‘মাকে কখনো বলা হয় না—আই লাভ ইউ, মা। তোমাকে ভালোবাসি। মা, আমি তোমাকে ভালোবাসি!’ অভিনেত্রী জয়া আহসান জানালেন তাঁর এই অনুভূতির কথা। তাঁর কথা, মাকে আমরা ভেতরে ভেতরে ধারণ করি।
জয়া বলেন, মায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কের মাঝে একটা লজ্জা বাস করে। বললেন, এ লজ্জাই কিন্তু তাঁকে অনেক সময় এগিয়ে দেয়। জয়ার ভাষ্য, চক্ষুলজ্জা বিষয় তো একটা আছে। একটা জায়গায় থাকতে সাহায্য করে। আমার কোনো কিছু হেরে যাওয়া বা জিতে যাওয়া, এসব যে মায়ের জন্য করি, তা বলব না। কিন্তু জানি, আমার মা সবচেয়ে বেশি লজ্জা পাবেন আমার কিছু হলে।
জয়া বলেন, মায়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকতা থাকে না। কোনো ভণিতাও থাকে না। বলেন, ‘ঈদের দিন না আমি সবাইকে সালাম করি। কিন্তু মাকে সালাম করতে লজ্জা পাই। মাকে সালাম করতে ভুলে যাই। আমার এ-ও মনে হয়, মাকে আমি কেন সালাম করব, আমি তো তাঁরই এক্সটেনশন। দুটো শরীরে একটা আত্মা বাস করে।’
জয়ার নিজের জীবনে মায়ের সমর্থন আর সহায়তাও অসাধারণ। সহায়তার কথা তুলে জয়া বলেন, ‘মা আমাদের সবচেয়ে সাপোর্ট করেছেন, তবে এটা কখনোই বুঝতে দেননি। মা কখনোই চাইতেন না, আমরা তাঁর ওপর নির্ভর করি। আমার মা-বাবা দুজনই এমনভাবে মানুষ করেছেন যেন আমাদের মেরুদণ্ড শক্ত হয়। আমার জীবনের অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত, ব্যক্তিগত জীবনের, কাজের, এই যে বাংলাদেশ ছেড়ে বাইরের দেশে কাজ করা, নিজেকে এক্সপ্লোর করা, আমার মা কিন্তু কখনো মানা করেননি। নাক গলাননি। অযাচিত কিছু চাপিয়ে দেননি। আমার মায়ের প্রচণ্ড বিশ্বাস আছে যে আমরা ভুল করব না।’
আত্মবিশ্বাসী মায়ের প্রভাব জয়া ও তাঁর ভাইবোনদের ওপর যথেষ্ট বলে উপলব্ধি জয়ার। তিনি বলেন, ‘আমার মায়ের এক সন্তান দেশের বাইরে পড়াশোনা করছে। এক মেয়ে ব্যবসা করছে। আমি আমার মতো একটা জায়গায় কাজ করছি। কিন্তু আমার মা একবারে ভেঙে পড়া মানুষ না। আমার মা অদ্ভুতভাবে শক্ত মানুষ।’
মায়ের সঙ্গে নিজের সম্পর্কটা অন্য রকম উল্লেখ করে জয়া বলেন, ‘তিনি মা। আমাকে তুই করে বলেন। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে মায়ের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বটাই অন্য রকম। মা আমার গলা শুনেই বুঝতে পারেন—কোনো সমস্যা আছে কি না। আমি কখনো রাতে না খেয়ে থাকলে এটা পৃথিবীর কেউ বুঝতে পারেন না শুধু মা ছাড়া। এটা অদ্ভুত, আত্মার সম্পর্ক ছাড়া সম্ভব না।’
জয়া বলেন, ‘আজকের জয়া আহসান বলে তো নয়, মায়ের যে ভালোবাসার অভ্যাসটা, সেটা না একটা সময় অধিকার হয়ে দাঁড়ায়। আলাদা করে তখন মায়ের উপস্থিতিটা তখন বুঝতেই পারি না। সফল কিংবা সাধারণ জায়গা থেকে যেখান থেকে ভাবি না কেন, একজন মানুষের কাছে মায়ের জায়গাটাই অন্য রকম। জীবনে যদি বলি, চন্দ্র আর,...সূর্য আমাদের জীবনে কী প্রভাব ফেলে? একটা দিন যদি সূর্যবিহীন জীবন হয়, তাহলে কী হবে? ভাবেন, আজ সূর্য ওঠেনি, কেমন লাগে? আজ সকালবেলা যদি সূর্য না ওঠে, তাহলে কী হবে? আমরা এভাবে আসলে মাকে নিয়ে মূল্যায়ন করি না। কিন্তু আমার হয়ে ওঠা বা আমি কী হয়েছি, তা জানি না, কিন্তু আমি যে রক্ত-মাংসের মানুষ, আমার যে শরীর মন, মনন, জীবন, অবশ্যই জীবন সব সময় স্যাক্রিফাইসের। আমাদের তিন ভাইবোনের শরীর মন, মনন—আমার মায়ের ঘাম শুষে তৈরি।’