অলিম্পিকে সোনার পদক জেতা শীর্ষ ১০ খেলোয়াড় কারা

অলিম্পিক গেমস—বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় মঞ্চ। এখানে একটি পদক জেতা মানে নিজের ইভেন্টে বিশ্বের অন্যতম সেরা হওয়ার স্বীকৃতি। একটি ইভেন্টে সেরা তিনজন পদক জেতেন। সবার সেরা যিনি, তাঁর জন্য সোনা, দ্বিতীয় রুপা আর তৃতীয় ব্রোঞ্জ। অলিম্পিক ইতিহাসে শীর্ষ ১০ সোনাজয়ী ক্রীড়াবিদকে নিয়েই এ আয়োজন।

সাওয়াও কাতো (জাপান): ৮ সোনাসহ ১২ পদক

১৯৭৬ অলিম্পিকের বাছাইয়ে সাওয়াও কাতো

১৯৬৮, ১৯৭২ ও ১৯৭৬—তিনটি অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিলেন জাপানের জিমন্যাস্ট সাওয়াও কাতো। তিন আসরে ৮ সোনার পাশাপাশি জিতেছেন ৩টি রুপা ও ১টি ব্রোঞ্জ। প্রায় পাঁচ দশক আগে অলিম্পিক-মঞ্চ থেকে বিদায় নেওয়া কাতো এখন পর্যন্ত জাপানিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পদক জেতা খেলোয়াড়। তাঁর নামে ২০০১ সালে একটি বামন গ্রহের নামকরণ করা হয়েছে।

ব্রিজিট ফিশার (জার্মানি): ৮ সোনাসহ ১২ পদক

অলিম্পিক পদক হাতে ব্রিজিট ফিশার

ব্রিজিট ফিশার একজন কায়াকার। স্থির পানিতে প্যাডেল চালিত নৌকার সাহায্যে যে খেলা, সেই ক্যানো স্প্রিন্টের কিংবদন্তিদের একজন। ফিশার যখন খেলতেন, তখন নাম ছিল ফ্ল্যাটওয়াটার রেসিং। ১৯৮০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মোট ৬টি অলিম্পিক আসরে খেলেছেন ফিশার, প্রথম দুবার পূর্ব জার্মানির হয়ে, পরের চারবার সংযুক্ত জার্মানির হয়ে।

মাঝে ১৯৮৪ সালে পূর্ব জার্মানি লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক বর্জন না করলে খেলা হয়ে যেত ৭ আসর। যে ছয়বার অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন, প্রতিবার ন্যূনতম একটি সোনা জিতেছেন। সব মিলিয়ে সোনা ৮টি, রুপা ৪টি। এখনো পর্যন্ত ফিশারই অলিম্পিক ক্যানোয়িংয়ে সবচেয়ে কমবয়সী (১৮) ও সবচেয়ে বেশি বয়সী (৪২) চ্যাম্পিয়ন।

ইসাবেলা বার্থ (জার্মানি): ৮ সোনাসহ ১৪ পদক

অশ্বচালনায় ইতিহাসের সেরা অলিম্পিয়ান ইসাবেল বার্থ

জার্মানির এই ক্রীড়াবিদ মূলত অশ্বারোহী, খেলার নাম ইকুয়েস্ট্রিয়ান। ১৯৯২ থেকে শুরু করে ২০২৪ পর্যন্ত টানা সাত অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন। এই সাতটি অলিম্পিকেই তিনি দলগত ইভেন্টে সোনা জিতেছেন, আর ব্যক্তিগত ইভেন্টে জিতেছেন একটি সোনা ও ছয়টি রূপা। তাঁর ১৪টি পদক যেকোনো জার্মান বা ইকুয়েস্ট্রিয়ান ক্রীড়াবিদের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ক্যালেব ড্রেসেল (যুক্তরাষ্ট্র): ৯ সোনাসহ ১০ পদক

ক্যালেব ড্রেসেল

যুক্তরাষ্ট্রের এই সাঁতারু প্রথম খেলেছেন ২০১৬ রিও অলিম্পিকে, সর্বশেষ ২০২৪ প্যারিসে। তিন আসরে সোনা জিতেছেন ৯টি, যার ৬টিই রিলেতে। ড্রেসেল রুপা জিতেছেন ১টি। এই মুহূর্তে সাঁতারের দুটি বিশ্ব রেকর্ড তাঁর। একটি ১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ের, আরেকটি ১০০ মিটার মিডলে। অলিম্পিকে আরও ওপরে ওঠার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে ড্রেসেলের, বয়স যে সবে ২৮।

কার্ল লুইস (যুক্তরাষ্ট্র): ৯ সোনাসহ ১০ পদক

কার্ল লুইস

সর্বকালের সেরা অ্যাথলেটদের একজন। যুক্তরাষ্ট্রের এই দৌড়বিদ অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন স্প্রিন্ট ও জাম্পে। ১৯৮৪ সালে নিজের প্রথম অলিম্পিকেই জিতেছিলেন ১০০ মিটার স্প্রিন্টসহ ৪টি সোনা, ১৯৯৬ আসর পর্যন্ত জিতেছেন মোট ৯টি, আছে ১টি রুপাও। অলিম্পিক ইতিহাসে লুইস ছোট্ট একটি তালিকার অংশ, যেখানে চারটি অলিম্পিক গেমসে অ্যাথলেটিকসের একই ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা জয়ের কীর্তি আছে মাত্র দুজনের (অন্যজন ডিসকাস থ্রোয়ার আল ওর্টার)। লুইস টানা চারটি অলিম্পিকে লংজাম্পে সোনা জিতেছে।

মার্ক স্পিটজ (যুক্তরাষ্ট্র): ৯ সোনাসহ ১১ পদক

মিউনিখের রেকর্ড গড়া পুলে মার্ক স্পিটজ

মাত্র দুটি অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন মার্কিন সাঁতারু মার্ক স্পিটজ। তাতেই রেকর্ড বই ওলট–পালট করে দিয়েছিলেন, বিশেষ করে ১৯৭২ মিউনিখ আসরে। সেবার সাতটি সোনা জিতেছিলেন, সাতটিই বিশ্ব রেকর্ড গড়ে। অলিম্পিকের এক আসরে সবচেয়ে বেশি সোনা জয়ের রেকর্ড ছিল সেটি, যা টিকে ছিল ২০০৮ সালে মাইকেল ফেলপস ৮টি জেতা পর্যন্ত। তবে এর মধ্যেও একটা জায়গায় স্পিটজের রেকর্ড টিকে থেকেছে। এক আসরে ৭টি বিশ্ব রেকর্ড গড়ে সোনা জয়ের কীর্তিতে ফেলপস-স্পিটজ দুজনের নামই এখনো একসঙ্গে লেখা হয়। স্পিটজের ৯টি সোনার বাইরে বাকি দুটি পদকের একটি রুপা, একটি ব্রোঞ্জ।

পাভো নুর্মি (ফিনল্যান্ড): ৯ সোনাসহ ১২ পদক

পাভো নুর্মি

তাঁকে বলা হতো ‘ফ্লাইং ফিন’। ‘ফ্লাইং’ বলার কারণ দৌড়বিদ হলেও পাভো নুর্মি যেন উড়তে উড়তে দৌড়াতেন। ১৯২০ থেকে ১৯২৮ সাল পর্যন্ত অলিম্পিকে দূরপাল্লার দৌড়ে অংশ নিতেন নুর্মি। ১৫০০ মিটার থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বের যতগুলো দৌড় আছে, এর মধ্যে ২২টি অফিশিয়াল রেকর্ড ছিল তাঁর।

অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন মোট ১২টি ইভেন্টে, এর ৯টিতে জিতেছেন সোনা, বাকি তিনটিতে রুপা। নিজের সেরা সময়ে ৮০০ মিটার বা তাঁর বেশি দূরত্বের প্রতিযোগিতায় টানা ১২১টি দৌড়ে অপরাজিত থাকার অবিশ্বাস্য কীর্তিও ছিল এই নুর্মির।

কেটি লেডেকি (যুক্তরাষ্ট্র): ৯ সোনাসহ ১৪ পদক

প্যারিস অলিম্পিকের পুলে কেটে লেডেকি

সাঁতার পুলের বর্তমান রানি। যুক্তরাষ্ট্রের এই সাঁতারু গত বছর প্যারিস অলিম্পিকে ৮০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে সোনা জেতার মাধ্যমে অলিম্পিক সাঁতারের সবচেয়ে বেশি সোনা জয়ের রেকর্ড গড়েন। কেটি লেডেকির বর্ণাঢ্য ৪ অলিম্পিক ক্যারিয়ারে আছে ৪টি রুপা আর ১টি ব্রোঞ্জও। ২৮ বয়সী লেডেকি এই মুহূর্তে লং পুলে (৫০ মিটার) দুটি বিশ্ব রেকর্ডের মালিক। একটি ৮০০ মিটার ফ্রিস্টাইল, অন্যটি ১৫০০ মিটার ফ্রিস্টাইল। অলিম্পিকে লেডেকির ৯ সোনার ৮টিই ব্যক্তিগত ইভেন্টে।

লারিসা লাতিনিনা (সোভিয়েত ইউনিয়ন): ৯ সোনাসহ ১৮টি পদক

লারিসা লাতিনিনার এই ছবিটি ২০২১ সালে তোলা

অলিম্পিক ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পদক জেতা নারী তিনি। খেলতেন জিমন্যাস্টিকসে, অংশ নিতেন অল-অ্যারাউন্ড, ফ্লোর এক্সারসাইজ, হর্স ভোল্ট ইভেন্টে। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৪ সালের মধ্যে অলিম্পিকে জিতেছেন ১৪টি ব্যক্তিগত পদক, সোভিয়েত ইউনিয়ন দলের হয়ে জিতেছেন আরও ৪টি। ৯ সোনা, ৫ রুপা আর ৪ ব্রোঞ্জ নিয়ে যখন অলিম্পিক ক্যারিয়ার শেষ করেন, লাতিনিনা ছিলেন নারী-পুরুষ মিলিয়েই অলিম্পিক ইতিহাসের এবং ব্যক্তিগত ইভেন্টে সবচেয়ে বেশি পদকজয়ী। সবচেয়ে বেশি পদকজয়ীর রেকর্ড টিকে ছিল ৪৮ বছর, ব্যক্তিগত পদকের রেকর্ডটি ৫২ বছর।

মাইকেল ফেল্‌প্‌স (যুক্তরাষ্ট্র): ২৩ সোনাসহ ২৮ পদক

মাইকেল ফেলপস

অর্ধশতাব্দী ধরে টিকে থাকা লারিসা লাতিনিনার সবচেয়ে বেশি পদক জয়ের রেকর্ডটি ভেঙেছেন মাইকেল ফেল্‌প্‌স। এই শতাব্দীতে ২০০৪ এথেন্স আসর দিয়ে অলিম্পিক পুল মাতানো শুরু করা এই মার্কিন সাঁতারু টানা চার অলিম্পিকে যা করেছেন, তা টিকে থাকতে পারে শত বছরও। অলিম্পিকে অন্য কারও যেখানে ১০টি সোনাই নেই, এক ফেল্‌প্‌সেরই তা ২৩টি। সবচেয়ে বেশি সোনা জয়ের পাশাপাশি ফেল্‌প্‌স ব্যক্তিগত ইভেন্টে সবচেয়ে বেশি সোনা (১৩), ব্যক্তিগত ইভেন্টে সবচেয়ে বেশি পদকেরও (১৬) মালিক।

২০০৪ অলিম্পিক গেমসে ৬ সোনাসহ ৮টি পদক জিতে নাম লিখিয়েছিলেন অলিম্পিকের এক আসরে সবচেয়ে বেশি পদক জেতার রেকর্ডে (যৌথভাবে জিমন্যাস্ট আলেক্সান্দার দিতিয়াতিনের সঙ্গে)। চার বছর পর বেইজিং অলিম্পিকে মার্ক স্পিটজের এক আসরে ৭টি সোনার রেকর্ড ভেঙে জেতেন ৮টি সোনা। ২০১২ লন্ডন আসরে ৪টি সোনা ও ২টি রুপার পর ২০১৬ রিও অলিম্পিকে জেতেন ৫টি সোনা ও ১টি রুপা। রিও দিয়ে অলিম্পিক থেকে বিদায় নেওয়া ফেল্‌প্‌সই সর্বকালের সর্বোচ্চ পদক ও সোনাজয়ী অলিম্পিয়ান।