>মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় নতুন এক দেশ বাংলাদেশ। হাতে বন্দুক নিয়ে নয়, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গড়ে মুক্তিযুদ্ধে লড়েছিলেন এ দেশের ফুটবলাররা। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর ইতিহাসে জায়গা করে নেওয়া স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে নিয়ে শুক্রবারের ‘স্টেডিয়াম’-এর বিশেষ আয়োজন—
সারাদিন কাটে বিছানায়। অসুস্থ শরীর নিয়ে চলাফেরা করতে পারেন না। কিন্তু আইনুল হকের মনে ভিড় করে আছে স্বাধীন বাংলা দলের নানা টুকরো স্মৃতি।
কোনটা রেখে কোনটা বলবেন! কলকাতায় পার্ক সার্কাসের পাশেই মাঠ ছিল, ওখানেই অনুশীলন করত স্বাধীন বাংলা দল। আইনুল হকও ছিলেন সেই দলের অংশ। নিয়মিতই খেলতেন স্বাধীন বাংলা দলে। দীর্ঘ আট মাসের সেই দিনগুলোতে অনেক ঘটনার সাক্ষী আইনুলের মনে পড়ে সেই দিনটির কথা, যেদিন অনুশীলন করে এসে তাঁরা দেখলেন ক্যাম্পে বিছানাপত্র সব ভিজে একাকার!
দুটি বড় রুমে গাদাগাদি করে থাকতেন ৩৫-৪০ জন ফুটবলার। মেঝেতে ঢালা বিছানা। তবে আইনুলের ভাষায়, ‘আমাদের কোনো অসুবিধা হতো না।’ অবশ্য অসুবিধা একদিন ঠিকই হলো। বিকেলে কেউ ছিল না রুমে। কে বা কারা ইচ্ছাকৃত বা ভুলে পানির কল ছেড়ে দিল। ‘গোটা রুম পানিতে ভেসে গেল। আমরা তো রুমে এসে রেগে আগুন। কিন্তু কেউ স্বীকার করেনি কাজটা কে করেছে।’ আইনুল আজও পানির কল কে ছেড়েছে তা নিয়ে ধাঁধায়।
বম্বে (বর্তমানে মুম্বাই) তাঁরা খেলতে গিয়ে দেখলেন, ক্রিকেটার নবাব মনসুর আলী খান পতৌদিকে। স্থানীয় দলের হয়ে খেলছেন নবাব। সেই ম্যাচটা আইনুলের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে বিশেষ একটি কারণে, ‘পিন্টু ভাই বললেন, আইনুল পতৌদি খেলছে। সুতরাং, ওকে সিরিয়াসলি আটকাতে হবে। আমি ডিফেন্সের প্লেয়ার তো, পতৌদিকে শুধু আটকাইনি, বসিয়েও দিলাম একটা সময়।’
বিরতির সময় পতৌদিকে দেখতে গেলেন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা। তখন পতৌদির স্ত্রী শর্মিলা ঠাকুরের বলা কথাটা আজও আইনুলের কানে বাজে, ‘শর্মিলা এসে বলল, “এ বাচ্চা তুম নবাবকো মার দিয়া...।” আমি তাঁকে বোঝালাম, ম্যাচে তো এমন হতেই পারে, হা হা!’