের সামরিক আদালতে বিচার হয়েছিল এবং অনেকের সাজা হয়েছিল। ১৯৭৭ সাল, এখন ২০২২-২০২৩ সাল। এত দিন পরে তাদের সামনে এনে... দেখেছেন আপনারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে রাষ্ট্রদূত তাঁরও গাড়ি তাঁরা ঘেরাও করে ফেলেছে। কোথায় ছিলেন এত দিন?’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এটা তো অত্যন্ত স্বাভাবিক কথা যে সেনাবাহিনীতে বা বিমানবাহিনীতে যখন বিদ্রোহ হয়, ক্যু করার চেষ্টা হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য বিচার হয় সামরিক আদালতে। এখন এই সমস্ত কথা বলে, বিভ্রান্ত করে জিয়াউর রহমানকে খাটো করার কথা বলে কোনো লাভ হবে না। কারণ, জিয়াউর রহমান এই দেশের গোটা চেহারা বদলে দিয়েছিলেন অতি অল্প সময়ের মধ্যে।’

‘স্মার্টফোনে বিজয় কি-বোর্ড, কত বড় ভয়ংকর কথা’

১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রকাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়েছিল বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা দেশকে একদলীয় শাসনব্যবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল। আজকে একইভাবে এই সরকার যারা নির্বাচন না করে, ২০১৪ সালে বিনা ভোটে এবং ২০১৮ সালে রাতে নির্বাচন করে ক্ষমতায় জোর করে বসে আছে এবং যেমন করে হোক, এরা আবার ক্ষমতায় যেতে চায়।’

‘এদের অপকীর্তির কথা বলে শেষ করা যাবে না’—উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকের পত্রিকায় দেখুন, বিজয় কি-বোর্ড বাধ্যতামূলক করার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন। আমাদের যে মোবাইল সেট, স্মার্টফোন—সেগুলোতে বিজয় কি-বোর্ডকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কারণ, এই বিজয় কি-বোর্ডের মালিকানা হচ্ছে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের। কত বড় ভয়ংকর কথা, দুর্নীতি কী পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। কখনই একজন মন্ত্রী তাঁর নিজের কোম্পানিকে সরকারের কোনো লাভজনক কাজে জড়াতে পারে না, এটাই হচ্ছে নিয়মনীতি, আইন। সেখানে তারা প্রকাশ্যে এ কাজটি করছে সরকারি ঘোষণা দিয়ে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম দলের নেতা-কর্মীদের জিয়াউর রহমানের আদর্শ এবং দূরদৃষ্টিকে সামনে নিয়ে এগোনোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘মানুষ জেগে উঠেছে। আমরা দেখেছি, মানুষ কীভাবে এই সরকারের পতন চায়। আমাদের জেগে উঠতে হবে, আমরা বাংলাদেশকে একটা উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র না করে ঘরে ফিরব না। জেল-জুলুম যা-ই আসুক, বিজয় অর্জন না করে ঘরে ফিরব না।’

আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথি ছিলেন। তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ, যিনি তিনটি জীবন-কর্মের অধিকারী ছিলেন। তিনি একজন সৈনিক, একজন রাষ্ট্রনায়ক, একজন সুদূরপ্রসারী চিন্তাবিদ, রাজনীতিবিদ। সৈনিক হিসেবে তিনি সফল, যিনি নিজের দেশমাতৃকার জন্য শুধু যুদ্ধ নয়, স্বাধীনতার জন্য ঘোষণা দিয়েছেন। যখন ২৫ মার্চের রাত্রে মানুষ সম্পূর্ণ দিশেহারা, যখন রাজনীতিবিদেরা সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ, তখন কিন্তু একজন মেজর জিয়া সাহস করে বিদ্রোহ করেন।’

বিএনপি আয়োজিত এই আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও শাহজাহান ওমর প্রমুখ।