তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে এই প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে এই প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে

সরকার ও ইসিকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে: জামায়াত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, ১৭ নভেম্বর রায়ে ফ্যাসিবাদীদের সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এতে প্রমাণিত হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করলে দিন শেষে আইনের মুখোমুখি হতে হয়।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এ কথা বলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে ঢাকার মগবাজারে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জামায়াতের এই প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোকেও তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে জানিয়েছেন এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ১৯৯১ সালে বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের সময়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছিল।

জামায়াতের সাবেক আমির প্রয়াত গোলাম আযম তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার ‘রূপকার’ ছিলেন উল্লেখ করে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করলে পরাজিত হওয়ার ইতিহাস নেই। এ কারণে জামায়াত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তোলে। একপর্যায়ে জামায়াত আন্দোলনে নেমেছিল। পরে ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়েছিল।

তবে ২০০৮ সালের নির্বাচন পক্ষপাতদুষ্ট হয়েছে বলে সমালোচনা আছে উল্লেখ করে জামায়াতের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছিল। শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচার হয়ে ওঠেন। এরপর ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে দেশে কলঙ্কিত নির্বাচন হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা না থাকলে কী হতে পারে, গত তিনটি নির্বাচনই তার উদাহরণ।

সব পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আদালত বলেছেন, চতুর্দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে। সংবিধান সংশোধনসহ অনেক কাজ জাতীয় নির্বাচনের পরে হবে।

জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসার মাধ্যমে গণতন্ত্র তার ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

জামায়াতের এই নেতা বলেন, পাঁচ বছর পরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে, মানুষ তাঁর ভোটাধিকার নিয়ে চিন্তিত থাকবেন না। জনগণ ভোট দেওয়ার মতো সুন্দর পরিবেশ পাবেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের কাজ করবে।

রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না ঘটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নির্বাচনের গুণগত পরিবর্তন ঘটবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, রাজনৈতিক দল, সরকার, নির্বাচনব্যবস্থা—সবকিছুতেই গুণগত পরিবর্তন আসতে হবে। কারণ, একটির সঙ্গে অন্যটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণ-আকাঙ্ক্ষার সরকার উল্লেখ করে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, এই সরকারের দায়িত্ব যেকোনো সরকারের চেয়ে কম নয়; বরং ক্ষেত্রবিশেষে অনেক বেশি। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, যোগ্য ও নিরপেক্ষদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া, বিগত তিনটি নির্বাচনে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের দায়িত্ব না দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে বলা হয়েছে। কমিশন এসব বিবেচনা করার অঙ্গীকার করেছে। জামায়াত এসব পর্যবেক্ষণ করবে এবং বিগত সময়ের মতো পাতানো নির্বাচনের চেষ্টা করা হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে।

ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস সেক্রেটারি আবদুস সাত্তার, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি আবদুল মান্নান, সহকারী প্রচার সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন প্রমুখ।