
পিচ যেমনই হোক, প্রতিপক্ষে যে–ই হোক, শুরু থেকেই তেড়েফুঁড়ে ব্যাটিং করাকে যেন শিল্পে পরিণত করেছেন ভারতের ওপেনার অভিষেক শর্মা।
১৬ বলে ৩০, ১৩ বলে ৩১, ১৫ বলে ৩৮—তিন ইনিংস মিলিয়ে স্ট্রাইক রেট ২২৫, যা এবারের এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ। ছক্কা মেরেছেন ৭টি, যা টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
পিচ যেমনই হোক, প্রতিপক্ষ যে–ই হোক, শুরু থেকেই তেড়েফুঁড়ে ব্যাটিং করাকে যেন শিল্পে পরিণত করেছেন অভিষেক শর্মা। কেন তিনি আইসিসি টি–টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের ১ নম্বর ব্যাটসম্যান, সেটিও যেন বারবার প্রমাণ করে চলেছেন।
এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত ভারতের ব্যাটিং লাইনআপকে যে বিন্দুমাত্র পরীক্ষা দিতে হয়নি, সেটিরও বড় কারণ অভিষেক। তিনি ব্যাটিংয়ে নেমেই তাণ্ডব চালানোয় প্রতিপক্ষের বোলাররা যেমন শুরুতেই চাপে পড়ে যাচ্ছেন, তেমনি সতীর্থ ব্যাটসম্যানদের ওপর থেকেও দ্রুত রান তোলার চাপ অনেকটাই কমে যাচ্ছে।
দুর্দান্ত ছন্দে থাকা অভিষেক আজ দুবাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরের ম্যাচেও নিশ্চয় একই অভিপ্রায় নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামবেন। কিন্তু শাহিন আফ্রিদি–সাইম আইয়ুব–আবরার আহমেদরা কি এবার অভিষেককে ভয়ংকর হয়ে ওঠার আগেই আউট করতে পারবেন?
উত্তরসূরিদের সেই উপায় বাতলে দিয়েছেন মিসবাহ–উল–হক। পাকিস্তান দলের সাবেক এই কোচ ও অধিনায়ক অভিষেককে আউট করার জন্য দুটি পরামর্শ দিয়েছেন।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রীড়া চ্যানেল পিটিভি স্পোর্টসের আলোচনা অনুষ্ঠানে মিসবাহ বলেছেন, ‘অভিষেককে আউট করার জন্য প্রথমে পেসারদের স্টাম্পে বল করতে হবে। বলটা সামান্য ভেতরে ঢোকাতে হবে এবং গুড লেংথে ফেলতে হবে। এটাই ওকে আউট করার সুযোগ।
‘আরেকটি কৌশল হলো যদি উইকেট মন্থর হয় বা বল বাঁক খায়, তাহলে অফ স্পিনার দিয়ে চেষ্টা করা। যেমন সাইম আয়ুবকে বোলিংয়ে আনা যেতে পারে। যদি উইকেটে বল আটকে যায়, তখন অফ স্পিন কাজে আসতে পারে’—যোগ করেন মিসবাহ।
১৪ সেপ্টেম্বর ভারত–পাকিস্তানের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে আইয়ুবের স্লোয়ার অফ ব্রেক বলেই ছক্কা মারতে গিয়ে লং অফে ফাহিম আশরাফকে ক্যাচ দেন অভিষেক। তবে ততক্ষণে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ১৩ বলে ৩১ রান করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে তুলে দিয়ে যান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
মিসবাহ মনে করেন, অভিষেককে দ্রুত আউট করতে পারলেই ভারত চাপে পড়ে যাবে, ‘এখানে রান বাঁচানোর চিন্তা করলে হবে না। ঝুঁকি নিতে হবে, উইকেট ফেলতে হবে। ওকে আউট করতে পারলেই ভারতের মূল অস্ত্রকে সরানো যাবে। আগে যেমন রোহিত শর্মাকে আউট করলে ভারতের ব্যাটিং চাপে পড়ত।’
অভিষেকের প্রশংসা করতেও ভোলেননি মিসবাহ, ‘যেভাবে সে শুরুটা করে, তাতে দলের চাপ কমে যায়। দারুণ ব্যাপার হলো, সে পেস বা স্পিন—সব ধরনের বোলিংই ভালো খেলে। অফ সাইড-অন সাইড সব দিকে বাউন্ডারি মারতে পারে।’
একই অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের আরেক সাবেক অধিনায়ক শোয়েব মালিকও ছিলেন। মালিককে জিজ্ঞেস করা হয়, রোহিত শর্মা–বিরাট কোহলির মতো তারকারা (আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি থেকে) অবসর নিলেও ভারত সমস্যায় পড়ছে না কেন?
মালিকের উত্তর ছিল এ রকম, ‘ওদের দলটা সব সময়ই এমন। এর আগে শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড়, (বীরেন্দর) শেবাগ, যুবরাজ (সিং), (ভিভিএস) লক্ষ্মণের মতো খেলোয়াড়েরা ছিলেন। তাঁরা অবসর নিলেও ওদের সিস্টেম বদলায়নি, ঘরোয়া ক্রিকেট বদলায়নি। ওরা জানতো, রোহিত–কোহলির ক্যারিয়ারও একদিন শেষ হবে। তাই আগেই বিকল্প তৈরি করে রেখেছে। বেঞ্চের খেলোয়াড়দের ছোট দলের বিপক্ষে সুযোগ দিত, যেন তারা অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে। অন্যথায় বড় তারকারা চলে গেলে কিছুদিন অন্তত সমস্যা হতো। এ জন্যই ওদের দলে কোনো ধরনের ঘাটতি চোখে পড়ছে না। এ জন্যই ভারত এখনো বিশ্বের ১ নম্বর দল।’
এ সময় মিসবাহ হেসে বলেন, ‘এই দলে (এশিয়া কাপে) যশস্বী জয়সোয়াল–ঋষভ পন্তও নেই, তবু তারা কতটা শক্তিশালী।’