
আর যা–ই হোক, অ্যাশেজে ইংরেজ ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি দেখে কোনো অস্ট্রেলিয়ানের অন্তত খুশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ঘটল ঠিক সেটাই! ব্রিসবেন টেস্টে গতকাল প্রথম দিনে জো রুটের সেঞ্চুরি দেখে ম্যাথু হেইডেনের নিজেকে ‘খুব সুখী মানুষ’ মনে হয়েছে!
হেইডেন নিজেই অ্যাশেজ কিংবদন্তিদের একজন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০ টেস্টে ৫৮.৯৩ গড়ে ১৪৬১ রানে ৫টি সেঞ্চুরি আছে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই ওপেনারের। সাধারণ দর্শক না হয় খুশি হতে পারেন, তাই বলে হেইডেনের মতো একসময়ের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো অস্ট্রেলিয়ানের রুটের সেঞ্চুরিতে খুশি হওয়ার রহস্য কী?
আসলে রহস্য তো একটা আছেই। সেটা বেশ মজার ঘটনাও। গত মাসে ‘অল ওভার বার দ্য ক্রিকেট’ পডকাস্টে একসময়ের সতীর্থ গ্রেগ ব্লিউয়েট এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সাবেক ক্রিকেটার জেমস ব্রাইশকে হেইডেন বলেছিলেন, ‘এই গ্রীষ্মে সে (রুট) যদি সেঞ্চুরি না পায় আমি নগ্ন হয়ে এমসিজিতে হাঁটব।’
ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের এবারের সফরে পার্থে প্রথম টেস্ট পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২৯ ইনিংসে সেঞ্চুরি ছিল না রুটের। ইংল্যান্ড দলের এবারের সফরের আগে হেইডেন রুটের পক্ষে ব্যাট ধরতে গিয়ে অমন কথা বলেছিলেন। সেই কথা এত সহজে সবার ভুলে যাওয়ার কথা নয়। রুট পার্থ টেস্টে তিন অঙ্কে পৌঁছাতে না পারার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হেইডেনকে অনেকে তাঁকে সেই প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তার একটা জায়গা তো ছিলই।
কিন্তু ব্রিসবেনে দিবারাত্রির টেস্টে গতকাল প্রথম দিনে রুট সেঞ্চুরি করে হেইডেনকে মুক্তি দেন অনর্থ ঘটে যাওয়ার দুশ্চিন্তা থেকে।
৯ উইকেটে ৩২৫ রান নিয়ে ইংল্যান্ডের প্রথম দিন পার করার পথে ১৩৫ রানে অপরাজিত ছিলেন রুট। টেস্টে এটা তাঁর ৪০তম সেঞ্চুরি। আজ দ্বিতীয় দিন সকালে মাত্র ২.২ ওভার টিকেছে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস। ৭৬.২ ওভারে অস্ট্রেলিয়ান পেসার ব্রেন্ডন ডগেট জফরা আর্চারকে আউট করার মধ্য দিয়ে ৩৩৪ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। ১৩৮ রানে অপরাজিত থেকে যান রুট।
হেইডেন রুটের এই সেঞ্চুরিতে অবশ্যই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। টিএনটি স্পোর্টসকে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি গতকালই বলেন, ‘(রুটের সেঞ্চুরিতে) আমার জীবনে দুজন মানুষ খুব খুশি হয়েছেন—আমার স্ত্রী ও কন্যা। কোনোভাবেই তারা চায়নি যে ওটা ঘটুক। দিনটা ছিল দুর্দান্ত। রুটও অসাধারণ। একটু ঝুঁকিপূর্ণ বাজি ছিল। কারণ, বাজিতে যেটা ধরা হয়েছিল, সেটা আমি কোনোভাবেই করতে চাইনি। কিন্তু সংগ্রহে যখন কারও ১৩,৫০০ রান থাকে এবং এখনো রান করেও যাচ্ছে, তখন জো রুটের ওপর নীল চিপের মতোই ভরসা করা যায়। কোনো না কোনো সময় সে ফিরে আসবেই।’
পার্থে ইংল্যান্ডের দুই ইনিংসে ০ ও ৮ রানে আউট হন রুট। হেইডেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তখন একটু হলেও দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন কি না? উত্তর শুনুন হেইডেনের মুখেই, ‘অবশ্যই। ওসব ইনিংসে আমি জো রুটকে খুঁজে পাইনি।’
হেইডেনের মেয়ে গ্রেস হেইডেন ক্রিকেটে সঞ্চালনায় খ্যাতি কুড়িয়েছেন। ২৩ বছর বয়সী গ্রেস রুটের সেঞ্চুরির পর তাঁর ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে ভিডিও বার্তায় সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানান এবং ক্যাপশনে ইংরেজি কিংবদন্তির প্রতি লেখেন, ‘আমাদের সবার চোখকে বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্য রুটকে ধন্যবাদ।’