চোখ মানুষের জন্য আল্লাহর এক বিরাট নেয়ামত। এর মাধ্যমেই মানুষ পৃথিবীকে দেখে, জ্ঞান অর্জন করে এবং আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করে। কোরআনে বারবার দৃষ্টিশক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আল্লাহ মানুষকে কৃতজ্ঞ হতে বলেছেন।
তবে বয়স, অসুস্থতা, অতিরিক্ত পরিশ্রম কিংবা অবহেলার কারণে চোখের দৃষ্টি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ইসলাম এ ক্ষেত্রে আমাদের শিখিয়েছে, চিকিৎসা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে।
আল্লাহ বলেন, “তিনি তোমাদের কান, চোখ ও হৃদয় দিয়েছেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।” (সুরা নাহল, আয়াত: ৭৮)
এই আয়াত প্রমাণ করে, চোখ শুধু দৈহিক অঙ্গ নয়; এটি কৃতজ্ঞতা ও দায়িত্বের সঙ্গে জড়িত এক নেয়ামত।
রাসুল (সা.) বিভিন্ন সময় সাহাবিদের জন্য আরোগ্য ও সুস্থতার দোয়া করতেন। চোখের দৃষ্টি ও সামগ্রিক সুস্থতার জন্য যে দোয়াগুলো হাদিসে পাওয়া যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো:
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা মাত্তি‘নী বিসাম‘ই, ওয়া বাসরী, ওয়াজ‘আলহুমাল ওয়ারিসা মিন্নী।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার কান ও চোখ দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন এবং এগুলোকে আমার জন্য স্থায়ী করে দিন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৫০১; আহমদ, হাদিস: ১৭১৮০)
এই দোয়াটি রাসুল (সা.) নিয়মিত পড়তেন বলে সাহাবিরা বর্ণনা করেছেন।
চোখের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া হলো:
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাশফিনী, আল্লাহুম্মা ‘আফিনী।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে আরোগ্য দান করুন। হে আল্লাহ, আমাকে পূর্ণ সুস্থতা দান করুন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২১৯১)
এই দোয়াটি শুধু চোখ নয়, সব ধরনের শারীরিক দুর্বলতার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
রাসুল (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার চিকিৎসা তিনি সৃষ্টি করেননি।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৭৮)
এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, দোয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা গ্রহণ করাও সুন্নত। এ ক্ষেত্রে আমরা কয়কটি আমলের দিকে মনোযোগ দিতে পারি।
১. হারাম দৃষ্টি থেকে চোখ সংযত রাখা: আল্লাহ বলেন, “মুমিনদের বলো, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে।” (সুরা নুর, আয়াত: ৩০)
আলেমদের মতে, হারাম দৃষ্টি শুধু ইমান নয়, চোখের নুরও কমিয়ে দেয়।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পরিমিত ব্যবহার: অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্যবহার চোখের উপর চাপ সৃষ্টি করে। ইসলাম সর্বাবস্থায় মধ্যপন্থা শিক্ষা দেয়।
৩. ঘুমের আগে চোখে ফুঁ দিয়ে দোয়া পড়া: রাসুল (সা.) ঘুমের আগে নিজের শরীরে দোয়া পড়ে ফুঁ দিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০১৭)
৪. কৃতজ্ঞতা আদায় করা: নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করলে তা বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা কৃতজ্ঞ হলে আমি অবশ্যই তোমাদের বৃদ্ধি করে দেব।” (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৭)
ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, “চোখের পবিত্রতা অন্তরের পবিত্রতার পথ খুলে দেয়।” (ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, ৩/১০২, দারুল মারিফাহ, বৈরুত, ২০০২)
ইবন কাইয়িম (রহ.) লিখেছেন, “হারাম দৃষ্টি ঈমান ও দৃষ্টিশক্তি উভয়কেই দুর্বল করে।” (আদ-দাউ ওয়াদ-দাওয়া, পৃষ্ঠা ৯৮, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ১৯৯৯)
চোখের দৃষ্টি আল্লাহর এক অমূল্য দান। এটি রক্ষা করা, উন্নত করা এবং এর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা—সবই একজন মুমিনের দায়িত্ব।
ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে, দোয়া ও চিকিৎসা একে অপরের পরিপূরক। তাই চোখের দৃষ্টি দুর্বল হলে কেবল চিকিৎসাতেই সীমাবদ্ধ না থেকে, রাসুল (সা.) শেখানো দোয়াগুলো নিয়মিত পড়া এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা একজন মুমিনের জন্য সর্বোত্তম পথ।