কোরআনের অনুপ্রেরণাদায়ী কয়েকটি আয়াত

মানুষের জীবনে অনুপ্রেরণার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিদিনের দুঃখ-কষ্ট, হতাশা ও সংগ্রামের মাঝেও মানুষ এমন কিছু শব্দ, কিছু শিক্ষা চায়, যা তাকে আবারও এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করে। বিশ্বের নানা দর্শন ও সাহিত্য অনুপ্রেরণা দিলেও মুসলিম জীবনের শ্রেষ্ঠ অনুপ্রেরণার উৎস হলো কোরআন। এটি কেবল একটি ধর্মগ্রন্থ নয়; বরং মানবজীবনের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা, হৃদয়ের প্রশান্তি, এবং অন্ধকারে আলোর দিশারী।

কোরআন কেন অনুপ্রেরণার শ্রেষ্ঠ উৎস?

১. আল্লাহর কালাম: কোরআনের প্রতিটি শব্দ সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। এতে রয়েছে সর্বোচ্চ সত্য ও সান্ত্বনা।

২. আত্মিক প্রশান্তি: দুঃখ-কষ্টের সময় কোরআনের আয়াত অন্তরে প্রশান্তি আনে।

৩. চিরন্তন দিকনির্দেশনা: মানবসভ্যতা যতই এগোক না কেন, কোরআনের নির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা কখনো পুরোনো হয় না।

অনুপ্রেরণাদায়ী কয়েকটি আয়াত

১. কষ্টের পর স্বস্তি

উচ্চারণ: ফা-ইন্না মা’আল উসরি ইউসরা। ইন্না মা’আল উসরি ইউসরা।

অর্থ: নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি রয়েছে। নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি রয়েছে। (সুরা শারহ, আয়াত: ৫-৬)

এ আয়াত জীবনের প্রতিটি হতাশাগ্রস্ত মানুষের জন্য মহৌষধ। এখানে বারবার জোর দিয়ে বলা হয়েছে—কষ্ট কখনো স্থায়ী নয়, বরং প্রতিটি কষ্টের পেছনেই রয়েছে আল্লাহর রহমতের দরজা।

২. হতাশ হয়ো না

উচ্চারণ: লা তাকনাতু মির রহমাতিল্লাহ।

অর্থ: আল্লাহর রহমত থেকে তোমরা হতাশ হয়ো না। (সুরা যুমার, আয়াত: ৫৩)

মানুষ যতই গুনাহ করুক না কেন, যদি আন্তরিকভাবে তওবা করে তবে আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করেন। হতাশা শয়তানের অস্ত্র; আর আশা আল্লাহর উপহার।

৩. ধৈর্যের প্রতিদান

উচ্চারণ: ইন্নাল্লাহা মা’আস-সাবিরীন।

অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। (সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৫৩)

ধৈর্য ইসলামের মূল শিক্ষা। দুঃখ, ক্ষতি, পরীক্ষার সময় ধৈর্য ধারণকারীদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ সাহায্য নাজিল হয়।

৪. জ্ঞানের মর্যাদা

উচ্চারণ: হাল ইয়াস্তাওইল্লাজিনা ইয়া’লামূনা ওয়াল্লাজিনা লা ইয়া’লামূন।

অর্থ: যারা জানে আর যারা জানে না—তারা কি সমান? (সুরা যুমার, আয়াত: ৯)

এ আয়াত মানুষকে জ্ঞান অর্জনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। কেবল জ্ঞানের মাধ্যমেই মানুষ নিজেকে উন্নত করতে পারে এবং আল্লাহর নৈকট্য পেতে পারে।

৫. সঠিক পথে চলার দিশা

উচ্চারণ: ওয়াল্লাজিনা জাহাদু ফিনা লানাহদিয়ান্নাহুম সুবুলানা।

অর্থ: যারা আমার পথে চেষ্টা করে, অবশ্যই আমি তাদের আমার পথে দিশা দেব। (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৬৯)

আল্লাহর পথে যারা আন্তরিক চেষ্টা করে, আল্লাহ তাঁদের জন্য হেদায়েতের দরজা খুলে দেন। এই আয়াত সংগ্রামী জীবনের জন্য শক্ত অনুপ্রেরণা।

৬. আল্লাহর সাহায্যে বিজয়

উচ্চারণ: ইন্না ফাতাহনা লাকা ফাতহান মুবিনা।

অর্থ: নিশ্চয়ই আমি তোমার জন্য সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি। (সুরা আল-ফাতহ, আয়াত: ১)

এ আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রকৃত বিজয় আল্লাহর সাহায্যে আসে। বিশ্বাসী যদি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে, তবে পৃথিবীর কোনো শক্তিই তাকে পরাজিত করতে পারে না।

কোরআন কেবল একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়; এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আলোকবর্তিকা। এর অনুপ্রেরণাদায়ী আয়াতগুলো বিশ্বাসীর অন্তরে আশা জাগায়, হতাশা দূর করে, সংগ্রামে সাহস যোগায়। আমাদের উচিত প্রতিদিন কিছুটা হলেও কোরআন তিলাওয়াত করা, এর অর্থ বোঝার চেষ্টা করা এবং জীবনে প্রয়োগ করা।