
ব্যাটিংয়ে নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন পেসার তানজিম হাসান। তাঁকে পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার করে তুলতে চান টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন।
একটা অতৃপ্তি বাংলাদেশের ক্রিকেট বয়ে বেড়াচ্ছে যুগ যুগ ধরে। খালেদ মাহমুদ, মুশফিক বাবুরা তাঁদের সময়ে চেষ্টা করেছেন সেই অতৃপ্তিটা দূর করতে। কিন্তু সেটা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কতটা ঋদ্ধ করেছে, সে প্রশ্ন থাকেই। বাস্তবতা হলো, একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের অভাব আজও বাংলাদেশের ক্রিকেটে অতৃপ্তির অন্য নাম হয়ে আছে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগামীকাল থেকে শুরু তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ আবারও নামবে সেই অতৃপ্তি দূর করার লক্ষ্য নিয়ে। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন দলে ফিরেছেন এক বছর পর। আশা আছে বলেই টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকদের দৃষ্টি আবারও খুঁজে নিয়েছে তাঁকে। তবে এবার আশাটা বেশি যেন পেসার তানজিম হাসানকে নিয়ে।
তানজিম এরই মধ্যে সে সম্ভাবনা দেখিয়েছেনও। লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে গত মে মাসের সর্বশেষ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৩২ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন পাঁচ ছক্কা আর এক বাউন্ডারিতে। শেষ ম্যাচেও ৩ বলে অপরাজিত ৮ রানের ইনিংসে মারা একটি ছক্কায় টি–টোয়েন্টিতে বড় শট খেলার সামর্থ্য দেখিয়েছিলেন।
এবার শ্রীলঙ্কায় দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয়েও ছিল তাঁর ঝোড়ো ইনিংসের ভূমিকা। দুই ছক্কা আর দুই চারে তাঁর ২১ বলে অপরাজিত ৩৩ রানের ইনিংসটি শেষ দিকে দ্রুত বাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের রান।
আজ পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাসের কথা শুনে মনে হলো, টি–টোয়েন্টিতে পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে তাঁর কাছে আশাটা আরও বেশি, ‘বাংলাদেশ দল অনেক দিন ধরে একজন ভালো অলরাউন্ডারের অভাবে ভুগছে। সাকিবকে (তানজিম হাসান) আমরা চেষ্টা করছি অলরাউন্ডার হিসেবে গড়ে তুলতে। সে সাইফউদ্দিনের মতোই ক্রিকেটার। যেহেতু টি–টোয়েন্টিতে ব্যাটিং–বোলিং দুটোই লাগে, সে জন্যই আমরা চেষ্টা করেছি তাকে সুযোগ দিতে।’
শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে খেলাটা সব দলের জন্যই চ্যালেঞ্জিং। তানজিম সত্যি সত্যি অলরাউন্ডারের ভূমিকায় আবির্ভূত হলে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কিছুটা সহজ হয় বাংলাদেশের জন্য। তা ছাড়া ২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে ভারত ও শ্রীলঙ্কায়। তার আগে শ্রীলঙ্কায় খেলার অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগার কথা বলেছেন লিটন, সিরিজ জিততে পারলে প্রাপ্তি বাড়তি আত্মবিশ্বাসও।
প্রথম ওয়ানডেতে শূন্য রানে আউট হওয়ার পর পরের দুই ম্যাচে বাদ পড়েছেন লিটন। এর একটা বড় কারণ ছিল তাঁর টি–টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব। টিম ম্যানেজমেন্টের মনে হয়েছে, পরের দুই ম্যাচেও ব্যর্থ হলে সেটা ওয়ানডেতে দলের পারফরম্যান্সে যেমন প্রভাব ফেলবে; টি–টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক হিসেবে লিটনও পড়ে যাবেন আরও চাপে।
লিটন নিজেও বাস্তবতাটা বুঝতে পারছেন। শেষ দুই ওয়ানডেতে না খেলা নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘ওয়ানডেতে আমি ভালো খেলছিলাম না। সে জন্য বেঞ্চে বসেছিলাম। তবে এই সময়ে আমি টি–টোয়েন্টির জন্য প্রয়োজনীয় অনুশীলনগুলো করেছি। চেষ্টা করব সেটা কাজে লাগাতে।’
ওয়ানডে থেকে বাদ পড়াটাকেও লিটন নিয়েছেন পেশাদারি দৃষ্টিতে, ‘পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে সবকিছুর সঙ্গেই মানিয়ে নিতে হবে। টেস্ট খেলেছি, ওয়ানডের সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি। নিজের ব্যর্থতার কারণ জানাটা গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেললে আবার ওয়ানডে একাদশে সুযোগ পাব।’
লিটনকে যেমন টি–টোয়েন্টি সিরিজের আগে তাঁর ওয়ানডে ফর্ম নিয়ে কথা বলতে হলো, পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে আজ সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেনকেও দিতে হয়েছে ওয়ানডে সিরিজের ব্যর্থতার ব্যাখ্যা, ‘সিরিজে শ্রীলঙ্কার সিমাররা যা করতে পেরেছে আমাদের সিমাররা তা পারেনি, তারা মাঝে ব্রেক থ্রু দিতে পারেনি। আবার শ্রীলঙ্কা ব্যাটিংটাকে ডিপে নিয়ে যেতে পেরেছে। সেখানেও তারা আমাদের ছাড়িয়ে গেছে।’
বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং নিয়ে বলতে গিয়েও শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের উদাহরণ, ‘আমাদের ব্যাটসম্যানরা ভালো করতে পারেনি। তাদের দুজন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান কুশল মেন্ডিস ও চারিত আসালাঙ্কা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সে জায়গায় আমরা পিছিয়ে গেছি।’
তামিম ইকবাল অবসর নিয়েছেন। সাকিব আল হাসান দেশান্তরী। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহও অবসর নেওয়ায় কিছুটা অভিজ্ঞতার সংকটেও বাংলাদেশের ক্রিকেট।
গাজী আশরাফ সে প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মতো খেলোয়াড়ের সংকট আছে আমাদের। ৩০ জন খেলোয়াড়কে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে সবকিছু। তবে আশা করি এ দল, এইচপি থেকে খেলোয়াড় উঠে আসবে।’
সেই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার আগে আপাতত একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার পেতে চায় বাংলাদেশ দল। সম্ভাব্য সেই অলরাউন্ডার তানজিম দলের মধ্যেই আছেন। এখন শুধু তাঁর নিজেকে মেলে ধরার পালা।