মাত্রই বাঁচলেন উমেশ যাদব, ওলি রবিনসনের বলে স্লিপে ক্যাচ ফেললেন ক্রেইগ ওভারটন। ইনিংসে সেটা ইংল্যান্ডের চতুর্থ ক্যাচ মিস। তবে সে ক্যাচ মিসের পরই সিঙ্গেল চুরি করতে গিয়ে রানআউট হয়ে গেলেন যশপ্রীত বুমরা, ররি বার্নসের সরাসরি থ্রোতে। এক বল পর আবার স্ট্রাইকে গেলেন যাদব, এবার ডান দিকে লাফিয়ে এক হাতে দারুণ এক ক্যাচ নিলেন জনি বেয়ারস্টো। ওভালে ভারত ইনিংসের চিত্রটা এমনই।
বারবার সুযোগ দিলেও ভারতকে কখনো চাপ থেকে বেরোতে দেয়নি ইংল্যান্ড। বিরাট কোহলির ফিফটির পর শার্দূল ঠাকুরের ৩৬ বলে ৫৭ রানের ইনিংসের পরও ভারত প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গেছে ১৯১ রানেই। অবশ্য ইংল্যান্ডকেও খুব একটা স্বস্তিতে থাকতে দেননি বুমরা ও যাদব।
বুমরার তোপে ৬ রানের মধ্যেই দুই ওপেনার ররি বার্নস ও হামিদকে হারিয়ে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। বার্নস স্টাম্পে ডেকে এনেছেন বল, বেশ বাইরের বলে শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েছেন হামিদ। ডেভিড মালানকে নিয়ে জো রুট সে চাপ সামাল দিয়েছেন, তবে দিনের শেষে এসে যাদবের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন রুটও। দিনশেষে মালানের সঙ্গী নাইটওয়াচম্যান ক্রেইগ ওভারটন, ৭ উইকেট নিয়ে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড পিছিয়ে ১৩৮ রানে।
ওভালের উইকেটে ঘাসের উপস্থিতি ভালোই, জো রুট তাই টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। তবে পেসাররা সেভাবে মুভমেন্টের দেখা পাচ্ছিলেন না, প্রথম ৮ ওভারে দেখা মেলেনি উইকেটেরও। অবশ্য রুটের কপালে চিন্তার ভাঁজ তেমন বড় হতে দেননি ক্রিস ওকস, দ্রুতই অধিনায়কের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। ভারতও পড়ে গেছে চাপে।
এক বছরের বেশি সময় পর টেস্ট খেলতে নেমে প্রথম ওভারেই সফল হয়েছেন ওকস। তাঁর খাটো লেংথের বলে খোঁচা দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারেননি এ সফরে ভারতের সেরা ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা। সে উইকেটের আগে-পরে টানা ৪৪ বল ও ৪২ মিনিট কোনো রান তুলতে পারেনি ভারত। রোহিতের পর লোকেশ রাহুল ফিরেছেন ওলি রবিনসনের বলে এলবিডব্লু হয়ে। রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি তিনি। ২৮ রানেই ভারত হারিয়েছে প্রথম দুই উইকেট।
চেতেশ্বর পূজারা এরপর হয়েছেন জেমস অ্যান্ডারসনের শিকার। উইকেটের পেছনে জনি বেয়ারস্টোর হাতে ধরা পড়েছেন তিনিও। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ভারত খেলায়নি এ ম্যাচেও, উল্টো রবীন্দ্র জাদেজাকে পাঠিয়েছিল পাঁচ নম্বরে। কিন্তু এই ফাটকা কাজে লাগেনি। ৩ উইকেটে ৫৪ রান নিয়ে মধ্যাহ্নবিরতিতে গিয়েছিল বটে ভারত, তবে জাদেজা এরপর টেকেননি বেশিক্ষণ। বিরতির পর ওকসের বলে স্লিপে জো রুটের হাতে ধরা পড়েছেন।
এর আগেই ওকসের বলেই স্লিপে কোহলির ক্যাচ ফেলেছিলেন রুট। অফস্টাম্পের বাইরের বলে আবারও খোঁচা দিয়েছিলেন কোহলি, তবে প্রথম স্লিপে থাকা রুট ক্যাচটা তাঁর দিকে যাচ্ছে—শুরুতে যেন বুঝেই উঠতে পারেননি! ভারত অধিনায়ক অবশ্য দ্বিতীয় জীবনে যোগ করতে পেরেছেন ২৮ রান। ঠিক ৫০ রান করেই ওলি রবিনসনের বলে খোঁচা দিয়ে ফিরেছেন। ফুল লেংথে পেলে কোহলি দারুণ ড্রাইভ করেছেন, তবে খাটো লেংথের বলেই ইতি ঘটেছে তাঁর ইনিংসের। সিরিজে এ নিয়ে ৬ ইনিংসে তিনবারই রবিনসনের শিকার হলেন কোহলি।
অজিঙ্কা রাহানে বেঁচেছিলেন রিভিউ নিয়ে। তবে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনিও। ওভারটনের বলে ডান দিকে ঝুঁকে নেওয়া মঈন আলীর দারুণ ক্যাচে পরিণত হয়ে তাঁকে ফিরতে হয়েছে ১৪ রান করেই।
চা-বিরতির পর ঋষভ পন্তকেও হারিয়েছে ভারত। ওকসের ওপর চড়াও হতে গিয়ে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন, তবে মঈনের হাতে ক্যাচটাই তুলতে পেরেছেন শুধু। ৯ রানে জীবন পেয়েছিলেন পন্তও, সুযোগ পেয়েও আর কোনো রান যোগ করতে পারেননি। ওই ওভারেই ফিরেছেন। ৭ উইকেটে ১২৭ রান, ভারত দেড় শর নিচেই অলআউট হয়ে যাওয়ার ভালো সম্ভাবনা জাগিয়েছিল।
সেটা হতে দেননি শার্দূল ঠাকুর। প্রতি–আক্রমণ শুরু করেছেন, ৭টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ৩টি ছয়। ৩১ বলেই ফিফটি পূর্ণ করেছেন এ টেস্ট দিয়েই দলে ফেরা এ অলরাউন্ডার। ওকসের ফুল লেংথের বল মিস করে এলবিডব্লু হয়ে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। রিভিউ নিয়েই তাঁকে ফেরাতে পেরেছে ইংল্যান্ড। ১ রানে শেষ ৩ উইকেট হারিয়েছে ভারত। ফেরার ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়েছেন ওকস, ৩টি নিয়েছেন রবিনসন।